ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ছায়ানটের বর্ষবরণে শুভবোধের বারতা

প্রকাশিত: ১০:৩০, ১৪ এপ্রিল ২০১৯

 ছায়ানটের বর্ষবরণে শুভবোধের  বারতা

মনোয়ার হোসেন ॥ সংস্কৃতির আশ্রয়ে স্বাধিকারের চেতনায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম বর্ষবরণের অনুষ্ঠানটি। শুরুটা হয়েছিল ১৯৬৭ সালে। পাকি সরকারের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রমনা বটমূলে ঘটেছিল বাঙালী জাতিসত্তার সুন্দরতম প্রকাশ। সেই থেকে প্রতিবছরই সুরে সুরে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নানামুখী বারতা ছড়িয়েছে নগরজীবনের নববর্ষের প্রভাতী অনুষ্ঠানটি। আজ রবিবার সকালে ছায়ানটের সূত্র ধরেই শুরু হবে রাজধানীবাসীর ১৪২৬ বঙ্গাব্দ উদ্যাপনের আনুষ্ঠানিকতা। এবার গানে গানে সামাজিক অনাচারের বিরুদ্ধে মানুষের মনে শুভবোধ জাগিয়ে তোলার কথা বলবে ছায়ানট। সেই সুবাদে ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠানটির বায়ান্নতম বর্ষবরণের প্রতিপাদ্য ‘অনাচারের বিরুদ্ধে জাগ্রত হোক শুভবোধ’। নববর্ষের প্রভাতী অনুষ্ঠানকে সফল করে তুলতে শনিবার সকাল থেকে রমনার অশ্বত্থতলায় হয়েছে মঞ্চ মহড়া। বিশাল বৃক্ষের লতায়-পাতায় আচ্ছাদিত মঞ্চে চারটি সারিতে বসে চূড়ান্ত মহড়া করেছে শতাধিক শিল্পী। বিদায়ী বছরের সমাপনী দিনের সকালে শেষবারের মতো নিখুঁতভাবে গানগুলোকে কণ্ঠে তুলে নিয়েছেন শিল্পীরা। সবাইকে নিয়ে চূড়ান্ত মহড়ার কাজটি সম্পন্ন করছিলেন প্রতিষ্ঠানটির সাধারণ সম্পাদক লাইসা আহমদ লিসা। সকাল সাড়ে দশটা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত চলেছে এই সর্বশেষ অনুশীলন। এবারের আয়োজন প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে লিসা বলেন, আমরা এবার মানবিক মূল্যবোধের কথা বলব। কারণ, এখন সমাজে প্রবলভাবে বিরাজ করছে অনাচার। মানুষের মাঝে ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে সহিংসতা। প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে শিক্ষার্থী থেকে গৃহবধূ। তুচ্ছ কারণে খুন হচ্ছে মানুষ। চালকের বোধহীনতায় প্রতিদিন প্রাণ হারাচ্ছে পথচারী। তাই গানে গানে থাকবে মানুষের মনে শুভবোধ জাগিয়ে তোলার প্রয়াস। কথোপকথনের মাঝেই সম্মেলক কণ্ঠে ভেসে বেড়ায় ‘হিংসায় উন্মত্ত পৃথ্বী, নিত্য নিঠুর দ্বন্দ্ব’ গানের সুরটি। আজ সোমবার নববর্ষের প্রভাতী অনুষ্ঠানের পঞ্চম গান হিসেবে পরিবেশিত হবে এই গান। বৈশাখী ভোরের আয়োজনে মানবিক বোধ জাগিয়ে তোলা এবং বাঙালীত্বের অহঙ্কারের বার্তাবহ এমন ১৩টি সম্মেলক গানের সঙ্গী হবে ১৩টি একক কণ্ঠের গান। প্রকৃতির স্নিগ্ধতা ও সৃষ্টির মাহাত্ম্য দিয়ে সূচনা হওয়া অনুষ্ঠানের পরের ভাগে থাকবে অনাচারকে প্রতিহত ও অশুভকে জয় করার জাগরণী সুরবাণী। গানগুলো নেয়া হয়েছে রবীন্দ্র, নজরুল, অতুলপ্রসাদ, দ্বিজেন্দ্রলাল, রজনীকান্ত , লালন শাহ্, সলিল চৌধুরী, মুকুন্দ দাস, অজয় ভট্টাচার্য, শাহ্ আবদুল করিম, কুটি মনসুর ও সলিল চৌধুরীর সুরসৃষ্টি থেকে। সঙ্গে থাকবে পাঠ ও আবৃত্তিতে দেশ, মানুষ ও মনুষ্যত্বকে ভালবাসার প্রত্যয়। গানগুলো গাইবেন ছায়ানটের শিক্ষার্থী শিল্পী ও শিক্ষকরা। ছায়ানটের আহ্বান অনুযায়ী রবীন্দ্র রচনা থেকে পরিবেশিত হবে দুটি আবৃত্তি। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় সকাল সোয়া ছয়টায় রাগ আলাপের আশ্রয়ে শুরু হবে অনুষ্ঠান। ত্রিতালে ললিত রাগ আলাপ পরিবেশন করবেন অসিত কুমার দে। এরপর সম্মেলক কণ্ঠে গীত হবে ‘মোরে ডাকি লয়ে যাও’। খায়রুল আনাম শাকিল শোনাবেন ‘প্রথম আলোয় লহ প্রণিপাত’। ফারজানা আক্তার পপির কণ্ঠে ঝরবে ‘আপনারে দিয়ে রচিলি রে’। লাইসা আহমদ লিসা শোনাবেন ‘হেরি অহরহ তোমারি বিরহ’। মহিউজ্জামান চৌধুরী গাইবেন ‘সর্ব খর্বতারে দহে তব ক্রোধদাহ’। তানিয়া মান্নান গাইবেন ‘এখনো গেল না আঁধার’। অনাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভাষ্যে অনেকগুলো কণ্ঠে এক স্বরে উচ্চারিত হবে ‘সকল কলুষ তামস হর’। রবীন্দ্রনাথের ‘প্রশ্ন’ কাব্য থেকে পাঠ করবেন ত্রপা মজুমদার। এরপর ছোটরা মিলিত কণ্ঠে গাইবে ‘আপনি অবশ হলি’। মোস্তাফিজুর রহমান শোনাবেন ‘একদিন যারা মেরেছিল..... দোহাই দিয়ে’। খুদে শিল্পীদের কণ্ঠগুলো এক হয়ে শোনাবে ‘ভাইয়ের দোরে ভাই কেঁদে যায়’। ছোট ও বড়দের সমবেত প্রয়াসে গীত হবে ‘সংঘ শরণ তীর্থযাত্রা’। সুমন মজুমদার শোনাবেন ‘ঐ মহাসিন্ধুর ওপার হতে’। নাহিয়ান দূরদানা শুচি গাইবেন ‘স্বদেশ আমার! জানি না তোমার’। সম্প্রীতির আহ্বানে সঞ্জয় কবিরাজ গাইবেন ‘গঙ্গা-সিন্ধু-নর্মদা’। এরপর বড়দের দল পরিবেশন করবেন ‘আনো আনো অমৃত বারি’। ছোটরা ঠোঁট মেলাবে ‘তুমি বাহির হতে’ গানের সুরে। বিজন চন্দ্র মিস্ত্রি শোনাবেন ‘আমায় রাখতে যদি আপন ঘরে’। ‘বঙ্গ আমার, জননী আমার’ শিরোনামের সঙ্গীত পরিবেশন করবেন প্রমীলা ভট্টাচার্য। ছোট ও বড়দের সম্মেলক সুরে গাওয়া হবে ‘আয়রে বাঙ্গালী আয় সেজে আয়’। এ সুর থামতেই কবিতা আবৃত্তি করবেন জহিরুল হক খান। শ্রোতার অন্তর প্রফুল্ল করা শাহ আবদুল করিমের ‘কোন মেস্তরি নাও বানাইলো’ গানটি একসঙ্গে গাইবে ছোট ও বড়দের দল। শিশু শিল্পীরা সমবেত সুরে শোনাবে ‘এমন মানব জনম আর কি হবে’। অমানবিকতার পথ পরিহারের বার্তায় বিমান চন্দ্র বিশ্বাস গাইবেন ‘হিংসা আর নিন্দা ছাড়ো’। এরপর গীত হবে সম্মেলক সঙ্গীত ‘ও মোদের দেশবাসীরে আয়রে’।
×