ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

এলাকাবাসীর চরম ভোগান্তি

২৬ কিমি সড়কের কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১ ডিসেম্বর ২০১৮

২৬ কিমি সড়কের কাজ চার বছরেও শেষ হয়নি

স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ ॥ এলজিইডির বহুল আলোচিত তারাকান্দা-ধোবাউড়া সড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ হয়নি গত চার বছরেও। ফলে তারাকান্দা, ফুলপুর ও ধোবাউড়া এই ৩টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের ভোগান্তিকে এখন ‘ভাগ্যের লিখন’ বলে মেনে নিতে হচ্ছে। এক ঘণ্টার পথ যেতে সময় লাগছে তিন ঘণ্টারও বেশি। সেই সঙ্গে বেড়েছে পরিবহনের ভাড়াও। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তির শিকার হচ্ছে প্রসূতি মা সহ রোগীদের। অথচ এ নিয়ে কোন মাথা ব্যথা নেই এলজিইডির স্থানীয় কর্তৃপক্ষসহ ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের। অভিযোগ উঠেছে-এই কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রভাবশালী বলে এলজিইডি ও স্থানীয় প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিতে পারছে না। যদিও এলজিইডির স্থানীয় নির্বাহী প্রকৌশলী ইসমত কিবরিয়া জানিয়েছেন, কাজে গাফিলতির কারণে ঠিকাদারের কার্যাদেশ বাতিলের প্রক্রিয়া চলছে। স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, তারাকান্দা থেকে ধোবাউড়া পর্যন্ত ৩৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে ২৬ কিলোমিটার সড়কের বেশিরভাগই ভাঙ্গাচোরা। এর মধ্যে বওলার সুতারপাড়, বারইপুখরিয়া, ভুষাগঞ্জ, হরিয়াগাই, টিউকান্দা ও কেন্দুয়া বাজারের ১৭ কিলোমিটার একেবারেই বেহাল। বেহাল সড়কজুড়ে ছোট বড় অসংখ্য খানাখন্দ। বর্ষায় এসব খানখন্দে পানি জমে পরিণত হচ্ছে মরণডোবায়। সড়কের বওলার সুতারপাড় এলাকার প্রায় ৫০০ মিটার এমনই বেহাল যে গত বর্ষায় প্রতিদিনই যাত্রীবাহী বাস ও পণ্যবাহী ট্রাক বিকল হয়েছে, ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। এ সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় এলাকাবাসীর ভোগান্তির সীমা থাকছে না। গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এলাকাবাসীকে এ রকম দুর্ভোগ মেনে নিতে হচ্ছে। অথচ তারাকান্দা ধোবাউড়া সড়কে তারাকান্দা ও ধোবাউড়া উপজেলাসহ ফুলপুর উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ এই সড়কটি ব্যবহার করে আসছে। তারাকান্দা-ফুলপুর ও ধোবাউড়া-হালুয়াঘাট নিয়ে গঠিত আসন দুটি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্যের দখলে। স্থানীয় সংসদ সদস্য শরীফ আহমদ ও জুয়েল আরেং কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেননি বলে অভিযোগ রয়েছে। বওলা বাজারের ক্ষুদ্র কাঁচামাল ব্যবসায়ী রফিকুল ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান সড়ক বেহাল কারণে মালামাল পরিবহনের ব্যয় বেড়ে গেছে। এক বস্তা কাঁচামাল পরিবহনের ভাড়া যেখানে ৮০ টাকা ছিল সেটি এখন বেড়ে ১৪০ টাকায় উঠেছে। কেবল তাই নয় ধোবাউড়া থেকে ময়মনসিংহ যেতে এক ঘণ্টার জায়গায় সময় লাগছে এখন তিন ঘণ্টা। বওলা বাজারে কৃষক হাসমত আলী (৬৫) জানালেন, সড়ক হচ্ছে গাড়ি ও মানুষ চলাচলের জন্য। অথচ এই সড়কে এখন গাড়ি ও মানুষ চলাচল দায় হয়ে পড়েছে। ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পথে রাস্তার ওপর প্রসবের নজির রয়েছে বলে দাবি এলাকাবাসীর। সড়কটির উন্নয়ন ও মেরামতের জন্য ময়মনসিংহের মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় কমিটির সভায় একাধিকবার উত্থাপনের পরও সমস্যার দৃশ্যমান কোন সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন ধোবাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হাজী মজনু মৃধা। তারাকান্দা ধোবাউড়ার ৩৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে বেহাল ১৭ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নে গত ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের প্রতিষ্ঠান নাওয়াল কনস্ট্রাকশন ও ফরিদপুরের হানিফ এন্টারপ্রাইজকে কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। কিন্তু এ সময় কোন কাজ হয়নি। চলতি সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ শেষ করার কথা ছিল। কাজটি পরিত্যক্ত নাকি বাতিল সেটিও স্পষ্ট নয় এলাকাবাসীর কাছে। সেকেন্ড রুরাল ট্রান্সপোর্ট ইমপ্রোভমেন্ট প্রজেক্ট-আরটিআইপি-২ প্রকল্পের আওতায় ময়মনসিংহের তারাকান্দা ধোবাউড়া সড়কের উন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ও সরকারের ১১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর আগে আরেক ঠিকাদার শাহজাহান আলীর কার্যাদেশ বাতিল করে এলজিইডির স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।
×