ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

জাতীয় ক্রিকেট দলের নতুন কোচ ডোমিঙ্গো

প্রকাশিত: ১১:১৩, ১৮ আগস্ট ২০১৯

জাতীয় ক্রিকেট দলের নতুন কোচ ডোমিঙ্গো

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের নতুন কোচ নিয়োগ দিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ রাসেল ডোমিঙ্গোকে প্রধান কোচ করা হয়েছে। মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, মুস্তাফিজদের এ নতুন কোচের নাম শনিবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। আগামী দুই বছরের জন্য ডোমিঙ্গোকে নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। বুধবার থেকে ডোমিঙ্গো এ দায়িত্বও নিয়ে ফেলবেন। বাংলাদেশ দলের সঙ্গে যোগ দেবেন। বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘শেষ পর্যন্ত তিনজন ছিল আমাদের টপ লিস্টে। কবে থেকে পাওয়া যাবে, আর কতটা সময় দিতে পারবে, সেটা বিবেচনায় নেয়ার পর দুইজন ছিলেন আমাদের তালিকায়। সেখান থেকে রাসেল ডোমিঙ্গোকে আমরা প্রধান কোচ হিসেবে চূড়ান্ত করেছি।’ সবসময় জাতীয় দলের সঙ্গে থাকবে। এমন কোচ নিয়োগ দেয়া এখন কঠিনই হয়ে পড়েছে। বিশ্বে এখন টি২০ ফ্র্যাঞ্চাইজি লীগের ছড়াছড়ি। জাতীয় দলে কোচিং করানোর সঙ্গে কোচরা এখন টি২০ লীগগুলোতেও কোচিং করাতে চান। তাই জাতীয় দলের সঙ্গে পুরোপুরি যুক্ত থাকতে চান না। জাতীয় দলের সঙ্গে থাকার দিনক্ষণ নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু বিসিবি চেয়েছে স্থায়ী এমন একজন কোচ, যিনি শুধু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল নিয়েই ব্যস্ত থাকবেন। আর এখানেই এগিয়ে থাকেন ডোমিঙ্গো। নিউজিল্যান্ডের সাবেক সফল কোচ মাইক হেসন বিসিবির তালিকাতে থাকলেও চাহিদার সঙ্গে মিল হয়নি। আর তাই বাংলাদেশে এসে সাক্ষাতকার দেয়া ডোমিঙ্গোকেই শেষ পর্যন্ত নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। ডোমিঙ্গোর পরিকল্পনায় সন্তুষ্ট বিসিবি। বিসিবি সভাপতিই যেমন বলেছেন, ‘দুই বছরের জন্য চুক্তি হয়েছে। ডোমিঙ্গো বলেছে, ‘আমার কোন ছুটি দরকার নেই। আমার কোন পিছু টান নাই। আমি এখানে থেকে খেলোয়াড়দের সঙ্গে সময় কাটাতে চাই।’ এগুলোই হচ্ছে মূল জায়গা। যেখানটায় আমরা মনে করেছি ও অন্যদের চেয়ে এগিয়ে আছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘২০২৩ বিশ্বকাপে আমাদের বেশ কিছু নতুন খেলোয়াড়ের দলে ঢোকার সম্ভাবনা আছে। কয়েকটা জায়গায় হয়তো রিপ্লেসমেন্ট প্রয়োজন হতে পারে। সেদিক থেকে যদি চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে নতুন ছেলেদের একটা পরিকল্পিত উপায়ে আমাদের সুযোগ দিতে হবে। এই ধরনের কাজ করার জন্য ডোমিঙ্গো উপযুক্ত আর সে এটাই করতে চাচ্ছে।’ শুধু জাতীয় দলই নয়, ডোমিঙ্গো বয়সভিত্তিক দলগুলোর দিকেও বিশেষ নজর দেবে বলে জানান বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, ‘সে জাতীয় দলের পাশাপাশি ‘এ’ দল, হাই পারফর্মেন্স দল ও অনুর্ধ-১৯ দলের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতে চাচ্ছে। আর এই কাজই সে করে এসেছে দক্ষিণ আফ্রিকায়। সে চার বছরের লম্বা একটা পরিকল্পনা আমাদের দিয়েছে। আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি দরকার ভাল একজন কোচ, যে নাকি এখানে থেকে ছেলেদের সঙ্গে থেকে একটা পরিকল্পনা নিয়ে দুই-চার বছর কাজ করবে। ডোমিঙ্গোর সঙ্গে সেভাবে ইন্টার?এ্যাকশন হয়নি, একটা সাক্ষাতকার হয়েছে। সে এসে কাজ করুক, আমাদের দেখুক, আমরা ওকে দেখি। যদি মিলে যায় তাহলে লম্বা সময়ই থাকতে পারে।’ ডোমিঙ্গোর সামনে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে টি২০ বিশ্বকাপ। তিনি কখনই দক্ষিণ আফ্রিকার জাতীয় দলের হয়ে খেলেননি। তবে কোচ হিসেবে সাফল্য কুড়িয়েছেন। বিশেষ করে টি২০তেও তার সাফল্য ঈর্ষণীয়ই। ২৫ বছর বয়স থেকেই কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন ডোমিঙ্গো। দক্ষিণ আফ্রিকার বয়সভিত্তিক দলগুলোতে সাফল্যের সঙ্গে কোচিং করান। ২০১২ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার টি২০ দলের দায়িত্ব পান। স্পেশালিস্ট টি২০ কোচ হিসেবে ২০১২ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৩ সালের জুলাই পর্যন্ত প্রোটিয়াদের টি২০ দলের দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমবারের মতো শ্রীলঙ্কার মাটিতে টি২০ সিরিজ খেলেই ২-১ ব্যবধানে জয় তুলে নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলঙ্কার মাটিতে ১৯ বছর পর কোন সিরিজও জিততে সক্ষম হয় প্রোটিয়ারা। ২০১৩ সালের জুলাইয়ের পর কার্স্টেন পুরোপুরি কোচিং ছেড়ে দিলে ডোমিঙ্গো টেস্ট, ওয়ানডে, টি২০ দলের দায়িত্ব পেয়ে যান। ডোমিঙ্গোর তত্ত্বাবধানে ২০১৪ সালের টি২০ বিশ্বকাপ ও ২০১৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলে দক্ষিণ আফ্রিকা। অস্ট্রেলিয়ায় আগামী বছর অক্টোবরে অনুষ্ঠেয় টি২০ বিশ্বকাপ তো নজরে থাকছেই, তবে ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য ওয়ানডে বিশ্বকাপকে নিয়েও পরিকল্পনা দিয়েছেন ডোমিঙ্গো। দক্ষিণ আফ্রিকা ছেড়ে বাংলাদেশের কোচ হওয়ার আশা আসলে ২০২৩ বিশ্বকাপকে লক্ষ্যে রেখেই। বিসিবি সভাপতি জানান, ও’ (ডোমিঙ্গো) বলেছিল, ‘বাংলাদেশে এসে সে যত বড় দেশই হোক না কেন তার জন্য জেতা কঠিন। সামনে বিশ্বকাপ হবে ভারতে। বাংলাদেশেরও শিরোপার অন্যতম দাবিদার হওয়া উচিত। ভারতের পর উপমহাদেশে বাংলাদেশই সবচেয়ে বড় শক্তি।’ এই ধরনের চিন্তা তার। আমরাও বিশ্বাস করি, আগামী (ওয়ানডে) বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অন্যতম দাবিদার হওয়া উচিত।’ মাশরাফি বিন মর্তুজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের মতো সিনিয়র ক্রিকেটাররা অবসরে গেলে একটা শূন্যতা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। সেই শূন্যতা পূরণ করতে এখনই নতুন তারকা ক্রিকেটার তৈরি করতে হবে। ডোমিঙ্গোই সেই তারকা ক্রিকেটার তৈরির দিকেই বিশেষ জোর দিতে চান। বিসিবি মেইল বার্তায় ডোমিঙ্গোর কোচ হওয়া নিয়ে জানানোর সঙ্গে তার লক্ষ্য কি তাও জানায়। ডোমিঙ্গো সেখানে তারকা ক্রিকেটার তৈরির কথাই জানান। ডোমিঙ্গো বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের কোচ হিসেবে নিয়োগ পাওয়া আমার জন্য অনেক বড় এক সম্মান। গভীর আগ্রহ নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের অগ্রগতি অনুসরণ করেছি আমি এবং যে লক্ষ্য পূরণের সামর্থ্য তাদের আছে, সেটিতে সহায়তা করার সুযোগ পেয়ে আমি দারুণ রোমাঞ্চিত।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘দলের এখনকার ক্রিকেটারদের উন্নতির ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে সহায়তা করতে চাই আমি। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিভার ভা ার থেকে নতুন উজ্জ্বল তারকাদের উন্নতির পথে এগিয়ে নিতে চাই।’ বিশ্বকাপ শেষেই কোচ স্টিভ রোডসকে বিদায় করে দেয় বিসিবি। এরপরই শুরু হয় কোচ খোঁজা। বিসিবির কোচ তালিকায় অনেকেই ছিলেন। তবে এক এক করে তালিকা থেকে ছিটকে পড়তে থাকেন। শেষ পর্যন্ত ডোমিঙ্গো ও হেসনই থাকেন সর্বশেষ তালিকায়। পেস বোলিং কোচ হিসেবে চার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট, স্পিন বোলিং কোচ হিসেবে ড্যানিয়েল ভেট্টরিকে আগেই নিয়োগ দিয়েছে বিসিবি। আর ব্যাটিং কোচ হিসেবে নিল ম্যাকেঞ্জি
×