ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিনাশী ধ্বংসযজ্ঞ ’২১ আগস্ট’ স্থাপনাশিল্প উদ্বোধন

প্রকাশিত: ১১:০৫, ২২ আগস্ট ২০১৯

মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিনাশী ধ্বংসযজ্ঞ ’২১ আগস্ট’ স্থাপনাশিল্প উদ্বোধন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেড় দশক আগে ২১ আগস্ট ঢাকার বঙ্গবন্ধু এ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ও হত্যাযজ্ঞ চালায় হরকাতুল জিহাদের একদল জঙ্গী, যা ছিল ছয় বছর ধরে এই জঙ্গীগোষ্ঠীর হামলা ও শেখ হাসিনাকে হত্যার ধারাবাহিক চেষ্টার এক চূড়ান্ত রূপ। একই সঙ্গে দেশী-বিদেশী যোগাযোগ এবং সরকারের উদাসীনতা ও ক্ষেত্রবিশেষে সহযোগিতা বা পৃষ্ঠপোষকতায় একটি উগ্রপন্থী গোপন সংগঠন কতটা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে, সেটারও একটা বড় উদাহরণ হরকাতুল জিহাদ আল-ইসলামী (হুজি-বি)। এ হামলায় ২৪ জন মানুষকে হত্যা এবং জননেত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার অপচেষ্টার মধ্যদিয়ে একটি দৃষ্টিভঙ্গি, একটি স্বপ্ন ও বিশ্বাসকে হত্যা করবার ঘৃণিত প্রয়াস চালানো হয় সমগ্র জাতিকে স্তম্ভিত করেছিল। এই শোক শক্তিতে পরিণত করার লক্ষে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির নন্দন মঞ্চে ‘২১ আগস্ট’ শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিনাশী ধ্বংসযজ্ঞ স্থাপনা শিল্পের আয়োজন করা হয় বুধবার সন্ধ্যায়। শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত এ স্থাপনা শিল্প প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে দেশের বরেণ্য ৫১ জন শিল্পী। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ভয়াবহতা নিয়ে লিয়াকত আলী লাকীর পরিকল্পনায় স্থাপনা শিল্পের কিউরেটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শিল্পী ও অধ্যাপক শাহ্আহমেদ বিকাশ। আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে, এম খালিদ। একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে আয়োজনে অনুভূতি ব্যক্ত করেন শিল্পী অধ্যাপক শাহ্জাহান আহমেদ বিকাশ। একাডেমির সচিব বদরুল আনম ভূঁইয়ার স্বাগত বক্তব্যের মধ্যদিয়ে শুরু হয় অনুষ্ঠান। বক্তারা বলেন, রাজনৈতিক ইতিহাসে ২১ আগস্ট একটি কলঙ্কময় দিন। তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে পরিচালিত পৈশাচিক এ হামলায় সে দিন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি মোঃ জিল্লুর রহমানের সহধর্মিণী ও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী বেগম আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হয়েছিলেন। শুধু গ্রেনেড হামলাই নয়, সেদিন তাদের প্রধান টার্গেটে থাকা বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে তার গাড়ি লক্ষ্য করেও চালানো হয় ছয় রাউন্ড গুলি। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেলেও তিনি আহত হন, তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থাপনাশিল্পে তুলে ধরা হয় ভয়ার্ত চোখ, আতঙ্কিত চোখ, গ্রেনেড বিস্ফোরণের আতঙ্কিত অনুভূতি, আতঙ্ক, ২১টি স্থিরচিত্র, পারফর্মেন্স আর্ট, আতঙ্ক বেদনা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেদনাময় মুখাবয়বের প্রতিকৃতি আঁকা হয়। ভয়ার্ত চোখে দেখানো হয় হ্যান্ড গ্রেনেডের মুখোশধারী ২১ জন তরুণ শিল্পী ৭০ ফিট কালো ক্যানভাসে আতঙ্কিত চোখ এঁকে তারপর তা রক্তাক্ত লাল করতে থাকে। একটি আতঙ্কিত চোখ অঙ্কনের ভিডিও প্রেজেকশন করা হয় পর্দায়। চিত্রকর্মটি আঁকে শিল্পী শাহজাহান আহমেদ বিকাশ। গ্রেনেড বিস্ফোরণের আতঙ্কিত অনুভূতি প্রকাশের জন্য বিস্ফোরণের শব্দ হয় এবং ধোঁয়ায় পুরো প্রদর্শনিস্থল ভরে উঠে। দর্শকদের সাময়িকভাবে ওই মুহূর্তটুকু অনুভব করানোর জন্য কৃত্রিম রক্ত, পাদুকাসহ অন্যান্য বস্তু ছুড়ে দেয়া হয়। প্রজেক্টরের মাধ্যমে ২১ আগস্টের আতঙ্কিত মুহূর্তগুলো প্রদর্শন করা হয়। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ভয়াবহ ২১টি স্থিরচিত্রের প্রদর্শন করা হয়। ২১ আগস্টের সেই গ্রেনেড হামলার ভয়ানক মুহূর্তটি নন্দন মঞ্চে পাফরমেন্স আর্টের মাধ্যমে ২১ জন শিল্পী প্রদর্শন করে। মঞ্চের চারপাশের চৌবাচ্চাটা ধীরে ধীরে লাল রক্ত বর্ণে পরিণত হয়। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট জননেত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় গ্রেনেড হামলার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেদনাময় মুখাবয়বের প্রতিকৃতি আঁকা হয়। চিত্রকর্ম সমাপ্ত হবার পর স্পট লাইট দিয়ে দর্শক সম্মুখে চিত্রকর্মটি উন্মোচন করা হয়। এবং ২১ আগস্ট ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের বক্তব্য অডিওতে শোনা যায়।
×