ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

মনিরুল ইসলাম ও সুজান কলিন্স পেলেন জয়নুল সম্মাননা

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮

মনিরুল ইসলাম ও সুজান কলিন্স পেলেন জয়নুল সম্মাননা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কংক্রিটের এই শহরে যেন এক চিলতে সুন্দরের প্রতিচ্ছবি শাহবাগের চারুকলা অনুষদ। পৌষের শীতল সকালে সেই সবুজ-শ্যামল আঙিনা হয়ে উঠেছিল আরও শোভাময়। উপলক্ষ ছিল অনুষদের প্রতিষ্ঠাতা শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিনের জন্মদিন। সেই জন্মদিন উপলক্ষে পাঁচ দিনব্যাপী জয়নুল উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠান ছিল শনিবার। সমাপনী অনুষ্ঠানে জয়নুল সম্মাননা প্রদান করা হলো বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের দুই কীর্তিমান চিত্রশিল্পীকে। বাংলাদেশের পক্ষে সম্মাননা পেয়েছেন স্পেন প্রবাসী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন শিল্পী মনিরুল ইসলাম। সম্মাননাপ্রাপ্ত অপর শিল্পী হলেন লন্ডনের স্লেড স্কুল অব ফাইন আর্টের পরিচালক সুজান কলিন্স। একই অনুষ্ঠানে জয়নুল স্বর্ণপদক পেয়েছেন অনুষদের ড্রইং এ্যান্ড পেইন্টিং চারুশিক্ষার্থী তরিকুল ইসলাম। অনুষদের বিভিন্ন বিভাগের চারুশিক্ষার্থীদের বার্ষিক শিল্পকর্ম প্রদর্শনী থেকে নির্বাচিত শিক্ষার্থীদের শিল্পসম্ভারে সাজানো প্রদর্শনী থেকে বিচারকদের রায়ে এই পুরস্কার জয় করেছেন তরিকুল। সকালে অনুষদ সংলগ্ন জয়নুল আবেদিনের সমাধিতে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণের মাধ্যমে শুরু হয় উৎসবের সমাপনী আনুষ্ঠানিকতা। শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন শেষে বাদ্য-বাজনার তালে চারুশিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এসে জড়ো হয় বকুলতলা মঞ্চে। সমাপনী অনুষ্ঠানের সূচনায় শিক্ষক ও শিল্পীরা কণ্ঠ মেলায় এক সুরে। সবাই মিলে গেয়ে শোনায় ‘আনন্দলোকে মঙ্গলালোকে বিরাজ সত্যসুন্দর’ এবং ‘ও আমার দেশের মাটি’। অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় আয়োজন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ আখতারুজ্জামান। অনুভূতি ব্যক্ত করেন জয়নুল সম্মাননাপ্রাপ্ত দুই শিল্পী মনিরুল ইসলাম ও সুজান কলিন্স। তাদের সম্মাননা স্মারক, উত্তরীয় ও সম্মাননাপত্র প্রদান করেন অতিথিরা। মনিরুল ইসলামের মানপত্র পাঠ করেন শিল্প-সমালোচক মইনুদ্দীন খালেদ। সুজান কলিন্সের মানপত্র পাঠ করেন লালারুখ সেলিম। অনুষ্ঠানে অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, অনুষদের শিক্ষক ও বরেণ্য শিল্পী রফিকুন নবী এবং জয়নুল আবেদিনের ছেলে প্রকৌশলী ময়নুল আবেদিন। জয়নুল স্বর্ণপদকজয়ী তরিকুল ইসলামের হাতে পুরস্কার তুলে দেন অনুষদের শিক্ষক মোহাম্মদ ইউনুস। অনুভূতি প্রকাশ করে মনিরুল ইসলাম বলেন, জীবনে অসংখ্য পুরস্কার পেলেও এই সম্মাননা আমার কাছে অনেক বড় প্রাপ্তি। আমার বিশাল কর্মজীবনের একটা অংশ কেটেছে এই চারুকলা অনুষদে। এখানকার গাছ, ফুল কিংবা লতা-পাতারাও জড়িয়ে আছে স্মৃতির অলিন্দে। সেই আঙিনায় জয়নুল নামাঙ্কিত পদকটি আমার কাছে অনেক বড় কিছু। এটার জন্য আমি কতটা উপযুক্ত সেটা আমি নিজেও জানি না। আবেগাপ্লুত সুজান কলিন্স বলেন, এই সম্মাননা বা পুরস্কার আমাকে উচ্ছ্বসিত করেছে। চারুকলা অনুষদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আর জয়নুল আবেদিনের মাধ্যমেই এই চারুকলা অনুষদের সঙ্গে স্লেড স্কুল অব ফাইন আর্টের সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। সেই সূত্র ধরেই উভয় প্রতিষ্ঠানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাসহ শিল্পচর্চার বিনিময় ঘটেছে। এসব কারণেই এই সম্মাননা আমার কাছে অনেক গুরুত্ববহ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোঃ আখতারুজ্জামান বলেন, ১৯৫৫ সালে জয়নুল আবেদিনের মাধ্যমে চারুকলা অনুষদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে স্লেড স্কুল অব ফাইন আর্টের। আজকে পৃথিবী বিখ্যাত শিল্পী সুজান কলিন্সের জয়নুল সম্মাননাপ্রাপ্তি সেই সম্পর্কেরই পরম্পরা। অন্যদিকে বাংলাদেশের অনবদ্য শিল্পকর্মের সৃষ্টিশীলতা স্পেনে পৌঁছে দিয়েছেন মনিরুল ইসলাম। দেশের চারুকলাকে তিনি উপস্থাপন করেছেন বিশ্বদরবারে। রফিকুন নবী বলেন, আমার দৃষ্টিতে এবারই জয়নুল উৎসবের সবচেয়ে বর্ণাঢ্য আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হলো। দুই শিল্পী প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই ডিসেম্বর মাসে মনিরুল ইসলামের বৃহস্পতি তুঙ্গে। পেয়েছেন স্পেনের রাষ্ট্রীয় সম্মাননা। অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমির ফেলোশিপ। আর লন্ডনের স্লেড স্কুল অব ফাইন আর্টেই সুজানের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয় ২০০৯ সালে। সেই থেকে বন্ধুত্ব। এই বন্ধুত্ব শুধু ব্যক্তিগত পর্যায়ে নয়, চারুকলা অনুষদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে স্লেড স্কুল অব ফাইন আর্টের। দুই অনুষদের শিক্ষা ও শিল্পচর্চার বিনিময় কর্মসূচী চালু রয়েছে। মুহাম্মদ সামাদ বলেন, এই চারুকলা অনুষদ এতটাই সুন্দর যে এখানে আসলে সেই কবিতাটির কথা মনে হয় ‘মরিতে চাহি না আমি সুন্দর ভুবনে’। যান্ত্রিক নগরে এই জায়গাটিকে যেন স্বর্গ মনে হয়। স্বাগত বক্তব্যে নিসার হোসেন বলেন, শুধুমাত্র শিল্পকীর্তির কারণে কাউকে জয়নুল সম্মাননা প্রদান করা হয় না। শিল্পচর্চার পাশাপাশি শিল্প-শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদান রাখা শিল্পীদেরই এই সম্মাননা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া হয়। প্রয়াত শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শেষ হয় অনুষ্ঠান। সকালে জয়নুলের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় ভাস্কর্য বিভাগ, মৃৎশিল্প বিভাগ, পেইন্টিং এ্যান্ড ড্রইং বিভাগ, শিল্পকলার ইতিহাস বিভাগ, গ্রাফিক্স ডিজাইন বিভাগসহ অনুষদের আটটি বিভাগ। এছাড়া সফিউদ্দীন প্রিন্ট মেকিং স্টুডিও, চারুশিল্পী সংসদসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানও শ্রদ্ধা জানায় শিল্পাচার্যের সমাধিতে।
×