ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঐতিহাসিক মুহূর্ত

প্রকাশিত: ০৮:৩৯, ১ জুলাই ২০১৯

ঐতিহাসিক মুহূর্ত

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রবিবার উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে সীমান্ত গ্রাম পানমুনজমের অসামরিক এলাকায় দেখা করে করমর্দন করেছেন। অসামরিক এলাকায় কিম জং উনের সঙ্গে হাত মেলানোর পর প্রেসিডেন্ট উত্তর কোরীয় ভূখ-ে প্রবেশ করেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পই হলেন প্রথম মার্কিন প্রেসিডেন্ট যিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় উত্তর কোরিয়া গেলেন। এটাকে সত্যিকার অর্থে রাজনৈতিক থিয়েটার বলে উড়িয়ে দিয়েছেন সমালোচকরা। তবে কেউ কেউ বলছেন, এর ফলে ভবিষ্যতে আলোচনার পটভূমি সৃষ্টি হতে পারে। এর আগে পরমাণু আলোচনা নিয়ে তাদের সর্বশেষ বৈঠক কোন সমঝোতা ছাড়াই দ্রুত শেষ হয়ে যায়। এদিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমং জং উনকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। অসামরিক এলাকায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সাংবাদিকদের বলেন, এটি সত্যিকার অর্থেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত। তিনি দুই কোরিয়ার সীমান্ত অতিক্রম করতে পারায় গর্বিত বলেও জানান। এ সময় তাঁর পাশে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন উপস্থিত ছিলেন। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, ‘এটা বিশাল সম্মান। ব্যাপক অগ্রগতি হয়েছে... বিশেষ করে এটা অভূতপূর্ব বন্ধুত্ব।’ ট্রাম্প আরও বলেন, ‘এটা বিশ্বের জন্য একটি মহান দিন।’ এ সময় হেঁসে জবাব দেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিমং জং উন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, এটা তাঁর অশুভ অতীত দূর করার ইচ্ছা এবং নয়া ভবিষ্যতের ইচ্ছার অভিব্যক্তি।’ হাত মেলানো শেষ হলে দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। বিরল এক বার্তায় কিম জং উন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ট্রাম্প ও কিমের এই সাক্ষাত চমৎকার সম্পর্কের প্রতীক। দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে-ইনের সঙ্গে অসামরিক এলাকায় সফরে যান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেখানে পিস হাউসে তিন নেতা ট্রাম্প, মুন জায়ে-ইন ও কিম জং উন প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক করেন। ট্রাম্প এই বৈঠককে খুবই ঐতিহাসিক হিসেবে বর্ণনা করেন। যারা বলেছিল, কিমের সঙ্গে গত দুটি বৈঠক থেকে কিছুই অর্জিত হয়নি, তাদের সমালোচনা করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেন যে, ত্রিপক্ষীয় সমঝোতার জন্য নতুন টিম গঠন করা হবে। সাংবাদিকরা ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেন, তিনি কি বিশ্বাস করেন উত্তর কোরিয়ার আগের সমঝোতাকারীরা জীবিত আছেন? এ প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প বলেন, ‘আমি তো মনে করি, তারা বেঁচে আছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের মধ্যেকার নাটকীয় এই সাক্ষাতকে চলমান পরমাণুু নিরস্ত্রীকরণ আলোচনার তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা হিসেবে দেখা হবে। গত বছর সিঙ্গাপুরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের মধ্যে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে আলোচনা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। উত্তর কোরিয়ার বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচী পরিত্যাগ করানোর চেষ্টা করছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা উভয়ই কোরীয় উপদ্বীপে পুরোপুরি পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্রক্রিয়া বাস্তবায়ন করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু এ বিষয়ে কেউ পরিষ্কার কিছু জানায়নি। আশা করা হচ্ছিল যে, ভিয়েতনামের রাজধানী হ্যানয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় বৈঠকে তাদের মধ্যে একটি গঠনমূলক চুক্তি হবে। এর ফলে উত্তর কোরিয়া পরমাণু কর্মসূচী যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তুলে দেবে। এর বিনিময়ে দেশটির ওপর থেকে কঠোর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়া হবে। কিন্তু ট্রাম্প ও কিম নিষেধাজ্ঞা বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়ায় উভয় আলোচনাই কোন চুক্তি ছাড়াই শেষ হয়। এরপর থেকে পরমাণু বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা স্থগিত রয়েছে। যদিও সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও উত্তর কোরীয় নেতা কিম জং উনের মধ্যে বেশ কয়েকবার চিঠি আদান-প্রদান হয়েছে। পানমুনজমের অসামরিক এলাকাটি চার কিমি (আড়াই মাইল) প্রশস্ত এবং ২৫০ কিমি দীর্ঘ। ১৯৫৩ সালে কোরীয় যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এই এলাকাটি উপদ্বীপকে বিভক্ত করেছে। যদিও আক্ষরিক অর্থে ওই এলাকায় কোন সামরিক স্থাপনা বা সামরিক ব্যক্তির উপস্থিতি নেই, কিন্তু বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে বেশি সামরিক সীমান্ত এটি। এই পানমুনজম গ্রামে জয়েন্ট সিকিউরিটি এরিয়া (জেএসএ) অবস্থিত এবং উত্তর কোরিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সকল সমঝোতা বৈঠক এখানেই অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।-বিবিসি ও গ্লোবাল টাইমস
×