ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা সরব, পিছিয়ে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ১০ নভেম্বর ২০১৮

 নেত্রকোনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা সরব, পিছিয়ে বিএনপি

সঞ্জয় সরকার, নেত্রকোনা ॥ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপে নির্বাচনী প্রচারে মুখর হয়ে উঠেছে নেত্রকোনার পাঁচটি নির্বাচনী এলাকার রাজনীতি। কিন্তু নির্বাচনী মাঠে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা যতটা সরব, বিএনপির প্রার্থীরা ততটা নয়। ব্যানার-পোস্টারে থাকলেও গণসংযোগের ক্ষেত্রে বিএনপির প্রার্থীরা অনেকটাই পিছিয়ে। কেন্দ্রের সঠিক নির্দেশনার অভাব, রাজনৈতিক সংঘাত এবং মামলা-মোকদ্দমা এড়াতে কিছুটা আড়ালে থেকে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন তারা। তবে মনোনয়ন নিশ্চিত করতে দু’দলের প্রার্থীই এখন ছুটছেন কেন্দ্রের দিকে। লবিংয়ে পার করছেন ব্যস্ত সময়। দলগতভাবে এ জেলায় আওয়ামী লীগ ও বিএনপিÑদু’দলই শক্তিশালী। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) কমিটি থাকলেও অবস্থান ততটা সুদৃঢ় নয়। জামায়াত পুরো কোণঠাসা। বাদবাকি দলগুলোর হাতেগোনা কয়েকটার অস্তিত্ব আছে, বেশিরভাগেরই অস্তিত্ব নেই। তাই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা সীমাবদ্ধ থাকবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের মধ্যেই। প্রার্থী সংখ্যা বেশি হওয়ায় দু’দলই আছে সঙ্কটে। গত নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেয়ায় বর্তমান সংসদের জেলার পাঁচটি আসনেই আওয়ামী লীগের দখলে। একাদশ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগ তাদের আসনগুলো ধরে রাখতে চায়। অন্যদিকে বিএনপি চায় তাদের হারানো আসন পুনর্দখল করতে। লক্ষ্য বাস্তবায়নে দু’দলই মরিয়া। নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) ॥ সীমান্তবর্তী ও আদিবাসী অধ্যুষিত দুই উপজেলার ১৫ ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-১ আসন। নবম সংসদে এ আসনের এমপি ছিলেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও আনন্দমোহন কলেজের সাবেক ভিপি মোশতাক আহমেদ রুহী। দশম নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন পাননি। তার বদলে আওয়ামী লীগের টিকেটে নির্বাচিত হন বাংলাদেশ কৃষকলীগের সহসভাপতি ছবি বিশ্বাস। মনোনয়ন বঞ্চিত রুহী এবং সাবেক এমপি জালাল উদ্দিন তালুকদারের পুত্র শাহ কুতুবউদ্দিন তালুকদার রুয়েল তখন স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখেও ওই তিন জনসহ মনোনয়ন যুদ্ধে নেমেছেন আওয়ামী লীগের মোট ১৪ প্রার্থী। ছবি বিশ্বাস এমপি হিসেবে নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করে যাচ্ছেন। পাঁচ বছরে বাস্তবায়িত বিভিন্ন উন্নয়ন কাজের ধারাবাহিকতায় আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়ন এবং জয়ী হবেন বলে আশা করেন। অন্যদিকে সাবেক এমপি মোশতাক আহমেদ রুহীও মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। সরাসরি গণসংযোগ না করলেও তৃণমূলের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন তিনি। গত নির্বাচনে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহ কুতুবউদ্দিন তালুকদার রুয়েলের পক্ষেও গণসংযোগ করছেন তার কর্মীসমর্থকরা। তিনবারের সাবেক এমপি জালাল তালুকদারের পুত্র হিসেবে তিনি সুপরিচিত। এদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও আদিবাসী নেতা উপাধ্যক্ষ রেমন্ড আরেংও দলীয় মনোনয়ন পেতে চান। আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রধানমন্ত্রীর ‘পার্সোন্যাল এইড’ হিসেবে কর্মরত মানু মজুমদার। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও প্রতিরোধ যোদ্ধা পরিষদের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া বর্তমান এমপি ছবি বিশ^াসের ভগ্নিপতি। জেলা আওয়ামী লীগের আরেক সহসভাপতি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক তালুকদার এবং কলমাকান্দা উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান শাহ মোঃ ফখরুল ইসলাম ফিরোজও মনোনয়নের জন্য তৎপর। এদিকে গত নির্বাচনের সময় থেকে গণসংযোগ করে আসছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য এরশাদুর রহমান মিন্টু। আরেক নতুন মুখ আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক উপকমিটির সদস্য রোটারিয়ান আতাউর রহমান খান আখির। বয়সে তরুণ হলেও প্রচারে গণসংযোগে মাঠ সরব করেছেন তিনি। আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেনÑ চার্টার্ড এ্যাকাউন্ট্যান্ট আফতাব উদ্দিন, জাপান প্রবাসী সাবেক ছাত্রনেতা আশীষ রঞ্জন রায় ভানু, লন্ডন প্রবাসী ব্যারিস্টার মোঃ মোহসিন, জালাল উদ্দিন তালুকদারের কন্যা জান্নাতুল ফেরদৌস ঝুমা তালুকদার ও সাবেক যুবলীগ নেতা উসমান গণি। নবম সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল। বেগম খালেদা জিয়ার অনেক মামলার আইনজীবী তিনি। বিভিন্ন সময়ে সরকার সমর্থকদের বাধা, মামলা এবং দলীয় প্রধান কারাবন্দী থাকায় কৌশলগত কারণে সরাসরি মাঠে না নামলেও বিএনপির ভোটারদের কাছে তিনি গ্রহণযোগ্য। তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে তার। তিনি ছাড়াও বিএনপির মনোনয়ন চাইবেন: জেলা বিএনপির সহসভাপতি (জাপার সাবেক এমপি) গোলাম রব্বানী, জাতীয়তাবাদী কর আইনজীবী ফোরামের (ঢাকা ট্যাক্সেস বার) সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা এ্যাডভোকেট মোস্তফা নূরুল আলম খান, জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মাসুদ এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক সৈয়দ মাজহারুল হক সোহাগ। এক সময় এ আসনে বিএনপির ডাকসাইটে প্রার্থী ছিলেন সাবেক এমপি ও হুইপ এ্যাডভোকেট আব্দুল করিম আব্বাছী। পরবর্তীতে তিনি এলডিপিতে যোগ দেন। এলডিপি কোন জোটভুক্ত হলে তিনি গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থী হয়ে উঠতে পারেন। সিপিবি থেকে প্রার্থী হচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতা ডাঃ দিবালোক সিংহ। নেত্রকোনা-২ (সদর-বারহাট্টা) ঃ সদর ও বারহাট্টা উপজেলার ১৯ ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে এ আসন গঠিত। জেলা সদরের আসন হওয়ায় জেলাবাসীর চোখ-কান আসনটির দিকে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এখান থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ আলী খান খসরু। দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হন। তার বদলে দলের টিকেট পান সাবেক ফুটবল তারকা আরিফ খান জয়। প্রথমবার এমপি হয়েই তিনি যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী হন। আগামী নির্বাচনেও মনোনয়ন পাবেন বলে আশা করছেন তিনি। অন্যদিকে সাবেক এমপি আশরাফ আলী খান খসরুও মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী। এ নিয়ে দুবার জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এদিকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিয়র রহমান খানও মনোনয়ন পেতে তৎপর। জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ছাড়াও নেত্রকোনা পৌরসভায় তিন তিনবার চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি। আরেক প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি লেঃ কর্নেল (অব) আবদুন নূর খান। গত নির্বাচনে মনোনয়ন না পেয়ে তিনি স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনিও গণসংযোগ এবং লবিং করে ব্যস্ত সময় পার করছেন। জেলা আওয়ামী লীগের দুই যুগ্ম সম্পাদক নেত্রকোনা পৌরসভার মেয়র নজরুল ইসলাম খান এবং জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়ও মনোনয়ন আশা করছেন। নজরুল ইসলাম খান এর আগেও একবার মেয়র ছিলেন। অন্যদিকে প্রশান্ত কুমার রায়ও মেয়র ছিলেন গতবার। মনোনয়নের জন্য তারাও লবিং করে যাচ্ছেন। এ আসনের আরেক আলোচিত প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শামছুর রহমান লিটন (ভিপি লিটন)। নেত্রকোনা সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি লিটন গত নির্বাচনের আগ থেকেই গণসংযোগ, সভা-সমাবেশ ও শোডাউন করে মাঠঘাট চষে বেড়াচ্ছেন। প্রচারে তিনি খুব সক্রিয়। এদিকে বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা এবং সাবেক কাস্টমস্ কর্মকর্তা আবু আক্কাস আহমদও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে গণসংযোগ এবং কেন্দ্রে যোগাযোগ করে চলেছেন। কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক চিত্রনায়ক রানা হামিদও প্রায় সময় এলাকায় সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগে অংশ নিচ্ছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন জেলা কমিটির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক এ্যাডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম, জেলা যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক অধ্যাপক ওমর ফারুক, স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক কৃষিবিদ সারোয়ার মুর্শেদ আকন্দ জাষ্টিস। এদিকে বিএনপির প্রার্থী সংখ্যাও একাধিক। গত কয়েকটি নির্বাচনে জেলা বিএনপির সভাপতি, সাবেক এমপি ও মুক্তিযোদ্ধা আশরাফ উদ্দিন খান একাই ছিলেন বিএনপির প্রার্থী। এবারও মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি। তবে এবার নিজ দলে তার শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক আনোয়ারুল হক। নির্বাচন সামনে রেখে অনেক আগে থেকেই তৎপর তিনি। আশরাফ উদ্দিন খান এবং আনোয়ারুল হক, দু’জনই ক্লিন ইমেজের প্রার্থী হিসেবে পরিচিত। বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং জেলা মহিলা দলের আহ্বায়ক এ্যাডভোকেট ড. আরিফা জেসমিন নাহীনও মনোনয়ন পেতে বিভিন্ন সময় গণসংযোগ করেছেন। এছাড়া এ আসন থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেনÑ কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এটিএম আব্দুল বারী ড্যানি, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য এ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম মিয়া, জেলা বিএনপির সহসভাপতি ডাঃ দেলোয়ার হোসেন টিটো, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান খান রেজভী এবং জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম মনিরুজ্জামান দুদু। জাসদ (ইনু) থেকে প্রার্থী হতে চান অধ্যাপক মুখলেছুর রহমান মুক্তাদির। জাতীয় পার্টির (এরশাদ) মনোনয়ন পেতে চান জেলা পরিষদের সদস্য আসমা আশরাফ। নেত্রকোনা-৩ (কেন্দুয়া-আটপাড়া) ॥ দুই উপজেলার ২০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত নেত্রকোনা-৩ আসনে নবম সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা মঞ্জুর কাদের কোরাইশী। দশম সংসদ নির্বাচনে তিনি বাদ পড়েন। তার বদলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান শিল্পপতি ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু। এমপি হওয়ার পর তৃণমূলের অনেক নেতাকর্মীর সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখতে পারেননি তিনি। তবে মনোনয়নের ব্যাপারে এবারও তিনি আশাবাদী। সাবেক এমপি মঞ্জুর কাদের কোরাইশীও তৎপর রয়েছেন। এ আসনের আরেক হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার উকিল। আগেও একাধিকবার মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হন ’৯০ এর গণআন্দোলনের এ নেতা। অন্যান্যবারের চেয়ে এবার অনেক বেশি গণসংযোগ করছেন তিনি। অসীমের জনসমর্থন আদায়ে তার স্ত্রী কেন্দ্রীয় যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক এমপি অধ্যাপিকা অপু উকিলও মাঠে নেমেছেন। আওয়ামী লীগের আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী এ্যাডভোকেট আব্দুল মতিন। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহসভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সহসম্পাদক মতিন গত কয়েকটি নির্বাচন ধরে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। আওয়ামী লীগের আরেক নতুন মুখ ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, মুক্তিযোদ্ধা ও চলচ্চিত্রকার এ্যাডভোকেট সাইদুর রহমান মানিক। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের এ কেন্দ্রীয় নেতাও গণসংযোগে নেমে মাঠ সরগরম করছেন। আরেক প্রার্থী শিল্পপতি সামসুল কবীর খান। মনোনয়নের আশায় দীর্ঘদিন ধরে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করায় তিনিও সুপরিচিত প্রার্থী। জেলা কৃষকলীগের সভাপতি কেশব রঞ্জন সরকারও নিয়মিত গণসংযোগ এবং লবিংয়ে ব্যস্ত। এছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে তৎপর কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহসম্পাদক ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য আলমগীর হাসান, আটপাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলাম (সাবেক এমপি আব্দুল খালেকের পুত্র), জেলা পরিষদের নারী সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান সালমা আক্তার। বিএনপি থেকে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির বর্তমান সভাপতি ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী। তখন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হন তিনি। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা হিলালী এবারও মনোনয়নের জন্য তৎপর। এ আসনে বিএনপির আরেক জনপ্রিয় প্রার্থী হলেন দেলোয়ার হোসেন ভূঁইয়া দুলাল। তিনি জেলা বিএনপির সহসভাপতি, কেন্দুয়া উপজেলা বিএনপির তিন তিনবারের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় উপজেলা পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান। এছাড়া দুবার ইউপি চেয়ারম্যান এবং একবার কেন্দুয়া পৌরসভার মেয়র ছিলেন তিনি। প্রার্থী হিসেবে তিনিও খুব পাকাপোক্ত অবস্থানে। বিএনপির আর যারা মনোনয়ন চাইবেন তারা দলীয় চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সৈয়দ আলমগীর খসরু, জাতীয়তাবাদী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার্স ফোরামের সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মোস্তফা-ই-জামান সেলিম। জাতীয় পার্টি (এরশাদ) থেকে মনোনয়নের চেষ্টা করছেন কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জসীম উদ্দিন ভূঁইয়া। তবে দলটির অবস্থান এখন আর ততটা সুদৃঢ় নেই এখানে। এখানে সিপিবি থেকে প্রার্থী হতে পারেন অধ্যক্ষ আনোয়ার হাসান। নেত্রকোনা-৪ (মদন-মোহনগঞ্জ-খালিয়াজুরি) ॥ বিএনপির জুৎসই কোন প্রার্থী না থাকায় হাওর-বাঁওর অধ্যুষিত নেত্রকোনা-৪ আসনের নির্বাচনী প্রচার অনেকটা নিষ্প্রাণ। অনেকটা ফাঁকা মাঠেই গণসংযোগ চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা। তিন উপজেলার ২১টি ইউনিয়ন এবং দুটি পৌরসভা নিয়ে গঠিত এ নির্বাচনী এলাকা। এক সময় আসনটির অধিপতি ছিলেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আব্দুল মমিন। পরবর্তীতে সেটি বিএনপির সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ঘাঁটিতে পরিণত হয়। কিন্তু বিতর্কিত বাবর নবম সংসদ নির্বাচনে নিজ দলের মনোনয়ন পাননি। অন্যদিকে দশম সংসদ নির্বাচনে তার দল অংশই নেয়নি। এ কারণে বাবরের রাজত্ব ভেঙ্গে যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর আওয়ামী লীগের প্রার্থী হয়ে আসনটি পুনরায় দখল করে নেন আব্দুল মমিনের স্ত্রী রেবেকা মমিন। নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনে পরপর দুবার এমপি হন তিনি। নির্বাচনী এলাকায় কিছুটা কম এলেও পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে তার। আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়নের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদী। পাশাপাশি দলের আরও তিন প্রার্থী মনোনয়ন চাচ্ছেন। তারা হলেন ’৯০’র গণআন্দোলনের নেতা শফী আহমেদ, জেদ্দা প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ হোসেন চৌধুরী ও ক্যাপ্টেন (অব) মনজুর। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সাবেক সহসম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা শফী আহমেদ আসনটির পরিচিত মুখ। আব্দুল মমিনের মৃত্যুর পর থেকে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। ২০০৬ সালে তাকে একবার মনোনয়ন দেয়া হলেও ১/১১ এর প্রেক্ষাপটে সে নির্বাচন হয়নি। এরপর ২০০৮-এ পুনরায় মনোনয়ন পান। কিন্তু দাখিলের পর তার মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে মনোনয়ন দেয়া হয় রেবেকা মমিনকে। এ কারণে বার বার চেষ্টা করেও নৌকার কা-ারী হতে পারেননি তিনি। তবে এবার দৃঢ় আশা নিয়ে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। অপর প্রার্থী জেদ্দা মহানগর আওয়ামী লীগের বিদায়ী সভাপতি ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপকমিটির সদস্য মমতাজ হোসেন চৌধুরীও গত নির্বাচন থেকে গণসংযোগ করে আসছেন। এবার প্রবাসের চাকরি ছেড়ে সরাসরি মাঠে নেমেছেন। ব্যানার-পোস্টার-তোরণে সরব এলাকা। প্রায় সময় করছেন গণসংযোগ, উঠান বৈঠক ও শোডাউন। আওয়ামী লীগের আরেক প্রার্থী বঙ্গবন্ধু সেনা পরিষদের কেন্দ্রীয় নেতা ক্যাপ্টেন (অব) মনজুরও মনোনয়নের জন্য চেষ্টা-তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। এর আগেও একাধিকবার মনোনয়ন চেয়েছেন তিনি। এদিকে সদ্য বিদায়ী টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের বাড়িও এ আসনের অন্তর্গত খালিয়াজুরিতে। দলীয় হাইকমান্ড চাইলে তাকেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দেখা যেতে পারে। তবে প্রার্থী হিসেবে কখনও গণসংযোগ করেননি তিনি। এদিকে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের ‘দুর্গ’ বলে পরিচিত এ আসনে নবম সংসদ নির্বাচন থেকেই প্রার্থী সঙ্কটে ভুগছে বিএনপি। নবম সংসদ নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সৈয়দ আতাউল হক। কিন্তু জামানত বাজেয়াপ্ত হয় তার। অন্যদিকে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র (বিদ্রোহী) প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন বাবর। পরাজিত হলেও তিনি ভাল ভোট পান। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা ও চট্টগ্রামের ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলায় দ-প্রাপ্ত বাবরের প্রার্থী হওয়া অসম্ভব। তাই বাবরের বদলে তার স্ত্রী তাহমিনা জামান শ্রাবণী বিএনপির মনোনয়ন চাইতে পারেনÑ এমন প্রচার আছে দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীর মধ্যে। কিন্তু বাবরপতœী শ্রাবণীকে কখনও মাঠে নামতে দেখেননি ভোটাররা। তবে মনোনয়ন পেলে তিনি বাবরের ইমেজকে কাজে লাগিয়ে শক্তিশালী প্রার্থী হয়ে উঠবেন, এতে সন্দেহ নেই। তখন নড়েচড়ে দাঁড়াতে হবে আওয়ামী লীগকে। গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দিতে না পারলে জটিল হয়ে যাবে ভোটের হিসাব-নিকাশ। এর কারণ, মদন এলাকাটি এখনও বিএনপির ভোটব্যাংক। এ আসন থেকে বিএনপির আরও যারা মনোনয়ন চাইতে পারেন তারা হলেনÑ কেন্দ্রীয় নেতা কৃষিবিদ আব্দুল্লাহ আল ফারুক এবং নেত্রকোনা সরকারী কলেজের সাবেক জিএস এ্যাডভোকেট মাসুদ রানা চৌধুরী। সিপিবি থেকে প্রার্থী হবেন কেন্দ্রীয় নেত্রী জলি তালুকদার। নেত্রকোনা-৫ (পূর্বধলা) ॥ একটি মাত্র উপজেলা নিয়ে গঠিত এ আসনের বর্তমান এমপি ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল বীরপ্রতীক। তিনি পূর্বধলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং শহীদ কর্নেল তাহের বীরউত্তমের ভাই। বিগত দিনের উন্নয়ন কর্মকা- বিবেচনায় এবারও দলীয় মনোনয়ন এবং জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। নির্বাচন সামনে রেখে নিয়মিত সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। তবে বেলাল ছাড়াও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন আরও কয়েক প্রার্থী। তাদের মধ্যে দুই হেভিওয়েট প্রার্থী হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়ক মুহঃ আবদুল হান্নান খান। আরেক নতুন প্রার্থী হলেন লন্ডন প্রবাসী ইঞ্জিনিয়ার তুহিন আহমেদ খান। সাবেক ছাত্রনেতা আহমদ হোসেন এ আসনের পরিচিত মুখ। ত্যাগী নেতা হিসেবে পরিচিত। গত কয়েকটি নির্বাচন থেকে মনোনয়ন চেয়ে আসছেন। গত নির্বাচনে মনোনয়ন বঞ্চনার পর তিনি কেন্দ্রের সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পান। এতে পূর্বধলার পাশাপাশি গোটা জেলাতেই তার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পায়। বিভিন্ন সময় এলাকায় এসে গণসংযোগ করেন তিনি। কেন্দ্রের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় নেতাকর্মীর সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন। অন্যদিকে সাবেক ডিআইজি, মুক্তিযোদ্ধা মুহঃ আবদুল হান্নান খানও আরেক পরিচিত মুখ। বর্তমানে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রধান সমন্বয়কের (আইজিপি মর্যাদায়) দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা এবং জেল হত্যা মামলারও প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন। চাকরির পাশাপাশি এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় উন্নয়নেও অবদান রেখেছেন। সজ্জন মানুষ হিসেবে তারও গ্রহণযোগ্যতা আছে। তিনিও প্রায় সময় এলাকায় এসে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ করছেন। এদিকে লন্ডন প্রবাসী তুহিন আহমেদ খানও বেশ আগে থেকে গণসংযোগ করে আসছেন। অন্যদের মধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক (সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান) এরশাদ হোসেন মালু এবং বাকৃবির সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার মিছবাহুজ্জামান চন্দনও মনোনয়ন চাইতে পারেন। এ উপজেলায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতৃবৃন্দের মধ্যে ঐক্য নেই। এখানে যত প্রার্থী তত গ্রুপ। কোন্দলের কারণে প্রায় একযুগ ধরে মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে আছে উপজেলা কমিটি। বিশেষ দিনের সাংগঠনিক কর্মসূচীগুলোও এখানে আলাদাভাবে, এমনকি পাল্টাপাল্টি পালন করা হয়। খ-িত বিখ-িত এসব গ্রুপের মধ্যে বিভিন্ন সময় হামলা-মামলার ঘটনাও ঘটেছে। সাধারণ নেতাকর্মীর বক্তব্য প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে দলের জন্য ভাল হবে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন সাবেক এমপি ডাঃ মোহাম্মদ আলী। তার মৃত্যুর পর আসনটিতে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে গণসংযোগ করে আসছেন জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবং নেত্রকোনা সরকারী কলেজের সাবেক ভিপি আবু তাহের তালুকদার। পাশাপাশি গণসংযোগ এবং দলীয় নেতাকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন আরেক তরুণ প্রার্থী এএসএম শহীদুল্লাহ ইমরান। তিনি কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি। এছাড়াও বিএনপির মনোনয়নের জন্য চেষ্টা করছেন ডাঃ মোহাম্মদ আলীর স্ত্রী অধ্যক্ষ রাবেয়া আলী, আইনজীবী নেতা ড. আব্দুল জলিল এবং জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শরীফ আহমেদ। জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইতে পারেন ওয়াহিদুজ্জামান তালুকদার আজাদ।
×