ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস ‘মৌর্য’ প্রকাশিত

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৪ জানুয়ারি ২০১৯

ইতিহাসনির্ভর উপন্যাস ‘মৌর্য’ প্রকাশিত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ তেইশ শ’ বছর আগের কাহিনী। প্রথম মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত গ্রিক সম্রাট সেলুকাসের কন্যাকে বিয়ে করেছিলেন। এ বিয়ের সঙ্গে ইতিহাস এবং প্রেম দুই-ই যুক্ত। যেহেতু কোন ভারতীয়ের সঙ্গে কন্যার বিয়ে দেবেন না সেলুকাস, সেহেতু প্রথমে ঘরের শত্রু নন্দরাজ এবং পরে বাইরের শত্রু সেলুকাসকে যুদ্ধে পরাজিত করেন সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত। পরাজয়ের পর সেলুকাসের সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের একটি সন্ধিচুক্তি হয়। তাতে সেলুকাসের কন্যা কর্নেলিয়ার সঙ্গে চন্দ্রগুপ্তের বিয়ে, চন্দ্রগুপ্তের সেলুকাসকে পাঁচ শ’ যুদ্ধহস্তী প্রদান এবং দখলকৃত ভারতীয় এলাকাসমূহ মৌর্যদের হাতে তুলে দেয়ার শর্ত জুড়ে দেয়া হয়। সেলুকাস নিরুপায় হয়ে শর্ত মেনে নেন। ধ্রুপদী উপন্যাস ‘মৌর্য’তে ইতিহাসের সংশ্লেষ এটুকুই। এতে আছে বহু ঘটনা, নানা গল্প আর চমৎকার একটি কাহিনী। আছে বেশ কয়টি বৃহত চরিত্রের উপস্থাপনা। যেমন চন্দ্রগুপ্ত, সেলুকাস, কর্নেলিয়া (হেলেন), মেগাস্থিনিস, চাণক্য, আচার্য ভদ্রবাহু...। তারা রাজনীতি, প্রেম, কূটনীতি, কূটকৌশল এবং আধ্যাত্মিক শক্তির এমনসব বাস্তব এবং মানবীয় চরিত্রের প্রতিনিধিত্ব করেন, যা সর্বকালের রাষ্ট্র এবং সমাজের মধ্যেই বিদ্যমান। প্রায় দুই হাজার তিন শ’ বছর আগের কাহিনী নিয়ে ‘মৌর্য’ শিরোনামের এ উপন্যাসটি লিখেছেন কথাসাহিত্যিক আবুল কাসেম। বইটি প্রকাশ করেছে অন্যপ্রকাশ। জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘মৌর্য’ উপন্যাসের প্রকাশনা উৎসবের আয়োজন হয় বুধবার বিকেলে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি। জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে বইটি নিয়ে আলোচনা করেন শিক্ষাবিদ-কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম ও রবীন্দ্র বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক বিশ^জিৎ ঘোষ। স্বাগত বক্তব্য রাখেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। সঞ্চালনা করেন অন্যপ্রকাশের পরিচালক আবদুল্লাহ নাসের। প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডাঃ দীপু মনি বলেন, ইতিহাসের ঘটনা নিয়ে লেখা উপন্যাস। সাহিত্য নিয়ে বলবার ধৃষ্টতা আমার নেই। বইটির কলেবর দেখে ভাল লাগছে। পড়তে গিয়ে আমি কোথাও আটকালাম না। পড়া বন্ধ করতে পারলাম না। এই ধরনের সাহিত্য আমাদেরকে ইতিহাস জানবার সুযোগ করে দেয়। অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, ইতিহাস নির্ভর উপন্যাসে দুটি বিষয় থাকে। একটি সত্য ও একটি কল্পনা; এ দুটো ধরে এগোতে হয়। এজন্য গবেষণার প্রয়োাজন হয়, যেটি লেখক করেছেন। উপন্যাসে ইতিহাসের চরিত্রগুলো যথাযথভাবে তিনি তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন। এছাড়া পত্র সাহিত্যের জায়গাতেও বেশ সাবলীল ও সার্থক লেখক। কথোপকথনে তিনি একটা ছন্দ স্থাপন করেছেন ভাষার ভেতর দিয়ে। আর দারুণভাবে ছবি এঁকেছেন সেই ২৩০০ বছর আগেকার সময়ের। বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, উপন্যাসে শুধু একজন কথাশিল্পী নয় একজন গবেষকেরও মিলন ঘটেছে। কথা এবং গবেষণা না মিললে এমন উপন্যাস সৃষ্টি করা যায় না। উপন্যাসে ইতিহাসের সঙ্গে কল্পনার এক অনন্য মিলে লেখক অনেক দূর এগিয়ে গেছেন। সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বলেন, গ্রন্থাকার আবুল কাসেম তার সবগুলো উপন্যাসই লিখেছেন ইতিহাসকে আশ্রয় করে। তিনি ফিরে গেছেন ২৩ শ’ বছর আগে। সেই সময়ের জীবনযাত্রা সম্পর্কে আমরা খুব বেশি জ্ঞাত নই। লেখক এতে ইতিহাসের উপাদান নিয়েছেন আবার কল্পনা দিয়ে সেই সময়ের ছবি এঁকেছেন। উপন্যাসের লেখক আবুল কাসেম বলেন, এ উপন্যাসে সে-সময় ও লেখকের বর্তমানকালের দৃষ্টিভঙ্গির মেলবন্ধন পাঠককে আকর্ষণ করবে। সমৃদ্ধ প্রাচীন ভারত ও প্রাচীন গ্রীসকে একসঙ্গে পাওয়া যাবে বৃহত কলেবরের এ উপন্যাসে। ইতিহাস নির্ভর এক প্রেমাখ্যান। যাতে প্রথম মৌর্য স¤্রাট চন্দ্রগুপ্তের সঙ্গে গ্রিক সম্রাট সেলুকাসের কন্যা কর্নেলিয়ার প্রেমের বয়ান আছে। অনুষ্ঠানের শুরুতে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয় সদ্য প্রয়াত মুক্তিযোদ্ধা, সুরস্রষ্টা ও গীতিকবি আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলকে। পরে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অন্য প্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম।
×