ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ম্যাচ পাতানো নিয়ে তুলকালাম কান্ড ফেনী সকারে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২০ জুন ২০১৯

 ম্যাচ পাতানো নিয়ে তুলকালাম কান্ড ফেনী সকারে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ একটি দেশের ফুটবলের উন্নয়নের পথে বাধাগুলো কি কি? তৃণমূলে ফুটবলের উৎস বাধাগ্রস্ত হওয়া, মাঠের সঙ্কট বা খারাপ মাঠ, দক্ষ রেফারির অভাব, পৃষ্ঠপোষকের অভাব, দেশজুড়ে খেলা অনুষ্ঠিত না হওয়া ... এমনি আরও কত কি! তবে এখনও একটি সমস্যার কথা বলাই হয়নি, যেটা কি না ফুটবলের জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা। এক কথায় এটাকে অনায়াসেই বলা যায় ‘ফুটবলের ক্যান্সার’! এই ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়লে একটি দেশের ঘরোয়া ফুটবল বা ক্লাব ফুটবলের অবকাঠামো ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য। এতে করে দর্শক খেলা দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে, নতুন প্রজন্মও ফুটবল খেলতে অনীহায় ভুগবে। এই ক্যান্সারের নাম ‘ম্যাচ পাতানো’! গত ২৪ মে শেষ হয়েছে পেশাদার লীগের দ্বিতীয় স্তর ‘বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগ’-এর খেলা। এতে সবচেয়ে কম পয়েন্ট নিয়ে অবনমিত হয়েছে সকার ক্লাব ফেনী (১৯ পয়েন্ট) এবং স্বাধীনতা ক্রীড়া সংঘ (১৭ পয়েন্ট)। এই প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু হচ্ছে সকার ক্লাব ফেনী, যে ক্লাবটিতে ম্যাচ পাতানো নিয়ে ঘটে গেছে তুলকালাম কান্ড। দৈনিক জনকণ্ঠ জানতে পেরেছে ঢাকার বাইরের এই ক্লাবটির বিসিএল ফুটবলে চাঞ্চল্যকর ম্যাচ পাতানোর বিষয়টি। ২০১৪ সালের স্বাধীনতা কাপ ফুটবলের ফাইনাল খেলে আলোড়ন সৃষ্টি করা (ফাইনালে মোহামেডানের কাছে টাইব্রেকারে হেরেছিল ফেনী সকার) ক্লাবটির কোষাধ্যক্ষ নিজাম উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন তার ক্লাবেরই একটি চক্রকে তিনি সনাক্ত করতে পেরেছেন, যারা ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত! এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সকার ক্লাব ফেনীর ম্যানেজার জাহাঙ্গীর আলম হচ্ছেন ম্যাচ পাতানোর নাটের গুরু। তিনিসহ এই ক্লাবের সাত ফুটবলার ম্যাচ পাতানোর সঙ্গে জড়িত। নিজাম আরও জানানÑ তিনি ম্যাচ পাতানোর সমস্ত তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করে সেগুলো বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) কাছে গত ২১ মে জমা দিয়েছেন এবং অভিযোগ দায়ের করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, বাফুফে তার এই অভিযোগ আমলে নিয়ে সুষ্ঠভাবে তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিক। সেই সঙ্গে একটি আর্জিও জানান, ‘আমাদের ক্লাবকে যেন অবনমিত না করে বিসিএলে আরেকবার খেলার সুযোগ দেয়া হয়, বাফুফের কাছে এই সুবিচার প্রত্যাশা করছি।’ নিজাম জানিয়েছেন যে ৫টি ম্যাচে ফেনী সকার পাতানো খেলেছে, সেগুলো হলো : বনাম ঢাকা সিটি এফসি (৫ মার্চ, ফল : ঢাকা সিটি ২-০ গোলে জয়ী), বনাম উত্তর বারিধারা ক্লাব (১১ এপ্রিল, ফল : বারিধারা ৪-২ গোলে জয়ী), বনাম টিএন্ডটি ক্লাব মতিঝিল (১৬ এপ্রিল, ফল : টিএন্ডটি ১-০ গোলে জয়ী), বনাম ইয়ংমেন্স ফকিরেরপুল (১৯ এপ্রিল, ফল : ফকিরেরপুল ১-০ গোলে জয়ী) এবং বনাম অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেড এসসি (১৫ মে, ফল : অগ্রণী ব্যাংক ৩-০ গোলে জয়ী)। যে সাত ফুটবলার পাতানো ম্যাচের সঙ্গে জড়িত, তাদেরকে কারণ দর্শাও নোটিশ পাঠিয়েছিলেন বলে দাবি করেন নিজাম। কিন্তু তারা কেউই এর জবাব দেয়নি বলে জানান তিনি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘অভিযুক্তদের কয়েক খেলোয়াড় পাতানো ম্যাচ না খেললেও তারা পুরো বিষয়টি জেনেও আমাকে জানায়নি। এজন্য মনে করি তারাও সমান অপরাধী। তাই তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ করেছি।’ তবে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন ম্যানেজার জাহাঙ্গীর, ‘ম্যানেজার হিসেবে আমি ক্লাবের কাছে দেড় লাখ টাকা এখনও পাইনি। কোরআন শরীফ ছুঁয়ে কেউ করুক এই অভিযোগ। আমি মোটেও এর সঙ্গে জড়িত না। আমি এর আগে এই ক্লাবের খেলোয়াড়, সহকারী কোচ ছিলাম। ক্লাবই আমার কাছে সব। লীগ শুরুর আগে স্বল্প প্রস্তুতির কারণেই আমরা এই লীগে ভাল ফল করতে পারিনি। এটাই বাস্তবতা। যদি দোষী হই, তাহলে বাফুফে যে শাস্তি দেবে, তা মাথা পেতে নেব।’ অভিযুক্ত কয়েকজন খেলোয়াড় তাদের নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনকণ্ঠকে জানিয়েছেনÑ তারা কোনভাবেই পাতানো ম্যাচ খেলেননি। কোন অর্থও নেননি। তবে খেলার প্রস্তাব পেয়েছিলেন। কিন্তু রাজি হননি। তাদের স্ত্রী-সন্তান আছে, নীতি-নৈতিকতা আছে, এ কাজ তারা করতে পারেন না। তাদের ফাঁসানো হয়েছে। এসব অভিযোগের কোন ভিত্তি নেই। তাদের সঙ্গে কথোপকথনে বের হয়ে এসেছে আরও তিনটি নাম, যারা খেলোয়াড়দেরকে ম্যাচ পাতানোর ‘এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করেছেন। এরা হলেন সকার ক্লাব ফেনীর সহকারী কোচ শিপন এবং দুই খেলোয়াড় রুবেল ও সাদ্দাম। শিপন বলেন, ‘আমিও শুনেছি পাতানো ম্যাচের সঙ্গে জাহাঙ্গীরসহ কয়েক খেলোয়াড় জড়িত। আমার বিরুদ্ধে এই অভিযোগ মিথ্যে। বরং আমি নিজেও পাতানোর খেলার ঘোর বিরোধী। আমি ইতোমধ্যেই বাফুফের সাইফুল ভাইকে ব্যাপারটা জানিয়েছি।’ এখন দেখার বিষয়, শেষ পর্যন্ত কে দোষী আর কে নির্দোষ সেটা বের করতে পারে কি না বাফুফে।
×