চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের গানসু প্রদেশের মিনকিং শহরে ব্যাপক বৃক্ষ ও লতাগুল্ম রোপণ কর্মসূচী চলছে। গত চার দশক ধরে চীনে যে বিশাল বনায়ন প্রকল্পের কাজ চলছে ওই কর্মসূচী হলো তারই এক অতি ক্ষুদ্র অংশ। প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো উত্তর চীনের বিশাল এলাকাজুড়ে বিরাজমান গোবি মরুভূমি এবং সিংকিয়াংয়ের পশ্চিমাঞ্চলে তাকলামাকান মরুভূমির প্রান্ত বরাবর গাছপালা ও ঝোপঝাড়ের একটা বলয় গড়ে তোলা। চীনের প্রদেশগুলোর প্রায় এক-চতুর্থাংশ এই প্রকল্পের অন্তর্গত। সরকারী পরিভাষায় একে থ্রি নর্থ শেল্টারবেল্ট প্রোগ্রাম বলা হয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে মরুভূমিকে বশে আনার লক্ষ্যে সবুজ মহাপ্রাচীর নির্মাণ করা। সরকার যদিও দাবি করছে যে গ্রীন ওয়াল কাজ করছে। তবে আদৌ করছে কিনা সে ব্যাপারে তেমন কোন তথ্য-প্রমাণ নেই। কোন কোন বিজ্ঞানী এমনও মনে করেন এতে মরুবিস্তার সমস্যার আরও অবনতি হবে।
১৯৪৯ সালে কমিউনিস্ট পার্টির ক্ষমতা দখলের পর অল্প দিনের মধ্যে মরুভূমির বিরুদ্ধে পার্টির লড়াই শুরু হয়ে যায়। মাও বিশ্বাস করতেন যে বিশাল বিশাল প্রকৌশল প্রকল্প দিয়ে মরুভূমিকে বশে আনা যায়। এতে যে আবাদযোগ্য জমি মিলবে তাতে খাদ্যোৎপাদন বাড়বে। কিন্তু তা হয়নি। বরং চীনের মরুভূমিগুলোর ধীরে ধীরে বিস্তার ঘটেছে। ১৯৫০ এর দশক থেকে ১৯৭০ এর দশকের সময়ের মধ্যে প্রতি বছর চীনের দেড় হাজার বর্গকিলোমিটার জমি মরুভূমি গ্রাস করেছে। ২০০০ সাল নাগাদ এই হার দ্বিগুণের বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গ্রীনওয়াল প্রকল্পের কাজ দেং জিয়াও পিং যে বছর ক্ষমতায় আসেন সে বছর শুরু হয়। ২০৫০ সালে যখন প্রকল্পটি সম্পন্ন হবে তখন গোবি ও তাকলামাকান মরুভূমির কাছে বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকার পরিমাণ ৪০ বছর আগের ৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ১৫ শতাংশ হওয়ার কথা। সরকারের দাবি লক্ষ্যমাত্রা প্রায় অর্জিত হয়েছে। কর্মকর্তারা আশা করে যে বনভূমির বেষ্টনী যা কিনা মিনকিনের চারপাশে ১ কিলোমিটার চওড়া হবেÑ ধূলিঝড় ঠেকাবে, মরুবিস্তার নিয়ন্ত্রণ করবে এবং মরুভূমিতে পরিণত এলাকাতে আবার আবাদী এলাকায় ফিরিয়ে আনা যাবে। তারা বলেন যে ৩০ কোটির বেশি লোক ইতালির সমান একটা এলাকা বরাবর গাছপালা লাগিয়ে মহাসবুজ প্রাচীর নির্মাণে সাহায্য করেছে। চলতি দশকে এই প্রকল্পে ব্যয়ের অঙ্ক ১৪শ’ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
সরকার দাবি করে যে চীনের মরুভূমির আওতাভুক্ত মোট এলাকা ২০১৪ সালে ছোট বা সঙ্কুচিত হয়ে আসতে শুরু করেছে এবং প্রতিবছর ২৪শ’ বর্গকিলোমিটার হারে সঙ্কুচিত হয়ে চলতে থাকবে। সবচেয়ে বেশি উন্নতি ঘটেছে উত্তরের তিনটি অঞ্চলে। কর্মকর্তারা বলেন, মরুভূমির আকার আয়তন কমিয়ে আনার ব্যাপারে চীনই প্রথম দেশ। বিদেশীরাও চীনের অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারে।
গ্রীন বেল্ট তৈরির কাজে যারা হাতে কলমে নিয়োজিত তারা জানায় প্রথমে তারা বালুরাশির বুকে খড়ের সারিবদ্ধ সেলের একটি গ্রিড তৈরি করে। প্রতিটি সেল ১ বর্গমিটার। এর কোন কোনটিতে সাক্সুয়াল নামে এক ধরনের পাতাবিহীন গুল্ম রোপণ করা হয়। গ্রিডগুলো উপরের মাটিকে দীর্ঘ সময় স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে, যাতে এগুলোতে গাছ লাগানো যায়। এই গাছগুলোকে শিকর গাড়তে সাহায্য করার জন্য হোম পাইপ দিয়ে পানি দেয়া হয়। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ স¦ীকার করেন যে চীনের উত্তরাঞ্চলে বাস্তবিকই আগের চেয়ে সবুজ এলাকা বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে এর কারণ নিয়ে তাদের মধ্যে ভিন্নমত আছে। ২০১০ সালে বেজিং নরমান বিশ্ববিদ্যালয় এবং চীনের বিজ্ঞান একাডেমির একাডেমিশিয়ানরা বলেন, সবুজ প্রাচীরের প্রভাব প্রচারের উদ্দেশ্যে বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। তারা উল্লেখ করেন যে সবুজ প্রাচীরের কাজ শুরু হওয়ার আগেই বেশ কিছু অঞ্চলে ধূলিঝড়ের প্রকোপ বয়ে এসেছিল। এই প্রকল্প যে কাজ দিয়েছে তার সপক্ষে সুদৃঢ় কোন প্রমাণ নেই।
চলমান ডেস্ক
সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: