ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সার্ভিস চার্জ আছে, সেবা নেই যশোর বিসিকে

প্রকাশিত: ০৯:২২, ২১ জুলাই ২০১৯

 সার্ভিস চার্জ আছে, সেবা নেই যশোর বিসিকে

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ গেল ২০১৮-১৯ অর্থবছরে যশোর বিসিক শিল্প নগরীতে ৬শ’ ৮৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকার পণ্য উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় বাজারে ৪শ’ ৪৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকার পণ্য বিক্রি এবং রফতানি করা হয়েছে ২শ’ ৪৮ কোটি টাকার পণ্য। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে যশোর বিসিক শিল্প নগরীতে ৬শ’ ৪৪ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে স্থানীয় বাজারে ৩শ’ ৯৬ কোটি টাকার পণ্য বিক্রি এবং রফতানি করা হয়েছে ২শ’ ৪৮ কোটি টাকার পণ্য। এর আগের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৫শ’ ৫৮ কোটি টাকার পণ্য উৎপাদন হয়েছিল। কর্মকর্তারা বলছেন, বাজার মন্দার কারণে গত দু’বছর উৎপাদন কম হচ্ছে। এদিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বিসিক শিল্পনগরী যশোরের কোন উন্নয়নই হয়নি। অবহেলিত থেকে গেছে যশোর বিসিক। কর্তৃপক্ষের প্রতিবছর সার্ভিস চার্জ নিলেও উন্নয়নে কোন নজরই দিচ্ছে না। দ্বিতীয় বিসিক শিল্পনগরী স্থাপনের উদ্যোগটিও থমকে আছে বছরের পর বছর ধরে। সেই সঙ্গে আছে নিরাপত্তার ঝুঁকি। আর এসব কারণে স্থানীয় শিল্প উদ্যোক্তাদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে। সম্প্রতি কিছু রাস্তা নির্মাণ করেছে বিসিক কর্তৃপক্ষ। যশোর শহরের পাশেই ঝুমঝুমপুরে ৫০ একর জমির ওপর ১৯৬২ সালে গড়ে ওঠে এ শিল্পনগরী। বিসিক কর্মকর্তারা জানান, এ নগরীতে মোট ১শ’ ১৮টি ইউনিট রয়েছে, যার মধ্যে ১শ’ ১৫টি ইউনিটেই শিল্প-কলকারখানা চালু রয়েছে। এসব শিল্প কারখানায় ৫ হাজার ৯শ’ ১৮ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যার মধ্যে পুরুষ শ্রমিক রয়েছে ২ হাজার ৯শ’ ৩২ ও নারী শ্রমিক রয়েছে ২ হাজার ৯শ’ ৮৬ জন। এখানকার শিল্প উদ্যোক্তারা জানান, যশোর বিসিক শিল্পনগরী থেকে সরকার নানাভাবে লাভবান হলেও এর উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের কোন দৃষ্টিই নেই। এখানে কোন পুলিশ ক্যাম্প নেই। নেই সড়ক বাতি। সন্ধ্যার পর পুরো বিসিক শিল্প এলাকা ভুতুড়ে নগরীতে পরিণত হয়। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি নিত্যকার ঘটনা। এ শিল্পনগরীতে ৩ কিলোমিটার পাকা রাস্তা এবং ৬ কিলোমিটার ড্রেন রয়েছে, যার মধ্যে সংস্কার না হওয়ায় ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে ড্রেনগুলো। আর গত বছর ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে রাস্তা। প্রত্যেকটি শিল্প-কলকারখানার জন্য পানি একটি অপরিহার্য উপাদান। যশোর বিসিক শিল্পনগরীর জন্য ১৯৬২ সালে মাত্র ২৫টি ইউনিটের জন্য পানির পাম্প স্থাপন করা হয়। অথচ ইউনিটের সংখ্যা এখন ১১৮-এ পৌঁছালেও সেই অর্ধশত বছরের পুরনো পাম্প দিয়েই এখনও কাজ চালানো হচ্ছে। তাও আবার দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় পানি সরবরাহ ঠিকমতো হয় না। এ বিষয়ে শিল্প উদ্যোক্তা এনায়েত ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী আকতার হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, যশোর বিসিক নানা সমস্যায় জর্জারিত। এখানকার অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। সেই সঙ্গে আছে পানি, বিদ্যুত, রাস্তার সমস্যা। এসব সমস্যার সমাধান হলে এখানে আরও শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠত। প্রতিবছর সার্ভিস চার্জ নিলেও ন্যূনতম সেবা দিচ্ছে না তারা। বিসিকের রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান এমইউ সিইএ ফুডসের স্বত্বাধিকারী শ্যামল দাস জানান, আমরা ইউনিয়ন পরিষদকে কর দিচ্ছি, আবার বিসিক নিচ্ছে সার্ভিস চার্জ। নিয়ম হলো এ সার্ভিস চার্জ নিয়ে তারা আমাদের সেবা দেবে। কিন্তু বিসিক থেকে আমরা কোন সুবিধা পাই না। এখানকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা খুবই খারাপ। নিজেদের অর্থে ড্রেনেজ পরিষ্কার করাতে হয়। নেই কোন সীমানা প্রাচীর ও মেইন গেট। একই সঙ্গে এখানে বৈদ্যুতিক ফিডারও নেই। যশোর বিসিক শিল্পনগরী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শেখ মোস্তফা আলী বলেন, এখন গরম মৌসুম চলছে। কোন ফ্যাক্টরিতে আগুন লাগলে তা নেভানোর জন্য এখানে পানি নেই। ’৬২ সালে স্থাপন করা পানি সরবরাহ লাইন পুরোপুরি অকেজো হয়ে আছে। ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যতটুকু পানি সঙ্গে করে নিয়ে আসবে, সেটুকুই কেবল ব্যবহার করতে পারবে, বাড়তি পানি বিসিক শিল্পনগরী থেকে পাবে না। তিনি বলেন, নারী-পুরুষ মিলিয়ে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি শ্রমিক এখানে কাজ করে। রাত-দিন মিলিয়ে ৩ শিফটে কাজ হয়। রাত ১০ টার দিকে যেসব নারী শ্রমিক বাড়ি ফেরে ও কাজে যোগদান করতে আসে, তাদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে হয়। চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, মহিলা শ্রমিকদের শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটছে প্রায়ই। এসব ব্যাপারে বারবার কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করো হলেও কোন কাজ হয়নি। এখন আবার আমাদের সব শিল্পের ওপর সার্ভিস চার্জ ৪গুণ বাড়ানো হয়েছে। অথচ সার্ভিসের কোন বালাই এখানে নেই। যশোর বিসিক শিল্পনগরীর কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম এসব সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, বরাদ্দ না পাওয়ার কারণে এসব সমস্যার সমাধান করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি আমরা রাস্তা নির্মাণ করেছি। বাজার মন্দার কারণে উদ্যোক্তারা উৎপাদন কমিয়েছেন। যে কারণে গত দু’বছর এখানে পণ্য উৎপাদন কিছুটা কমে গেছে। এ ব্যাপারে যশোর বিসিকের উপমহাব্যবস্থাপক এসএম কামরুল হাসান জানান, আমি যোগদানের আগে এখানে কিছুই ছিল না। আমি আসার পর ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে রাস্তা নির্মাণ করেছি। আরও ৯৪ লাখ টাকার উন্নয়ন কাজের জন্য দরপত্র আহবানের প্রক্রিয়া চলছে। এটি বাস্তবায়ন হলে বিসিকের বেশিরভাগ সমস্যা কেটে যাবে।
×