ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্যাতন নয়, গুলি করুন

প্রকাশিত: ০৮:৪৬, ৩১ আগস্ট ২০১৯

নির্যাতন নয়, গুলি করুন

ভূ-স্বর্গ কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা কেড়ে ্রনয়ার পর ভারতীয় সেনাবাহিনী সেখানকার লোকজনকে বেদম মারধর এবং অভিনব কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে। ভারতের কেন্দ্রীয় বাহিনী কাশ্মীরের বিভিন্ন গ্রামে ঢুকে সাধারণ মানুষকে লাঠি, বিদ্যুতের তার দিয়ে প্রহার করেছে এবং বৈদ্যুতিক শক দিয়ে শাস্তি দিয়েছে। চিৎকারের চেষ্টা করলে তাদের মুখে কাদা মাটি পুড়ে দেয়া হয়েছে। বিবিসির ভারতীয় সংবাদদাতা সমীর হাশমিকে গ্রামের নির্যাতিত মানুষ তাদের শরীরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নির্যাতনের চিহ্ন দেখিয়েছে। তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার এ ধরনের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দেশটির সেনাবাহিনী কাশ্মীরের সাধারণ মানুষকে নির্যাতন করার সব অভিযোগ ‘ভিত্তিহীন ও অহেতুক’ বলে আখ্যা দিয়েছে। গত ৫ আগস্ট ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫(ক) ধারা তুলে দেয় দেশটিতে ক্ষমতাসীন কট্টর হিন্দুত্ববাদী বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার। এই ৩৭০ ও ৩৫(ক) ধারায় কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া হয়েছিল। বিশেষ মর্যাদা বাতিলের আগে থেকেই কাশ্মীর উপত্যকায় হাজার হাজার অতিরিক্ত সেনা মোতায়েন করে ভারত। কাশ্মীরের সাবেক তিনজন মুখ্যমন্ত্রী, ব্যবসায়ী, সমাজকর্মী, প্রথম সারির রাজনীতিবিদসহ অন্তত ৩০ হাজার সাধারণ জনতাকে আটকে রেখেছে মোদি সরকার। আটকৃতদের অনেককে কাশ্মীরের বাইরের জেলখানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, উপত্যকায় আইন ও শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষায় এদের আটক করা হয়েছে। ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য কাশ্মীরকে দুই ভাগ করে কেন্দ্রীয় শাসনের আওতায় এনেছে বর্তমান সরকার। কাশ্মীরের স্বাধীনতাকামীদের সঙ্গে ভারতের সেনাবাহিনী কয়েক যুগ ধরে লড়াই চালিয়ে আসছে। ভারতের দাবি, প্রতিবেশী পাকিস্তানের ইন্ধনে কাশ্মীরীরা ভারতের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। অবশ্য পাকিস্তান বরাবর ভারতের এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। সংবিধানের ৩৭০ ধারা তুলে দেয়ার ‘সিদ্ধান্তকে’ সাহসী আখ্যা দিয়ে ভারতের কট্টরপন্থীরা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রশংসায় পঞ্চমুখ হয়েছে। সাংবাদিক সমীর হাশমি প্রতিবেদনে লিখেছেন, আমি কাশ্মীরের দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক গ্রামে ঘুরেছি। এসব গ্রামের বহু মানুষের সঙ্গে কথা বলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর অভিযানের সময় তাদের ওপর নির্যাতনের ক্ষত দেখেছি। আহতদের সেবা ব্যাহত হবে, তাই অনেক চিকিৎসক ও নার্স আমার সঙ্গে কথা বলেননি। তবে গ্রামের লোকজন আমাকে তাদের শরীরের আঘাতের চিহ্ন দেখিয়েছে। সমীর হাশমি লিখেছেন, একজন আমাকে জানায়, গত ৫ আগস্ট ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের আগে থেকেই ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যা বাড়িতে বাড়িতে ঢুকে অনেককে তুলে নেয়। ভারতীয় সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আপন দুই ভাই জানান, আমাদের ঘুমন্ত অবস্থায় তুলে নিয়ে বাইরের মাঠের মধ্যে দাঁড় করানো হয়। ওই মাঠে আমার মতো বহু যুবক ছিল। তারাও আমাদের মতো ভীত ছিল। ভারতের সেনাসদস্যরা আমাদের বেধড়ক মারতে শুরু করে। লাথি মেরে ফেলে দেয়। আমি প্রশ্ন করেছিলাম, আমরা কি অন্যায় করেছি? কিন্তু সেনা সদস্যরা আমাদের কথা শোনেনি। আমাদের ক্রমাগত শাস্তি দিয়েছে। সেনা সদস্যরা আমাকে আমার শরীরের প্রত্যেক জায়গায় মেরেছে। লাঠি, বিদ্যুতের তার দিয়ে মারার ফলে আমি জ্ঞান হারালে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে আমার জ্ঞান ফিরিয়ে আবার শাস্তি দিয়েছে। এরপর কান্নাকাটি করলে কাদা মাটি দিয়ে আমার মুখ পুড়ে দিয়েছে যাতে শব্দ না হয়। আমরা বলেছিলাম, আমরা কোন অন্যায় করিনি, ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যাইনি। তারপরও আমাদের কেন শাস্তি দেয়া হচ্ছে? এরপর আমরা বলেছিলাম, ‘আমাদের এভাবে না মেরে গুলি করুন। এরপর আমরা সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করেছি, আমাদের তুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কারণ ভারতীয় বাহিনীর অত্যাচার অসহ্য ছিল।’ কাশ্মীরে ভারতীয় বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার অপর এক তরুণ বলেন, বিনা কারণে তুলে নিয়ে প্রথমে আমার শরীরের পোশাক খুলে নেয়া হয়। এরপর প্রায় দুই ঘণ্টা তারা আমাকে রড ও লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে। এক পর্যায়ে জ্ঞান হারালে আমাকে বৈদ্যুতিক শক দেয়া হয়। বিনা কারণে ভারতীয় বাহিনী আমাকে ফের তুলে নিলে আমি সত্যই হাতে অস্ত্র তুলে নেব। সব সময় তাদের এই ধরনের অত্যাচার সহ্য করা যায় না। কাশ্মীরের গ্রামবাসীরা বলছেন, ভারত সরকারের বিরুদ্ধে কাশ্মীরী জনগণের বিক্ষোভ ঠেকাতে ভয় দেখানোর জন্য সেনাবাহিনী এসব করছে।
×