ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লার প্রতিপক্ষ খুলনা

ঢাকা-রংপুর শীর্ষে ওঠার লড়াই আজ

প্রকাশিত: ১০:১১, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

 ঢাকা-রংপুর শীর্ষে ওঠার লড়াই আজ

মিথুন আশরাফ ॥ কোন দল শীর্ষে উঠে যাবে আজ? বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে ঢাকা ডায়নামাইটস না রংপুর রাইডার্স পয়েন্ট তালিকায় এগিয়ে গিয়ে শীর্ষে উঠে যাবে? আজই এ প্রশ্নের নিষ্পত্তি হবে। দুই দলের মধ্যকারই ম্যাচ রয়েছে। চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ঢাকা-রংপুর ম্যাচ আছে। যে দল জিতবে তারাই এগিয়ে যাবে, পয়েন্ট তালিকায় সবার ওপরে উঠবে। দিনটিতে প্রথম ম্যাচে দুপুর দেড়টায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ও খুলনা টাইটান্সের মধ্যকারও ম্যাচ আছে। মাঝখানে খুব খারাপ সময় গেছে রংপুর রাইডার্সের। টানা তিন ম্যাচে হার হয়েছে। এবি ডি ভিলিয়ার্স দলে যোগ দেয়ার পরই ভিন্ন রংপুরকে দেখার মিলছে। ভিলিয়ার্স যে খুব আহামরি ব্যাটিং করছেন তা নয়। কিন্তু দলে তার যুক্ত হওয়াতেই যেন রংপুর শিবির অন্যরকমভাবে চাঙ্গা হয়ে উঠেছে। টানা তিন জয় পেয়েছে রংপুর। শেষ ম্যাচটিতে তো এমনই ব্যাটিং করেছেন দলের ব্যাটসম্যানরা, ইংল্যান্ডের এ্যালেক্স হেলস ও দক্ষিণ আফ্রিকার রাইলি রুশো সেঞ্চুরি করেছেন। এক ম্যাচের এক ইনিংসেই প্রথমবারের মতো বিপিএলে দুই সেঞ্চুরির দেখা মিলেছে। রংপুরও ২৩৯ রান করেছে। যা বিপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় স্কোর। রংপুর যেখানে টানা তিন জয় পেয়েছে, ঢাকা হঠাৎ করে বিপদে পড়তে শুরু করেছে। শেষ দুই ম্যাচেই হেরেছে দলটি। অথচ শুরুতে টানা চার ম্যাচে জিতেছিল ঢাকা। অবশ্য লীগে ঢাকা ও রংপুরের মধ্যকার প্রথম ম্যাচে ঢাকাই জয় তুলে নিয়েছে। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচ হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত উত্তেজনাকর ম্যাচে ২ রানে জিতে ঢাকা। এবার রংপুরের প্রতিশোধ নেয়ারও ম্যাচ এটি। এবার কী হবে? পয়েন্ট তালিকায় এ মুহূর্তে ঢাকাই আছে রংপুরের ওপরে। ঢাকা দ্বিতীয় স্থানে আছে। রংপুর আছে তৃতীয় স্থানে। দুই দলেরই সমান ১০ পয়েন্ট করে আছে। ঢাকা ৮ ম্যাচ খেলে ৫ জয় পেয়েছে। রংপুর ৯ ম্যাচ খেলে ৫ জয় পেয়েছে। দুই দলেরই ‘প্লে-অফ’ খেলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হয়ে আছে। যে দল আজ জিতবে সেই দল পয়েন্ট তালিকাতে ওপরে থাকবে। শুধু পয়েন্ট তালিকাতেই ওপরে থাকবে না, চিটাগং ভাইকিংসকে (৯ ম্যাচে ৬ জয়ে ১২ পয়েন্ট) শীর্ষস্থান থেকে টেনে নামাবে। ঢাকা ও রংপুরের মধ্যে যে দল জিতবে তাদেরই ১২ পয়েন্ট হবে। কিন্তু রানরেটে চিটাগংয়ের চেয়ে ভাল অবস্থায় থাকায় শীর্ষস্থান দখল করবে। সঙ্গে ‘প্লে-অফ’ খেলায় আর কোন বাধা নাও থাকতে পারে। এমন ম্যাচের আগে দুই দলই নিজেদের সেরা দল নামানো নিয়ে ভাবছে। রংপুরতো ব্যাটিংয়ে এমনই শক্তিশালী হয়ে উঠেছে, শুরুতেই আছেন ক্রিস গেইল। এখন পর্যন্ত বিশাল বড় কোন ইনিংস খেলতে পারেননি। দল গেইলের দানবীয় ইনিংস দেখার অপেক্ষায় আছে। এরপর হেলস রয়েছেন। যিনি সর্বশেষ টানা দুই ম্যাচেই বড় ইনিংস খেলেছেন। সর্বশেষ ম্যাচটিতে তো ৪৮ বলে ১০০ রানের মারমুখী ইনিংস উপহার দেন। রাইলি রুশোতো প্রতিটি ম্যাচেই নিজেকে মেলে ধরছেন। সর্বশেষ ম্যাচে ৫১ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংস উপহার দেন। গেইল, হেলস ও রুশোর পরই ব্যাটিংয়ে আছেন এবি ডি ভিলিয়ার্স। যিনি যে কোন মুহূর্তে বিধ্বংসী রূপে দাঁড় হতে পারেন। বিশ্বের শক্তিশালী দলেও শুরুর দিকে এমন ব্যাটিং লাইনআপ নেই। রংপুরের তা আছে। এরপর মোহাম্মদ মিঠুন, নাহিদুল ইসলাম, ফরহাদ রেজা, মাশরাফি বিন মর্তুজাও রয়েছেন। বল হাতে মাশরাফিতো উড়ছেন। ফরহাদ রেজাও দুর্দান্ত বোলিং করছেন। নাজমুল ইসলাম অপুর ঘূর্ণি প্রতিপক্ষকে যে কোন সময়ই বিপাকে ফেলে দিতে সক্ষম। শফিউল ইসলামও নৈপুণ্যের মধ্যেই আছেন। ব্যাটিংয়ে বিদেশী ব্যাটসম্যানরা আর বোলিংয়ে দেশী বোলাররাই রংপুরের আসল শক্তি। এই শক্তি দিয়ে এখন ঢাকাকে হারানো গেলেই হলো। তাহলেই ঢাকাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে পারবে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। ঢাকা কী তা হতে দেবে? ঢাকা দলটি যতই শেষ দুই ম্যাচে হারুক, যে কোন মুহূর্তে দলটি জয়ের ধারায় ফিরতে সক্ষম। হযরতুল্লাহ জাজাই হঠাৎ করেই ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখাতে পারছেন না। তাতেই ঢাকা ব্যাটিংয়ে বিপত্তিতে পড়ছে। তবে রংপুরের বিপক্ষে ম্যাচে জাজাই খেললে যে ব্যাটিং ফর্মে ফিরবেন না তা কে বলতে পারে। সুনীল নারাইনের কাছ থেকেও সেই রকম কোন ইনিংস মিলছে না। রনি তালুকদার, দারভিশ রাসুলিও নিজেকে মেলে ধরতে পারছেন না। শুধু সাকিব আল হাসান ও আন্দ্রে রাসেলই জৌলুস ছড়াতে পারছেন। বাকিদের সঙ্গে শুভাগত হোম চৌধুরী, নুরুল হাসান সোহানও যদি ব্যাটিং দ্যুতি ছড়াতে পারেন তাহলে আবার জয়ের ধারায় ফিরতে পারে ঢাকা। বল হাতে অবশ্য ঢাকা সবসময়ই শক্তি দেখিয়ে এসেছে। রাসেল, সাকিব, নারাইন, রুবেলরা বল হাতে নৈপুণ্য দেখিয়েই চলেছেন। শুধু ব্যাটিংটা সমস্যা হচ্ছে। আর তাই হারও হচ্ছে। রংপুরের বিপক্ষে যদি ব্যাটিংটা ভাল করতে পারেন ঢাকার ব্যাটসম্যানরা, তাহলে জেতা সম্ভব। জিতলে রংপুর যে এখন রানরেটে ঢাকার পেছনে আছে, তখন পয়েন্টেও পিছনে পড়ে যাবে। ঢাকা ও রংপুরের মধ্যকার যে দলই হারবে তাতে কুমিল্লার লাভ হতে পারে। যদি কুমিল্লা আজ খুলনাকে হারিয়ে দিতে পারে তাহলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে। কুমিল্লাও ১০ পয়েন্ট পেয়েছে। ৮ ম্যাচে ৫ জয়ে ১০ পয়েন্ট পেয়েছে। খুলনাকে যদি আজ কুমিল্লা হারায়, ঢাকা ও রংপুরের মধ্যে যে দল হারবে; তারা কুমিল্লারও নিচে চলে যাবে। কুমিল্লা এগিয়ে যাবে। কিন্তু রানরেটে পিছিয়ে থাকার জন্য শীর্ষস্থানে যেতে পারবে না কুমিল্লা। খুলনার বিপক্ষে খেলা কুমিল্লার। যে দলটি বিধ্বস্ত হয়ে আছে। লীগ থেকে সবার আগে বিদায় নিয়েছে। এখন সামনে দুটি ম্যাচে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের খুলনা জিতে স্বস্তি নিয়ে লীগ শেষ করতে চায়। কিন্তু কুমিল্লা কী সেই সুযোগ দেবে? তামিম ইকবাল, এনামুল হক বিজয়, ইমরুল কায়েস, শহীদ আফ্রিদি, থিসারা পেরেরা, লিয়াম ডসন, জিয়াউর রহমানদের নিয়ে গড়া দল কি সেই সুযোগ খুলনাকে দেবে? লীগে দুই দলের প্রথম লড়াইয়েওতো কুমিল্লাই জয় পেয়েছিল। কুমিল্লা জিতলে ‘ প্লে-অফে’ খেলাও প্রায় নিশ্চিত করে ফেলবে। এমন সুযোগ কাজে লাগাতে চাইবে কুমিল্লা। খুলনাকে হারাতে পারলে আবার পয়েন্ট তালিকাতেও মজবুত স্থান গড়তে পারবে। তবে দিনের প্রথম ম্যাচটির চেয়ে দ্বিতীয় ম্যাচটির দিকেই সবার দৃষ্টি আছে। দুই শক্তিধর দলের মধ্যে যে লড়াই। সেই সঙ্গে যে দল জিতবে, তারাই যে শীর্ষস্থান দখল করবে। ঢাকা ও রংপুরের মধ্যকার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে ওঠার লড়াইটির দিকেই তাই সবার নজর থাকছে।
×