ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে কিছু কোচিং সেন্টার খোলা

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ২৮ জানুয়ারি ২০১৯

 সরকারী নির্দেশ উপেক্ষা করে কিছু কোচিং সেন্টার খোলা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আসন্ন এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষাকে নির্বিঘ্ন ও শান্তিপূর্ণ করতে রবিবার থেকেই কার্যকর করা হয়েছে সারাদেশের কোচিং সেন্টার বন্ধের আদেশ। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশে পরীক্ষা চলাকালীন আগামী এক মাসের জন্য কোচিং বন্ধ করার পর বিষয়টি মনিটরিং করছে পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা কমিটি। কোচিং সেন্টারের ওপর নজরদারি বাড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশও দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এদিকে সরকারী আদেশ উপেক্ষা করে রাজধানীর কিছু কোচিং সেন্টার গোপনে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে বলছে তথ্য মিলেছে। এর আগে গত ২০ জানুয়ারি পরীক্ষা গ্রহণ সংক্রান্ত আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকের পর শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, পরীক্ষা শুরুর সাত দিন আগ থেকে শেষ পর্যন্ত (এক মাস) দেশের সকল কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখা হবে। বলেন, এবার ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হচ্ছে পরীক্ষা। পরীক্ষায় অংশ নেবে ২৫ লাখ ৭৩ হাজার ৮৫১ জন পরীক্ষার্থী। বিগত বছরের ন্যায় এবারও পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট আগে পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই পরীক্ষা কক্ষে নির্ধারিত আসনে বসতে হবে জানিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, যদি বিশেষ কোন কারণে কারও দেরি হয় সেই ক্ষেত্রে দেরির কারণ ও পরীক্ষার্থীর নাম ঠিকানা লিখে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে হবে। তবে এবার প্রত্যেকটি কেন্দ্রে প্রশ্নপত্র ফাঁস রোধে প্রশ্নপত্র বক্সের এ্যালুমিনিয়ামের সিলগালা করা হবে। কে সেটি খুলে নেয় এটি নিশ্চিত করতেই এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দীপু মনি বলেন, পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে জারি থাকবে ১৪৪ ধারা। প্রশ্নপত্র ফাঁস নিয়ে গুজব রটনাকারী শনাক্ত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এবারও পরীক্ষার কেন্দ্রে কেউ মোবাইল ফোন নিতে পারবেন না। শুধু কেন্দ্রসচিব সাধারণ মানের একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। পরীক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নেই, এমন কেউ মোবাইল ফোন নিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। শিক্ষামন্ত্রীর ঘোষণা রবিবার থেকে কার্যকর হয়েছে কোচিং সেন্টারে। রাজধানীতে অধিকাংশ কোচিং সেন্টার রবিবার সকাল থেকেই বন্ধ ছিল। তবে সরকারী সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করেও রাজধানীর কতিপয় কোচিং সেন্টার গোপনে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। ঢাকার বাইরেও বিভিন্ন স্থানে কোচিং চালু রাখার তথ্য এসেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও শিক্ষা বোর্ডের হাতে। প্রথম দিন ঢাকা, ময়মনসিংহ, রংপুর, খুলনা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কোচিং সেন্টার খোলা ছিল। রাজধানীর ফার্মগেট ও মোহাম্মদপুর এলাকার প্রত্যাশা কোচিং সেন্টারসহ বেশকিছু কোচিং সেন্টার খোলা রাখা হয়েছে বলেও অভিযোগ এসেছে বোর্ডের কর্মকর্তাদের কাছে। তবে কোচিং কর্তৃপক্ষ বলছেন, তারা নিয়ম মেনে কোচিং বন্ধ রাখছেন। পাবলিক পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা গেল কয়েক বছর ধরেই আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। এ নিয়ে খোদ প্রশাসনকেও নানা সময়ে পড়তে হয়েছে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে। পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার কারণে ২৭ জানুয়ারি থেকে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গতবছরও এসএসসি পরীক্ষার তিন দিন আগ থেকে পরীক্ষা শেষ হওয়া পর্যন্ত সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছিল সরকার। আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি হবে তত্ত্বীয় পরীক্ষা। আর ২৬ ফেব্রুয়ারি সঙ্গীত বিষয়ের এবং ২৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ১২ মার্চের মধ্যে অন্য বিষয়ের ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে। এবারও বহু নির্বাচনী (এমসিকিউ) অংশের উত্তর আগে দিতে হবে। পরে নেওয়া হবে সৃজনশীল/রচনামূলক অংশের পরীক্ষা। এদিকে কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার বিষয়ে কোচিং সেন্টার মালিকদের সংগঠন বলছে, তারা চিঠি দিয়ে সকলকে সরকারী আদেশ মেনে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। এ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কোচিং সেন্টারের জন্য আলাদা নীতিমালা করারও দাবি জানিয়েছেন সংগঠনের নেতারা। এ্যাসোসিয়েশন ফর স্যাডো এডুকেশন অব বাংলাদেশ নামের এ সংগঠনের যুগ্ম আহ্বায়ক ও উদ্ভাস কোচিং সেন্টারের পরিচালক মাহমুদুল হাসান সোহাগ বলছিলেন, সরকারী আদেশ অনুসারে কোচিং বন্ধ রাখতে আমরা সদস্যদের চিঠি দিয়েছি। তার পরেও অনেকে কোচিং বন্ধ করেননি-এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, হতে পারে। কারণ সকলে আমাদের সদস্য নয়। সদস্য না হওয়ার কারণে সবার ওপরে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। এ্যাসোসিয়েশনের এ নেতা বলেন, আমরা চাই সরকার একটি নীতিমালা করুক। যাতে নিয়ম মেনে সকলে কাজ করেন। এদিকে শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে প্রথমবারের মতো এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল কাগজে বাঁধিয়ে প্রশ্নপত্র পাঠানোর কাজ করছেন তারা। । আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় সাব কমিটির সভাপতি এবং ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেছেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসরোধে পুরোনো সিদ্ধান্তগুলোর পাশাপাশি এবার এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল কাগজে বাঁধিয়ে প্রশ্নপত্র পাঠানো ও নিরাপত্তা স্টিকারযুক্ত খাম ব্যবহার করা হবে। ট্রেজারির বাইরে কোথাও প্রশ্নপত্র না রাখার (আগে ভোল্টেও রাখা হতো) সিদ্ধান্ত হয়েছে। বোর্ড কর্মকর্তারা বলছেন, এবার বিজি প্রেস থেকে ছাপানো প্রশ্নপত্র পাঠানোর সময় বাদামি রঙের প্যাকেটের বদলে এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপারে বাঁধিয়ে পাঠানোর হবে। এবার নিরাপত্তা খামের পাশাপাশি নতুন ওই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগে বিজি প্রেস থেকে সিলগালা করে ট্রেজারিতে পাঠানো বাদামি রঙের প্যাকেটটি পরীক্ষার কেন্দ্রে পাঠানোর সময় অসাধু চক্র ব্লেড দিয়ে কেটে প্রশ্নপত্র বের করে ছবি তুলে নিত। এরপর পুনরায় সেটি সিলগালা করে দিত। কিন্তু এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপার একবার কেটে ফেললে পুনরায় জোড়া লাগানো যাবে না। ইতিমধ্যে এ্যালুমিনিয়াম ফয়েল পেপারও কেনা হয়েছে।
×