ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ট্রেনের অগ্রিম টিকেট আজ থেকে, এ্যাপে ৫০ ভাগ

প্রকাশিত: ১১:২১, ২২ মে ২০১৯

ট্রেনের অগ্রিম টিকেট  আজ থেকে,  এ্যাপে ৫০ ভাগ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাস ও লঞ্চের পর আজ থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির শুরু করতে যাচ্ছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। নিরাপদ যাত্রার কথা বিবেচনায় প্রতি বছরই ট্রেনের টিকেট যাত্রীদের আগ্রহের বিবেচনায় প্রথম। তাই রেলওয়ের পাশাপাশি টিকেট যুদ্ধে অংশ নিতে সাধারণ মানুষও বেশ প্রস্তুত। জনদুর্ভোগ কমাতে প্রথমবারের মতো রাজধানীর কমলাপুরসহ পাঁচটি স্থানে টিকেট বিক্রির প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে কালোবাজারি রোধ ও যাত্রী নিরাপত্তায় নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। আজ সকাল থেকে টিকেট প্রাপ্তি স্থানগুলোতে থাকবে চার স্তরের নিরাপত্তা বেষ্টনী। বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। অন্তত ২৪ ঘণ্টা আগে থেকে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। সন্দেহজনক কোন ব্যক্তিকে দেখলেই জিজ্ঞাসাবাদ করবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। র‌্যাবের পক্ষ থেকে বসানো হবে অভিযোগ বক্স। রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে একজন সর্বোচ্চ চারটি টিকেট সংগ্রহ করতে পারবেন। মোট টিকেটের ৫০ ভাগ সংগ্রহ করা যাবে অনলাইনে। অর্থাৎ রেলওয়ের করা নতুন এ্যাপের মাধ্যমে ঘরে বসেই টিকেট কাটতে পারবেন যে কেউ। বাকি ৫০ ভাগের মধ্যে ১০ ভাগ বরাদ্দ ভিআইপি ও রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য। বাদবাকি ৪০ ভাগ সাধারণ মানুষের জন্য। এদিকে ঈদ উপলক্ষে সারাদেশে এক হাজার ১০০ বাস পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়ে ঘরমুখো মানুষের জন্য অগ্রিম টিকেট বিক্রি শুরু করেছে বিআরটিসি। রাষ্ট্রীয় এই পরিবহন সংস্থাটি দ্বিতীয় দিনেও সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টিকেট বিক্রিতে সাড়া পায়নি। নগরীর সাতটি পয়েন্ট থেকে টিকেট বিক্রি শুরু হলেও কোন কাউন্টারে ভিড় নেই। আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে আজ থেকে ২৬ মে পর্যন্ত পাঁচদিন ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল মন্ত্রণালয়। ঈদ পরবর্তী ট্রেনের ফিরতি টিকেট বিক্রি শুরু হবে ২৯ মে, চলবে দুই জুন পর্যন্ত। ৯৫টি আন্তঃনগর ট্রেনের প্রতিদিন বিক্রি হবে প্রায় ৭০ হাজার টিকেট। এবারের ঈদ যাত্রায় আট জোড়া স্পেশাল ট্রেন যুক্ত হচ্ছে। এছাড়া গাজীপুরের জয়দেবপুর রেল স্টেশন থেকেও অগ্রিম টিকেট বিক্রি হবে। মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আজ ২২ মে ৩১ মে’র, ২৩ মে ১ জুনের, ২৪ মে ২ জুনের, ২৫ মে ৩ জুনের ও ২৬ মে ৪ জুনের টিকেট বিক্রি করা হবে। আর অগ্রিম ফিরতি টিকেটের ক্ষেত্রে ২৯ মে ৭ জুনের, ৩০ মে ৮ জুনের, ৩১ মে ৯ জুনের, ১ জুন ১০ জুনের এবং ২ জুন ১১ জুনের টিকেট বিক্রি করা হবে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টিকেট বিক্রি কার্যক্রম চলবে। যে পাঁচ পয়েন্ট থেকে টিকেট বিক্রি ॥ রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, ঈদের প্রায় পাঁচদিন আগে ৩১ মে থেকে রেলওয়েতে ট্রেনের কোন ডে-অফ থাকবে না। ফলে ৪৮টি বিশেষ ট্রিপ পরিচালিত হবে। এবার প্রথমবারের মতো কমলাপুর রেল স্টেশন ছাড়াও চারটি স্থানে টিকেট বিক্রি করা হবে। কমলাপুর থেকে সমগ্র পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনের টিকেট, বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট, তেজগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ ও জামালপুরগামী ট্রেনের টিকেট, বনানী থেকে নেত্রকোনাগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেসের টিকেট এবং ফুলবাড়িয়া (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের টিকেট বিক্রি করা হবে। রেলওয়ের দায়িত্বশীল কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, ঈদ উপলক্ষে বিভিন্ন রুটে আট জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে। ঢাকা দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা রুটে এক জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে। চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রুটে দুই জোড়া স্পেশাল ট্রেন চলবে। কলকাতা-খুলনার বন্ধন ট্রেন স্পেশাল হিসেবে চলবে খুলনা-ঢাকা-খুলনা রুটে। এছাড়া ঢাকা-ঈশ্বরদী-ঢাকা রুটে একটি, লালমনিরহাট-ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে একটি, শোলাকিয়া স্পেশাল-১ ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার রুটে ঈদের দিন, শোলাকিয়া স্পেশাল-২ ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ রুটে ঈদের দিন স্পেশাল ট্রেন হিসেবে চলবে। তবে স্পেশাল ট্রেনের টিকেট এ্যাপসের মাধ্যমে কেনা যাবে না। ২৫ মে থেকে সবচেয়ে দীর্ঘ ট্রেন সার্ভিস শুরু ॥ আগামী ২৫ মে ঢাকা-পঞ্চগড় রুটে ‘পঞ্চগড় এক্সপ্রেস’ নামে নতুন ট্রেন চালু করা হবে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বিরতিহীন এই ট্রেনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। বনলতার মতো পঞ্চগড় এক্সপ্রেসে খাবার বাধ্যতামূলক করা হয়নি। ভাড়ার হার নির্ধারণ করা হয়েছে শোভন ৫৫০ টাকা, এসি চেয়ার ১ হাজার ৩৫ টাকা, এসি কেবিন ১ হাজার ২৬০ টাকা এবং এসি স্লিপিং বার্থ ১ হাজার ৮৯২ টাকা। ৫৯৩ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে এটি বাংলাদেশের সর্ব দীর্ঘ ট্রেন সার্ভিস হতে যাচ্ছে। ১৮টি বগি নিয়ে ঢাকা থেকে সরাসরি পার্বতীপুর পর্যন্ত যাবে ট্রেনটি। এরপর দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও এ দুই জায়গায় থেমে পঞ্চগড়ে গিয়ে শেষ হবে ট্রেনটির যাত্রা। রেলমন্ত্রী জানান, ঈদের সময় ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেস বন্ধ থাকবে। ওই ট্রেনটি দিয়ে চালানো হবে খুলনা ঈদ স্পেশাল একটি ট্রেন। ৩ জুন রাত ১২টা ৫ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে। ঢাকা-ঈশ্বরদী-ঢাকা রুটে ২ থেকে ৪ জুন চলবে ঈশ্বরদী ঈদ স্পেশাল ট্রেন। লালমনি ঈদ স্পেশাল নামে বিশেষ একটি ট্রেন ২ থেকে ৪ জুন চলবে লালমনিরহাট-ঢাকা-লালমনিরহাট রুটে। মন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকার কমলাপুর, ঢাকা বিমানবন্দর, জয়দেবপুর, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, সিলেট, রাজশাহী, খুলনাসহ সকল বড় বড় স্টেশনে জিআরপি, আরএনবি, বিজিপি ও স্থানীয় পুলিশ এবং র‌্যাবের সহযোগিতায় টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধে সর্বক্ষণিক ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া জেলা প্রশাসকদের সহায়তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে।’ তিনি আরও বলেন, যে কোন নাশকতা প্রতিরোধে চলন্ত ট্রনে, স্টেশনে বা রেললাইনে আরএনবি, জিআরপি ও রেলওয়ে কর্মচারীদের কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। এছাড়া র‌্যাব, বিজিবি ও স্থানীয় পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সক্রিয় সহযোগিতায় নাশকতাকারীদের কঠোরভাবে দমন করা হবে। এ্যাপে যেভাবে টিকেট কাটবেন ॥ ‘রেল সেবা’ নামে নতুন এ্যাপ চালু করেছে রেল মন্ত্রণালয়। গত ২৮ এপ্রিল কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এ্যাপটির উদ্বোধন করা হয়। এর মাধ্যমে ঘরে বসেই কাটতে পারবেন ট্রেনের টিকেট। এজন্য আপনার মোবাইলে একটি এ্যাপ ডাউনলোড করে নিতে হবে। এ্যাপটির মাধ্যমে ঘণ্টায় ১৫ হাজার টিকেট কাটা যাবে। অর্থাৎ প্রতি মিনিটে আড়াই শ’ টিকেট কাটা যাবে। একই সঙ্গে একজন যাত্রী সর্বোচ্চ চারটি টিকেট কিনতে পারবেন। রেলওয়ে সূত্র জানায়, নতুন এই এ্যাপটির মাধ্যমে একসঙ্গে ৫০০ যাত্রী ট্রেনের টিকেট কাটতে পারবেন। পরবর্তীতে অবকাঠামোগত পরিবর্তন আসলে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে। সংশ্লিষ্টরা আরও জানিয়েছেন, মোট টিকেটের ৫০ শতাংশ ক্রয় করা যাবে মোবাইলের মেসেজ বা অনলাইনের মাধ্যমে। এর মধ্যে কিছু সংখ্যক মেসেজের মাধ্যমে, কিছু ওয়েবসাইট ও কিছু পাওয়া যাবে এই ‘রেল সেবা’ এ্যাপের মাধ্যমে। যেভাবে চালু করবেন ‘রেল সেবা’ এ্যাপ ॥ প্রথম ধাপ : এই ঠিকানা যঃঃঢ়ং://ঢ়ষধু.মড়ড়মষব.পড়স থেকে এ্যাপটি ডাউনলোড করা যাবে। ১৭ মেগাবাইট সাইজের এই এ্যাপটি যে কেউ এ্যানড্রয়েড মোবাইল থেকে ডাউনলোড করার সুযোগ পাবেন। দ্বিতীয় ধাপ : এ্যাপটি খুলে নাম, মোবাইল নম্বর, ই-মেইল, ঠিকানা, পোস্ট কোড, জাতীয় পরিচয়পত্র বা জন্মনিবন্ধন নম্বর, জন্মতারিখ ও পাসওয়ার্ড দিয়ে ‘সাইন আপ’ করুন। যদি ওয়েবসাইটে আগেই এ্যাকাউন্ট খোলা থাকে তাহলে সেই মোবাইল নম্বর ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগ-ইন করুন। তৃতীয় ধাপ : চঁৎপযধংব ট্যাবে ক্লিক করুন। এবার ঋৎড়স ঝঃধঃরড়হ ট্যাব থেকে যে স্টেশন থেকে ট্রেনে ভ্রমণ করতে চান তা নির্বাচন করুন। ঞড় ঝঃধঃরড়হ ট্যাব থেকে যে স্টেশনে যেতে চান তা নির্বাচন করুন। ঔড়ঁৎহবু উধঃব থেকে ভ্রমণের তারিখ নির্বাচন করুন। এরপর ঝবধৎপয ঞৎধরহ এ ক্লিক করুন। চতুর্থ ধাপ : এখানে আপনার গন্তব্যের সব ট্রেনের তালিকা দেখতে পাবেন। তালিকা থেকে পছন্দের ট্রেনের আসন, টিকেট সংখ্যা, পছন্দের সিট (যদি থাকে) নির্বাচন করুন। পঞ্চম ধাপ : সবকিছু দেখে চধু ঘড়ি ট্যাবে ক্লিক করুন। বাংলাদেশের যে কোন ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড, এমেক্স কার্ড বা বিকাশ দিয়ে নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে টিকেট বুঝে নিন। ই-মেইল থেকে টিকেটের প্রিন্ট নিয়ে নিন। এই প্রিন্ট কপি দিয়েই ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারবেন। চাইলে নির্ধারিত স্টেশন থেকে প্রিন্ট কপি দিয়ে ট্রেনের প্রিন্টেট টিকেটও সংগ্রহ করে ভ্রমণ করতে পারবেন। এ বছর রোজা শুরু হয়েছে গত ৭ মে থেকে। আর আগামী ১ জুন শনিবার দিবাগত রাতে পালিত হবে শব-ই কদর। ২০১৯ সালের বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী, রোজা ২৯টি ধরে ৪-৬ জুন ঈদ-উল-ফিতরের ছুটি নির্ধারিত আছে। রোজা ৩০ হলে ঈদ হবে ৬ জুন, সে ক্ষেত্রে ৭ জুনও ঈদের ছুটি থাকবে। বাংলাদেশ এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি বলছে, আগামী পাঁচ জুন ঈদ হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ৫ জুন ঈদ হলে তিন দিনের ঈদের ছুটির সঙ্গে দুই দিনের সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে ৪ থেকে ৮ জুন টানা পাঁচদিন ছুটি পাওয়া যাবে। ৪ জুন ঈদের ছুটি শুরুর আগে ২ জুন থাকবে শব-ই কদরের ছুটি। এরপর ৩ জুন শুধু অফিস খোলা। প্রধানমন্ত্রী নির্বাহী আদেশে ৩ জুন ছুটি ঘোষণা করলে টানা নয়দিনের ছুটি মিলবে সরকারী চাকরিদের। তবে ছুটি শুরুর আগেই ঘরে ফেরা নিয়ে বাড়তি টেনশন আছে সবার মধ্যেই। অনেকে জানিয়েছেন, শেষ মুহূর্তের ঝামেলা এড়াতে ১৫ রোজার পরেই পরিবার-পরিজন বাড়িতে পাঠানো শুরু হবে।
×