ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাজশাহীতে সম্প্রীতি সমাবেশ

একাত্তর ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দাঁড়ানোর আহ্বান

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১৩ নভেম্বর ২০১৮

একাত্তর ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দাঁড়ানোর আহ্বান

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে সম্প্রীতি সমাবেশে একাত্তর ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন বক্তারা। সোমবার বিকেলে মহানগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে বড় মসজিদের সামনে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আয়োজনে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহ্বায়ক অভিনেতা পীযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই ভূখ-ে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা এবং বঙ্গপোসাগরের কোলে কোলে যে জনগোষ্ঠীর বাস সেই জনপদের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে, সৌহার্দ্য, ভ্রাতৃত্ব ও ভালবাসার ইতিহাস ও ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্ত আমরা দেখেছি এই ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ওপর বার বার একটি কুচক্রি মহল, ষড়যন্ত্রকারী মহল আঘাত হানে। বঙ্গবন্ধু অসাম্প্রদায়িক চেতনা ধারণ করে এদেশের সকল মানুষকে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিয়েছিলেন এবং আমরা সেই মুক্তিযুদ্ধে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। সেখানে কে মুসলমান, কে হিন্দু, কে বৌদ্ধ, কে খ্রীস্টান সেটা আমরা বিচার করিনি। আমরা সমানভাবে নির্যাতিত ও নিপীড়িত হয়েছিলাম, প্রত্যেকে হাতে হাত রেখে, কাঁধে কাঁধ রেখে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সোনার বাংলাকে মুক্ত করেছিলাম, স্বাধীন করেছিলাম। তার মানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের দশর্নে যদি আমরা দাঁড়াই তাহলে আমাদের সম্প্রীতির বন্ধনে থাকতে হবেই, হবে। যে যেই দলের রাজনীতি করুক না কেন, একাত্তর ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শে দাঁড়াতে হবে। তা না করলে আপনার এই দেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। তিনি বলেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের আগে আমরা কিছু কিছু আশঙ্কা করছি যে, সম্প্রীতি বিনষ্টকারীরা, সাম্প্রদায়িক শক্তিরা বিগত দিনের নির্বাচনে যেমন করেছে, এই নির্বাচনেও তেমন পেছন থেকে ছোবল মারতে পারে। আসুন, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শে একসঙ্গে হই এবং হাজার বছরের ঐতিহ্যকে ধারণ করে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে জোটবন্ধভাবে আমরা এক সঙ্গে হব। পিযূষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, নতুন ভোটারদের বলতে চাই, বাংলাদেশের ইতিহাস যদি জানেন, মুক্তিযুদ্ধের ও বঙ্গবন্ধুর ইতিহাস যদি জানেন, তাহলে আপনাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে যারা নির্বাচন করবেন তাদের ভোট দিতে হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াস করে না, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও দর্শনকে ধ্বংস করতে চায়, তরুণ সমাজকে সঙ্গে নিয়ে সম্প্রীতি বাংলাদেশ তাদের রুখে দেবে। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ^াস করি, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করি, এই বাংলাদেশটা আমাদের। এই বাংলাদেশ রাজাকারের নয়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মানবতাবিরোধীদের নয়। প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপমহাদেশের প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস একটু জানলে আমাদের মন আরও পরিষ্কার হতে পারে। কারণ, আমরা একাত্তর সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে আলো জ¦ালাতে পেরেছি বটে, কিন্তু সেই আলো ঘরে ঘরে, বাড়িতে বাড়িতে, মানুষের হাতে হাতে জুড়িয়ে দিতে পারিনি। তা পারতে হলে এমন একটা সমাজ গড়া দরকার, যে সমাজে কোন নিরক্ষরতা থাকবে না, সম্পদের মোটামুটি সুষম বণ্টন থাকবে। অতিথির বক্তব্যে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা সংগ্রামের আগে যে স্বপ্নগুলো বাঙালীর মনের মধ্যে, চেতনার মধ্যে বপন করেছিলেন, তার মধ্যে একটি ছিল অসাম্প্রদায়িক চেতনা অর্থাৎ বাংলা নামক দেশটি সকল প্রকার সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প থেকে অনেক উপরে থাকবে। আমাদের সংবিধানে পরিষ্কারভাবে বলা আছে, রাষ্ট্র সকল নাগরিকের প্রতি সমান আচরণ করবে। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়ার জন্য নিরসলভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। তার সেই হাতকে শক্তিশালী করে আগামী দিনে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার স্বার্থে আরেকটিবার দলমত নির্বিশেষে সবাই মিলে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আনতে হবে। ভাষা সৈনিক আবুল হোসেন সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন। সমাবেশে ইসলাম, খ্রীস্টান, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রতিনিধিরা বক্তব্য দেন।
×