ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেয়ার কিনছেন বিদেশীরা

প্রকাশিত: ০৯:২৮, ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

শেয়ার কিনছেন বিদেশীরা

অপূর্ব কুমার ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শেয়ারবাজারে সূচকে হাওয়া লেগেছে। দেশী-বিদেশী সব ধরনের বিনিয়োগ বেড়েছে। প্রধান বাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক লেনদেনও হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। সুষ্ঠুভাবে ভোট শেষ হওয়া এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের কারণে শেয়ারবাজারে ফিরতে শুরু করেছে বিদেশী বিনিয়োগ। তাদের শেয়ার কেনার তুলনায় বিক্রি বেড়েছে কমেছে। ফলে নিট বিনিয়োগ বেড়েছে। অথচ গত কয়েক মাসেও ঠিক তার উল্টো চিত্র ছিল। ডিএসইর তথ্যানুসারে, গত জানুয়ারি মাসে ডিএসইতে বিদেশী পোর্টফলিতে মোট ৪৯৫ কোটি ১৯ লাখ ৭৭ হাজার টাকার শেয়ার কেনার আদেশ কার্যকর হয়েছে। এর বিপরীতে বিক্রি হয়েছে মোট ৩১৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার। অর্থাৎ নিট বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়ায় ১৭৫ কোটি টাকা। পুরো মাসে বিদেশীরা মোট ৮১৫ কোটি টাকার শেয়ার কেনা-বেচা করেছেন। ঢাকা ব্রোকার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও ডিএসইর সাবেক পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ার ইতিবাচক প্রভাব শেয়ারবাজারে পড়েছে। নির্বাচন নিয়ে দেশী-বিদেশীদের মধ্যে যে শঙ্কা ও উৎকণ্ঠা ছিল এখন আর তা নেই। তাই দেশী-বিদেশী সব ধরনের বিনিয়োগ বেড়েছে। শেয়ারবাজার নিয়ে সবার মাঝেও ইতিবাচক মনোভাব ফিরে এসেছে। ভবিষ্যতে বিদেশী বিনিয়োগ আরও বাড়বে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন। শাকিল রিজভী বলেন, নির্বাচনে পরই মতিঝিলে প্রাণ চাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। দেশের মানুষ উন্নয়নের অংশীদার হতেই শেয়ারবাজারের সঙ্গে সম্পৃক্ত হচ্ছেন। ডিএসইর বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে বিদেশীদের শেয়ার কেনার পরিমাণ ছিল ২৪৬ কোটি ৯ লাখ টাকা। এর বিপরীতে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩৪৭ কোটি ৬২ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১০১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা তারা বাজার থেকে তুলে নিয়েছিলেন। নবেম্বর মাসে শেয়ার কেনার পরিমাণ ছিল ৩২৩ কোটি টাকা। এর বিপরীতে ৩৪৬ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেছিলেন তারা। বাজার থেকে প্রত্যাহার করা হয়েছিল ২২ কোটি ৫০ লাখ টাকা। অক্টোবরের ২৮২ কোটি টাকার শেয়ার কেনার বিপরীতে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৮৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ ওই মাসে সবচেয়ে বেশি ২০২ কোটি টাকা বাজার থেকে প্রত্যাহার করেন তারা। আগের প্রথম ৯ মাসে বিদেশীরা ৩ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার কিনেছে। আর বিক্রি করেছে ৩ হাজার ৯২২ কোটি টাকার শেয়ার। ফলে আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগের নেট বিনিয়োগ ২৬৭ কোটি টাকা নেতিবাচক ছিল। এছাড়াও আলোচ্য সময়ে আগের বছরের একই সময়ের চেয়েও বিনিয়োগ কমেছে। অর্থনীতিবিদরা ধারণা করছেন, আস্থা সঙ্কটে বিদেশীদের বিনিয়োগ কমতে পারে। ডিএসইর তথ্য অনুসারে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিদেশীরা ৭ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেছে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকার কিনেছে। আর বিক্রি করেছে ৩ হাজার ৯২২ কোটি টাকার শেয়ার। ফলে আলোচ্য সময়ে বিনিয়োগের নেট পজিশন ২৬৭ কোটি টাকা নেতিবাচক। এর আগের বছর অর্থাৎ ২০১৭ সালের প্রথম ৯ মাসে বিদেশীরা ৮ হাজার ৪২৭ কোটি টাকার শেয়ার লেনদেন করেছিল। এ সময়ে ৫ হাজার ১০১ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছিল। বিপরীতে বিক্রি করেছিল ৩ হাজার ৩২৬ টাকার শেয়ার। ফলে বিনিয়োগের নেট পজিশন ছিল ১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ ২০১৮ সালের প্রথম ৯ মাসে একদিকে যেমন বিনিয়োগের নেট পজিশন কমেছে, পাশাপাশি আগের বছরের একই সময়ের চেয়েও লেনদেন ও বিনিয়োগের নেট পজিশন কমেছিল। ডলার মূল্য বেড়ে যাওয়ার কারণেই বাজারে সবচেয়ে বড় নেতিবাচক প্রভাব পড়েছিল বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। তবে এখন সেই ধাক্কা অনেকটাই সামলেও নিয়েছে। জানা গেছে, গত বছরের বেশিরভাগ সময়ই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারে। এ কারণে ইউরোপ আমেরিকাসহ বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর শেয়ারবাজারে এক ধরনের বিপর্যয় নেমে এসেছিল। যদিও আস্তে আস্তে পরিস্থিতি কিছুটা কাটিয়ে উঠেছে। অন্যদিকে প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের কৌশলগত বিনিয়োগকারী হিসেবে সাংহাই ও সেনজেন স্টক এক্সচেঞ্জ যুক্ত হয়েছে। তাই চীনের বাজারের অস্থিরতা কিছুটা হলেও সেখানে পড়েছিল। এখন আর তেমনটি নেই। চীন ও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের শেয়ারবাজারও টাকার দর কমে যাওয়ার নেতিবাচক প্রভাব কাটিয়ে উঠতে পেরেছে। সেটিও বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের জন্য ইতিবাচক।
×