ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপের আগে নিউজিল্যান্ড সফর ও আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

এবার চ্যালেঞ্জ বিদেশের মাটিতে

প্রকাশিত: ০৭:০২, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮

এবার চ্যালেঞ্জ বিদেশের মাটিতে

মোঃ মামুন রশীদ ॥ ঘরের মাঠে টানা দুটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। জিম্বাবুইয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজগুলোয় মূলত আগামী বিশ্বকাপের জন্য দলের একটি রূপরেখা তৈরির দিকে মনোযোগ ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি)। সেদিক থেকে দুই সিরিজেই সফল হয়েছে টাইগাররা। কিন্তু নিজেদের মাঠে দুর্বার দলটি, বিদেশের মাটিতে এখনও সে তুলনায় অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠতে পারেনি। আগামী ওয়ানডে বিশ্বকাপ ৩০ মে শুরু হবে ইংল্যান্ডের মাটিতে। প্রায় একই রকম কন্ডিশনে বিশ্বকাপের আগেই দুটি চ্যালেঞ্জ আছে বাংলাদেশ দলের জন্য। ফেব্রুয়ারিতে ৩ ওয়ানডে ও ৩ টেস্ট আছে নিউজিল্যান্ড সফরে। মার্চের শেষদিকে সফরটি শেষ করে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে মে মাসের শুরুতে ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপ প্রস্তুতির অংশ হিসেবে। যেখানে স্বাগতিক আয়ারল্যান্ড ছাড়াও আছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আপাতত এ দুটি ছাড়া কোন আন্তর্জাতিক ব্যস্ততা নেই বাংলাদেশ ক্রিকেটে। ক্রমাগত সাফল্য আসতে থাকা টাইগারদের জন্য এখন তাই বিদেশের মাটিতে চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। দেশের মাটিতে স্পিনবান্ধব উইকেটে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দারুণ সাফল্য পেলেও জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে একটি টেস্ট হেরে যায় বাংলাদেশ দল। তবে এরপর আর সফরকারীদের দাঁড়াতেই দেয়নি স্বাগতিকরা। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুইয়েকে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। এই ওয়ানডে সিরিজের দিকে বিশেষ দৃষ্টি ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেটের হর্তা-কর্তাদের। কারণ, অপরিহার্য দুই ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও তামিম ইকবাল ছিলেন অনুপস্থিত। সে কারণে বিশ্বকাপ উপলক্ষে নতুনদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারও সুযোগ এসেছিল। সাকিব, তামিমের অনুপস্থিতিতে নিজেদের ভালভাবেই প্রমাণ করেছেন ইমরুল কায়েস, সৌম্য সরকার, লিটন দাস ও মোহাম্মদ মিঠুন। দারুণ ব্যাটিং করে নিজেদের সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছেন। অবশ্য পরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেই সাকিব ফিরেছেন। ওয়ানডে সিরিজে ফিরে আসেন তামিমও। এই সিরিজেও ক্রিকেটারদের দিকে নজর ছিল বাংলাদেশ কোচ স্টিভ রোডস ও জাতীয় দলের নির্বাচকদের। কারণ বিশ্বকাপের জন্য একটি দল গঠনের রূপরেখা তৈরি করবেন তারা। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে দারুণ সফল হলেও ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে ইমরুল-লিটন ছিলেন ব্যর্থ। আর টি২০ সিরিজে শুধু লিটনই কিছুট আলো ছড়িয়েছেন। গত ৪/৫ বছর ধরে দেশের মাটিতে যেকোন প্রতিপক্ষের জন্য হুমকি বাংলাদেশ ঠিকই সিরিজ জিতেছে। আর এসব জয়ে মূলত ভূমিকা রেখেছেন স্পিনাররা। কিন্তু বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে খেলতে হবে গতিময় বাউন্সি উইকেটে। ইংল্যান্ডের আবহাওয়া ও পরিবেশ পেসারদের জন্যই সুবিধাজনক। সেই পেসাররা দুই সিরিজেই তেমন কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। কিন্তু নিউজিল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও ইংল্যান্ডে পরবর্তী তিনটি মিশনেই পেসারদের ওপর নির্ভর করতে হবে। এ তিনটি দেশেই স্পিনারদের ওপর আস্থা রাখলে নামবে বিপর্যয়। এ বিষয়ে অবশ্য পেস বোলিং কোচ কোর্টনি ওয়ালশ আগেই বলেছেন, ‘আমাদের দলে বেশ কয়েকজন বিশ্বমানের পেসার আছে। এখানে দেশের মাটিতে স্পিনারদের দিয়েই আমরা জিতে চলেছি। জয়টাই আসল ব্যাপার। যখন প্রয়োজন পড়বে আমাদের পেসাররাও এগিয়ে আসবে এবং পারফর্ম করবে।’ তবে ওয়ানডে ও টি২০ সিরিজেও বাংলাদেশের পেসাররা তেমন সুবিধা করতে পারেননি। অভিজ্ঞ রুবেল হোসেনের সেভাবে সুযোগই হয়নি। আর মুস্তাফিজুর রহমানের বোলিংও তেমন ধারালোভাবে ফুটে ওঠেনি। এমনকি তরুণ উদীয়মান আবু হায়দার রনিও খুব বেশি কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। সে কারণে দুঃশ্চিন্তাটা কমেনি। অথচ আসন্ন তিন মিশনে এই পেসারদের ওপরই ভরসা রাখতে হবে। ঘরের মাটিতে চেনা পরিবেশ ও উইকেটে ব্যাটসম্যানরা দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। তবে নিউজিল্যান্ডের গতিময় বাউন্সি উইকেট প্রথম চ্যালেঞ্জ হবে বাংলাদেশ দলের জন্য। আপাতত আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচ নেই। ক্রিকেটাররা জানুয়ারির শুরুতেই খেলবেন বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০ আসরে। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি বিপিএল শেষেই জাতীয় দলকে নিউজিল্যান্ড সফরে যেতে হবে। ৩ ওয়ানডের সিরিজ দিয়ে শুরু হবে সফর। ১৩ ফেব্রুয়ারি নেপিয়ারে প্রথম ওয়ানডে। ৩ টেস্ট দিয়ে এই সফর শেষ করবে বাংলাদেশ দল। যার সর্বশেষ টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে ১৬ মার্চ ক্রাইস্টচার্চে। এরপর মাঝে দীর্ঘ এক মাস বিরতি। বিশ্বকাপ প্রস্তুতি শুরু হবে তখনই। মে মাসের শুরুতেই আয়ারল্যান্ডে গিয়ে ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ দল। ৫ থেকে ১৭ মে অনুষ্ঠিতব্য সেই সিরিজে আরেকটি দল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরস্পরের সঙ্গে দুইবার করে খেলা। এই সিরিজ শেষেই ইংল্যান্ডে গিয়ে বিশ্বকাপ খেলার প্রস্তুতি শুরু করতে হবে। এই দীর্ঘ প্রক্রিয়ায় বিদেশের মাটিতে বড় চ্যালেঞ্জই অপেক্ষা করছে বাংলাদেশ দলের জন্য।
×