বিশেষ প্রতিনিধি ॥ ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’র আঘাতপরবর্তী দুর্যোগ মোকাবেলায় কেন্দ্রীয় সমন্বয় টিম ও বিভাগীয় টিম গঠন করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির মনিটরিং টিমের ১৬ সদস্যের সর্বক্ষণিক ফণীর তান্ডবে সৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। শুক্রবার রাজধানীর ধানম-িতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সম্পাদকমন্ডলীর এক জরুরী সভায় ঘূর্ণিঝড় ফণীর দুর্যোগ মোকাবেলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ ও করণীয় গ্রহণ করে দলটি।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ ভারতের ওড়িশায় আঘাত হেনেছে। বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সময় এর বাতাসের গতি অনেকটাই কমে যাবে। তাই ফণী নিয়ে বেশি আতঙ্কিত ও উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করছেন। প্রশাসন ও দলের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিচ্ছেন তিনি।
হানিফ বলেন, সরকার ‘ফণী’ মোকাবেলায় সবধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। তাই এ নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে সবাই নিশ্চিন্তে থাকুন। অনুরোধ শুধু একটাই, দুর্যোগকবলিত এলাকার মানুষ যেন সর্বোচ্চ সতর্কতার পাশাপাশি ঝড় শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যান। এক্ষেত্রে কোন অবহেলা করা যাবে না।
‘ফণীর দুর্যোগ মোকাবেলায় সরকারের কোন প্রস্তুতি নেই’ বিএনপি নেতাদের এমন বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, সরকারী ও দলীয় প্রস্তুতির কথা জানিয়েছেন তারা। এসব প্রস্তুতি কী বিএনপি নিয়েছে? এরা উন্মাদের মতো পাগলের প্রলাপ বকা ছাড়া কিছুই করে না। তারা মানুষের দুর্যোগকে কেন্দ্র করে নোংরা রাজনীতি করার চেষ্টা করছে। তাদের প্রতি আহ্বান জানাই, মানুষের বিপদের সময় এই নোংরা রাজনীতি বন্ধ করুন।
কেন্দ্রীয় ও বিভাগীয় কমিটি গঠন ॥ বৈঠকে ঘূর্ণিঝড়ের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ নেতাদের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির সদস্যরা হচ্ছেন- আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, ফখরুল ইসলাম মুন্সি, মতিয়া চৌধুরী, ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, এ কে এম এনামুল হক শামীম, ড. হাছান মাহমুদ, সুজিত রায় নন্দী, ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, ফরিদুন্নাহার লাইলী, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, মির্জা আজম ও এস এম কামাল হোসেন। এই কমিটি দলীয় সভাপতির ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে ঘূর্ণিঝড়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ও পরবর্তী সার্বিক পরিস্থিতি মনিটরিং করবে এবং সংশ্লিষ্টদের এ সংক্রান্ত দিক-নির্দেশনা দেবে।
এ সময় বৈঠকে তিনটি বিভাগীয় কমিটি গঠন করা হয়। যেগুলোর নেতৃত্বে থাকবেন দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকরা। এর মধ্যে খুলনা বিভাগে আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, বরিশালে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এবং চট্টগ্রামে এ কে এম এনামুল হক শামীম দায়িত্ব পালন করবেন। কোথাও ব্যাপকভাবে ক্ষয়ক্ষতি হলে কমিটির নেতারা তাৎক্ষণিকভাবে ওই সব এলাকায় গিয়ে দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।
এর আগেই দলের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ উপ-কমিটির পক্ষ থেকে আরেকটি মনিটরিং সেল গঠন করা হয়। উপ-কমিটির আহ্বায়ক ফখরুল ইসলাম মুন্সি এবং সদস্য সচিব সুজিত রায় নন্দীর নেতৃত্বে এই সেলের ১৬ সদস্য সার্বিক মনিটরিং করবেন। দুর্গত এলাকার আক্রান্ত মানুষ প্রাথমিকভাবে যোগাযোগ করলে তাদের সহায়তার জন্য সেল থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি ধানমন্ডি কার্যালয়ের টেলিফোন নম্বরগুলো সার্বিক তথ্য আদান-প্রদানের জন্য খোলা থাকবে। নম্বর দুটি হচ্ছে, ০২-৯৬৭৭৮৮১ এবং ০২-৯৬৭৭৮৮২। এছাড়া কার্যালয়ের ফ্যাক্স নম্বরেও (০২-৯৬৬৬৫৫০) কেউ চাইলে তথ্য পাঠাতে পারবেন।
বৈঠকে চিকিৎসক ও প্রয়োজনীয় ওষুধসহ একটি মেডিক্যাল টিম এবং শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানিসহ ত্রাণসামগ্রী প্রস্তুত রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যাতে তাৎক্ষণিক প্রয়োজন হলে দুর্গত এলাকাগুলোতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়া যায়।
সংবাদ সম্মেলনে দলীয় পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে মাহবুব-উল-আলম হানিফ আরও বলেন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানকসহ তিনি নিজেও বৃহস্পতিবার রাত থেকে দলের উপকূলীয় জেলা-উপজেলা সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক, দলীয় সংসদ সদস্য ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিভিন্ন নির্দেশ দিয়েছেন। তৃণমূলের এসব নেতাও প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন।
আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বলেন, দলীয়ভাবে উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার আগেই এলাকার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়স্থলে নিয়ে যাওয়ার পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এসব এলাকায় মাইকিং করে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উপকূলীয় জেলা-উপজেলার স্কুল-কলেজ প্রধানদের চাবি নিয়ে সার্বক্ষণিক নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর দুর্যোগে কোন এলাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে, সেসব এলাকার মানুষকেও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেয়া হবে। এছাড়া প্রতিটি এলাকায় প্রশাসন ও আওয়ামী লীগ নেতাদের সমন্বয়ে পরিস্থিতি মনিটরিং করা হচ্ছে। আশা করি, এসব পদক্ষেপের মাধ্যমে সবধরনের ক্ষয়-ক্ষতি এড়ানো যাবে।
মাহবুব-উল-আলম হানিফের সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ফখরুল ইসলাম মুন্সি, এ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ কে এম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা, এ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, সুজিত রায় নন্দী, দেলোয়ার হোসেন, ডাঃ শাম্মী আহমেদ, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মির্জা আজম, আখতারুজ্জামান, এস এম কামাল হোসেন, আমিরুল আলম মিলন, আনোয়ার হোসেন প্রমুখ।