ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে-

প্রকাশিত: ০৮:৪৪, ৩১ আগস্ট ২০১৯

 সড়কের শৃঙ্খলা ফেরাতে-

নিরাপদ এবং আধুনিক বাংলাদেশ গড়তে দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনায় বিভিন্ন কর্মপ্রকল্প অনুমোদন ও বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নজরদারি স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। অবকাঠামোগত বিশেষ খাতটিকে সমধিক গুরুত্ব দিয়ে সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপারে নতুন নতুন কর্মপরিকল্পনা দেশের সামগ্রিক অবস্থানে যুগান্তকারী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে। তবে কিছু সমস্যা জিইয়ে থাকার কারণে হরেকরকম বিপাকেও পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে। উন্নত সড়ক-মহাসড়কে নতুন মাত্রা দিতে গিয়ে তেমন সমস্যা দৃষ্টিগোচরও হচ্ছে। তার মধ্যে সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ অব্যবস্থপনায় নিরীহ জনগোষ্ঠীর প্রাণনাশ থেকে হরেকরকম দুর্ভোগেরও শিকার হতে হয় প্রতিনিয়তই। সড়ক-মহাসড়ক নিয়ে যতই নতুন কর্মোদ্যোগ নেয়া হোক না কেন তার সুফলের চাইতেও বিপন্ন হওয়ার দৃশ্য একেবারে কম নয়। তীব্র যানজট, গণপরিবহনের বিশৃঙ্খল গতিবিধি, সঙ্গে মানুষেরও নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করার বদভ্যাস প্রতিদিনের সড়ক চিত্রের যে বেহাল অবস্থা তার থেকে কিভাবে মুক্ত হওয়া যাবে সে বিষয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে দৃঢ় নির্দেশনা আসে। ট্রাফিক আইন না মানা, ধারে কাছে ওভারব্রিজ থাকা সত্ত্বেও ইচ্ছেমতো রাস্তা পারাপার যেখানে-সেখানে গণপরিবহনের যাত্রী ওঠানামা করানো বিভিন্ন সড়কের নিয়মিত দৃশ্য। এমন অসঙ্গতিকে নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হলে সড়ক ব্যবস্থা কখনও নিরাপদ আর ঝুঁকিমুক্ত হবে না। মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় বিভিন্ন প্রকল্প অনুমোদনের সময় সড়ক ব্যবস্থার ব্যাপারে তথ্যও উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেকের এই সভায় খুলনা-চুনকা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের খুলনা শহর অংশে চার লেনে সড়ক উন্নয়ন করার প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে ভিডিও ফুটেজে সড়কের দুরবস্থা সরাসরি প্রত্যক্ষ করেন। দেখা যায়, এলোপাতাড়ি গাড়ি থামানো, যেখানে-সেখানে যাত্রী ওঠানামাই শুধু নয়, রাস্তা পর্যন্ত আঁকাবাঁকা হওয়ার অব্যবস্থাপনায় প্রধানমন্ত্রী ক্ষুব্ধ হন। অতিসত্বর সড়ক-মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতেও তাৎক্ষণিক আদেশ দেন। এছাড়া চালক এবং সহকারীদের জন্য রাস্তার নিরাপদ স্থানে বিশ্রামাগার নির্মাণ করারও পরামর্শ আসে। সড়ক-মহাসড়কে এমন সব অনিয়ম ও বেসামাল পরিবেশ সাধারণ মানুষকে প্রতিনিয়ত বিপন্ন অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে। এর একটা সুষ্ঠু ও স্থায়ী সমাধান অপরিহার্য। এর আগে বিশৃঙ্খল সড়ক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কোমলমতি ছাত্রছাত্রী থেকে শুরু করে সচেতন মানুষের জোরদার আন্দোলন সবাইকে স্বস্তিতে ফেললেও বড় ধরনের কোন সুশৃঙ্খল ব্যবস্থাপনা এখন অবধি দেখা যাচ্ছে না। এসব অনিয়ম, দুর্ভোগ নিরীহ ও অসহায় মানুষকে বিপন্ন করা থেকে শুরু করে প্রাণঘাতী অবস্থায়ও মোড় নিতে সময় নেয় না। গণপরিবহনের বেপরোয়া অদক্ষ চালকের নিয়ম-কানুন না মানার অপসংস্কৃতি, মেয়াদ উত্তীর্ণ ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন সব মিলিয়ে সড়কে যে দুর্বিপাক তা কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না। সড়ক অবরোধ, আন্দোলন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ, ট্রাফিক পুলিশের বিশেষ নজরদারিতেও সমস্যাবহুল এই বিশেষ ব্যবস্থাটির কেন সুরাহা করা সম্ভব হচ্ছে না তা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই খতিয়ে দেখা জরুরী। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের সচেতন দায়বদ্ধতায় সড়ক পরিবহন বিধিনিষেধও যথার্থভাবে মেনে চলা নৈতিক বোধ। সরকার, মন্ত্রণালয় কিংবা কৃর্তপক্ষ শুধু সজাগ দৃষ্টির মাধ্যমে বিদ্যমান সমস্যাকে সামলানো সম্ভব কিনা তাও বিবেচনা সাপেক্ষ। কারণ জনবান্ধব প্রতিটি খাত যদি সাধারণ মানুষকে নিয়মনীতি মানতে উদ্বুব্ধ করতে না পারে তাহলে কোন ধরনের অব্যবস্থাপনার স্থায়ী নির্মূল হবে না। দেখা যাক প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশ আলোর মুখ দেখতে কত সময় ব্যয় করতে হয়।
×