ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

১১ জন গ্রেফতার ॥ শ্রমিকদের মধ্যে স্বস্তি

পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের ঘটনায় মামলায় ৬শ’ জন আসামি

প্রকাশিত: ১০:১৫, ২২ জুন ২০১৯

 পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের ঘটনায় মামলায় ৬শ’ জন আসামি

স্টাফ রিপোর্টার, নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া ॥ পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের সংঘর্ষের ঘটনায় ৬শ’ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মামলাটি দায়ের করেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এনইপিসির সেফটি ডিরেক্টর ওয়াং লি বিং। পুলিশ ওই মামলাতে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে। অভিযান চালিয়ে চুরি যাওয়া কিছু মাল উদ্ধার করা হয়েছে। কলাপাড়া থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, দায়ীদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে বিদ্যুত বিভাগ থেকে প্রেরিত ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্রের শ্রমিকদের নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছে বিদ্যুত কেন্দ্রর উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার কোম্পানি। এখনও বিদ্যুত কেন্দ্রটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাহারা রয়েছে। এতে সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসছে। শুক্রবার দুপুরে এনইপিসি’র কর্মকর্তারা পায়রা পরিদর্শন করেছেন। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি বলছে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আইন শৃঙ্খলাবাহিনী রয়েছে সর্বোচ্চ সতর্কতায় থাকাতে এখন আর শ্রমিকদের মধ্যে কোন ভীতিকর পরিবেশ নেই। পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র এলাকার নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) ফেরদৌস আহমেদ বলেন, পরিস্থিতির দ্রুত উন্নতি হয়েছে। এক কথায় বলা যায় স্বাভাবিক অবস্থা বিরাজ করছে। বুধবার দুপুরে বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র এলাকা পরিদর্শন করেন। তিনি বিসিপিসিএল ও জেলা প্রশাসনের সঙ্গে জরুরী বৈঠক করেন। পরিদর্শন করেন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা। মন্ত্রী পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও বিসিপিসিএলএর প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। আগামী সাত দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বর্তমানে গোটা এলাকার পরিস্থিতি প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে এবং শান্ত রয়েছে। দু’একদিনের মধ্যে ফের বিদ্যুত প্লান্ট এলাকা কর্মমুখর হয়ে উঠবে বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দাবি করেছেন। ফের গতি আসবে কাজে বলেও তাদের মন্তব্য। প্লান্ট এলাকায় র‌্যাব, আর্মড পুলিশ এবং অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। বৃহস্পতিবার বিদ্যুত বিভাগ ঘটনার যে ব্যাখ্যা দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে নিহত শ্রমিক সাবিন্দ্র দাস কাজের সময় নিরাপত্তার জন্য ব্যবহৃত সকল সরঞ্জাম পরিহিত ছিলেন। কিন্তু শেষবার তিনি সেফটি বেল্টের হুক যথাস্থানে ভুলবশত স্থাপন না করায় ওপর থেকে পড়ে গিয়ে নিহত হন। সেখান থেকে ঘটনার সূত্রপাত। পরে রাতে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সৃষ্টি হয়। এতে ১০ জন বাঙালী এবং ৬ জন চীনা শ্রমিক আহত হন। চীনা শ্রমিক ঝাং ইয়াং ফাং পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান। রাতেই তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টা সত্ত্বেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। দেশের বিদ্যুত চাহিদা মেটাতে কলাপাড়ার ধানখালীতে প্রধানমন্ত্রীর নিজস্ব উদ্যোগে ১৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ কাজ শুরু হয়। এক হাজার একর জমির মালিকদের ২০১৫ সালের ১৩ জুন থেকে ক্ষতিপূরণের চেক প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে গৃহহারাদের পুনর্বাসন পল্লী স্বপ্নের ঠিকানা গড়ে তোলা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এসব মানুষের হাতে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেছেন। আগামী নবেম্বরে প্রকল্পের একটি ইউনিট উৎপাদনে যাওয়ার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন। এমনকি উৎপাদিত বিদ্যুত জাতীয় গ্রীডে সরবরাহের জন্য পায়রা পাওয়ার প্লান্টের সঙ্গে সঞ্চালন লাইন নির্মাণের লক্ষ্যে বিদ্যুত টাওয়ার স্থাপনের কাজ শেষের পথে। এখানে এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার আরও একটি কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র এবং তিন হাজার ৬০০ মেগাওয়াট ক্ষতার আরও একটি এলএনজি চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। বাংলাদেশ-চায়না পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (বিসিপিসিএল) প্রকল্প পরিচালক শাহ আবদুল মাওলা জানান, কেন এ ঘটনা ঘটল তাও খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কলাপাড়া থানার ওসি মোঃ মনিরুল ইসলাম জানান, এ সব ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এখন কোন ধরনের নিরাপত্তার সমস্যা নেই।
×