
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বের অর্ধেকেরও বেশি ভারী বিরল মৃত্তিকা খনিজের উৎস মিয়ানমারের কাচীন রাজ্য। এসব খনিজ চীনে রপ্তানি করা হয় ইলেকট্রনিক গাড়ি, উইন্ড টারবাইন এবং উচ্চপ্রযুক্তি পণ্যে ব্যবহৃত চুম্বক তৈরির জন্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কাচীন রাজ্যে চীন-সমর্থিত মিয়ানমার সেনাবাহিনী এবং কাচীন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি (কেআইএ)-এর মধ্যে তীব্র রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ফলে খনিজ সরবরাহ হুমকির মুখে পড়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ৮ জুলাই ঘনিষ্ঠ তিনটি সূত্রের বরাতে জানা গেছে, চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কেআইএ-কে এক বৈঠকে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, যদি তারা বাম শহর দখলের প্রচেষ্টা বন্ধ না করে, তাহলে কেআইএ নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে খনিজ ক্রয় বন্ধ করে দেওয়া হবে। যদিও বৈঠকটি কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেছে, “মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও কেআইএ-র মধ্যে শান্তি আলোচনা ও যুদ্ধবিরতি দুই দেশের জনগণের পারস্পরিক স্বার্থে।”
২০২১ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর মিয়ানমারে চলমান গৃহযুদ্ধের অংশ হিসেবে কেআইএ গত বছর ডিসেম্বর থেকে কাচীন রাজ্যের কৌশলগত গ্যারিসন শহর বাম দখলের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে। শহরটি চীন সীমান্ত থেকে মাত্র ১০০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত, যা ভৌগোলিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বিশ্বের প্রযুক্তি শিল্পে ব্যবহৃত ডাইপ্রোশিয়াম ও টারবিয়ামসহ অন্যান্য ভারী খনিজ কাচীন রাজ্যের খনিগুলো থেকেই উত্তোলিত হয়। এই খনিজ চীনের জন্য এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, প্রক্রিয়াজাতকরণে দেশটি একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব খনিজের সরবরাহ বিঘ্নিত হলে চীনের প্রযুক্তি ও শিল্প খাতে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, মিয়ানমার সরকারের প্রতি চীনের সমর্থন এবং বিরোধী কেআইএ-কে হুমকি দেওয়া মূলত খনিজ নিয়ন্ত্রণের ভূরাজনৈতিক কৌশলের অংশ। অতীতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক নীতির জবাবে চীনও খনিজ রপ্তানিতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছিল, যার প্রভাব পড়ে বৈশ্বিক বাজারে। এবার চীন একই কৌশল মিয়ানমারে প্রয়োগ করছে—জানতা সরকারের পাশে থেকে বিরোধী বাহিনীকে খনিজ বন্ধের ভয় দেখিয়ে চাপ প্রয়োগ করছে।
ছামিয়া