ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিবিসি বাংলা

ফাইভ জি নেটওয়ার্ক ঝুঁকি বাড়াবে স্বাস্থ্যের

প্রকাশিত: ১২:০৬, ২০ জুলাই ২০১৯

ফাইভ জি নেটওয়ার্ক  ঝুঁকি বাড়াবে স্বাস্থ্যের

ব্রিটেনের কিছু শহরে সম্প্রতি ফাইভ জি মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। ফাইভ জি নেটওয়ার্ক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা ক্ষতিকর সে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে এখন। পৃথিবীর কয়েকটি দেশে এরই মধ্যে ফাইভ জি নেটওয়ার্ক হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, সুইজারল্যান্ড এবং আমেরিকার কিছু অংশে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আরও অনেক দেশে ফাইভ জি নেটওয়ার্ক চালু হবে। সুতরাং ফাইভ জি নিয়ে কেন এত উদ্বেগ? এমন কি প্রমান রয়েছে যে ফাইভ জি নেটওয়ার্ক স্বাস্থ্যের জন্য ভাল? ফাইভ জি’র ব্যতিক্রম কোথায় পুরনো মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের মতো ফাইভ জি নেটওয়ার্কও নির্ভর করে এমন এক সিগন্যালের ওপর যেটি রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। এ্যান্টেনা এবং মোবাইল ফোন সেটের মধ্যে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম প্রবাহিত হয়। আমরা সবসময় ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশনের মধ্যেই বসবাস করছি। টেলিভিশন এবং রেডিওর সিগন্যাল, মোবাইল ফোন এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির মাধ্যমে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম ছড়িয়ে যাচ্ছে। এমনকি সূর্যের আলোতে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম রয়েছে। ফাইভ জি মোবাইল নেটওয়ার্কে অনেক হাই ফ্রিকোয়েন্সি ব্যবহার করা হয়। এর মাধ্যমে একই সময়ে অনেক মোবাইল ফোন সেটে দ্রুত গতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। ফাইভ জি নেটওয়ার্কে যে তরঙ্গ থাকে সেটি শহরাঞ্চলে খুব বেশি দূর যায় না। এই তরঙ্গ ছড়িয়ে দেবার জন্য অনেক বেশি ট্রান্সমিটার ব্যবহার করতে হয় এবং সেগুলোর অবস্থান হতে হয় মাটির কাছাকাছি। উদ্বেগ কোথায় মোবাইল ফোন প্রযুক্তিতে যে ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন ব্যবহার করা হয় সেটির কারণে বিশেষ কয়েক ধরনের ক্যান্সার হতে পারে বলে উদ্বেগ রয়েছে। ২০১৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ার বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার যৌথভাবে সব ধরনের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশনকে শ্রেণীবিন্যাস করে বলেছে এর মাধ্যমে ক্যান্সারের সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে। মোবাইল ফোন সিগন্যালের একটি অংশ হচ্ছে রেডিও ফ্রিকোয়ন্সি। রেডিও ফ্রিকোয়ন্সি রেডিশনের শ্রেণীবিন্যাস করার কারণ হচ্ছে, এই রেডিয়েশনের মাধ্যমে মানবদেহে ক্যান্সার হতে পারে- এর পুরোপুরি প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কৃত্রিম উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করা সবজি এবং ট্যালকম পাউডার ব্যবহারের ক্ষেত্রে সমান ঝুঁকি রয়েছে। এ্যালকোহল জাতীয় পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত মাংস ক্যান্সারের উচ্চ ঝুঁকি তৈরি করে। ২০১৮ সালে মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যেসব পুরুষ ইঁদুর উচ্চমাত্রার রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি রেডিয়েশনের সংস্পর্শে এসেছে তাদের হৃদপিণ্ডে ক্যান্সারাস টিউমার হয়েছে। এ গবেষণার জন্য কিছু ইঁদুরকে দুই বছর যাবত প্রতিদিন নয়-ঘণ্টা করে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে উচ্চমাত্রার রেডিয়েশনের সংস্পর্শে রাখা হয়েছিল। এটা করা হয়েছিল তাদের জন্মের আগে থেকেই। সেক্ষেত্রে মেয়ে ইঁদুরদের মধ্যে রেডিয়শেনের সঙ্গে ক্যান্সারের কোন সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব ইঁদুর রেডিয়েশনের সংস্পর্শে এসেছে তারা অন্য ইঁদুরের তুলনায় বেশি সময় বেঁচে ছিল। তবে একজন জ্যেষ্ঠ বিজ্ঞানী বলেন, মোবাইল ফোন ব্যবহারের কারণে মানুষ যে ধরনের রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আসে সেটির সঙ্গে এই গবেষণায় ব্যবহৃত রেডিয়েশনের সরাসরি তুলনা করা যাবে না। একদল বিজ্ঞানী এবং চিকিৎসক ফাইভ জি চালু বন্ধ করার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে চিঠি দিয়েছে। রেডিও ওয়েভ ক্যান্সার গবেষক ডেভিড রবার্ট গ্রিমস বলেন, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের জন্য যে ধরনের রেডিও ওয়েভ ব্যান্ড ব্যবহার করা হয়, যেটি শরীরের ডিএনএ ভাঙ্গা এবং কোষ ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কে যত উচ্চমাত্রার ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম ব্যবহার করা হবে, ঝুঁকি তত বাড়বে। সূর্যের অতি-বেগুনি রশ্মি ক্ষতিকারক অংশের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে চামড়ার ক্যান্সার হতে পারে। এমনিক চিকিৎসার জন্য এক্সরে করানোর ক্ষেত্রে রেডিয়েশনের মাত্রা কতটুকু থাকবে সেটিও নির্ধারণ করে দেয়া আছে। এক্সরে মেশিনের রেডিয়েশন বা বিকিরণ থেকে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। গবেষক ড. গ্রিমস বলেন, মোবাইল ফোন এবং ওয়্যারলেস নেটওয়ার্কে সঙ্গে স্বাস্থ্য-ঝুঁকি তৈরি হবার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। ফাইভ জি ট্রান্সমিটার নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে: ফাইভ জি প্রযুক্তি চালু করার জন্য অনেক নতুন স্টেশন লাগবে। মোবাইল ফোনের সিগন্যাল পাঠানো এবং গ্রহণ করার জন্য অনেক নতুন টাওয়ার বসাতে হবে। যেহেতু এরই মধ্যে পুরনো মোবাইল নেটওয়ার্কের জন্য ট্রান্সমিটার আছে যেগুলো ফোর জি প্রযুক্তির চেয়ে কম ক্ষমতায় চলতে পারে, ফলে ফাইভ জি এ্যান্টেনা থেকে রেডিয়েশনের মাত্রা কম হবে। আন্তর্জাতিক নির্দেশনা অনুযায়ী ফাইভ জি নেটওয়ার্কের একটি অংশ মাইক্রোওয়েভে ব্যান্ড-এর মধ্যে পড়ে। মাইক্রোওয়েবে বিভিন্ন বস্তুতে তাপ উৎপন্ন করে যাতে এটি সহজে পরিবাহিত হতে পারে। ফাইভ জি নেটওয়ার্কের জন্য যে মাইক্রোওয়েভ ব্যান্ড ব্যবহার করা হয় সেটি ক্ষতিকারক নয়, বলছিলেন অধ্যাপক রডনি ক্রফট। তিনি বলেন, ফাইভ জি মোবাইল নেটওয়ার্কের যে রেডিও ফ্রিকোয়ন্সি সেটি এতোই ছোট যে তাপমাত্রা বৃদ্ধি হয় না বললেই চলে।
×