ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষা উন্নয়নে পদক্ষেপ

প্রকাশিত: ০৪:০৫, ৩ নভেম্বর ২০১৮

 শিক্ষা উন্নয়নে পদক্ষেপ

শিক্ষা তখনই প্রকৃত শিক্ষা হয়ে ওঠে যখন তা মানব উন্নয়নে ভূমিকা রাখে এবং যুগোপযোগী হয়ে ওঠে। বর্তমান সরকার এ বিষয়ে সম্পূর্ণ সচেতন বলেই শিক্ষাক্ষেত্রে একের পর এক অগ্রগতি সাধিত হয়ে চলেছে। সেই অগ্রযাত্রাকে আরও বেগবান করার লক্ষ্যে সম্প্রতি সরকার গ্রহণ করেছে একটি বড় প্রকল্প। মাধ্যমিক ও কারিগরি শিক্ষা উন্নয়নের মাধ্যমে দেশে যুগোপযোগী শিক্ষা নিশ্চিত করতে সেকেন্ডারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট (এসইডিপি) নামে প্রকল্পটি হাতে নিয়েছে সরকার। বলাবাহুল্য, দারিদ্র্যমুক্ত দেশ গড়তে হলে শিক্ষার উন্নয়ন জরুরী। তবে সেটি হতে হবে গুণগত মানসম্মত ও যুগোপযোগী শিক্ষা। তবেই আমাদের শিক্ষার্থীরা বিশ্বের দরবারে নিজের যোগ্যতা ও দক্ষতা প্রয়োগ করতে সক্ষম হবে। আমরা আগেও বলেছি, পরিমাণ নয় মানই গুরুত্বপূর্ণ। ভূরি ভূরি পাসের বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের ভাললাগার কারণ হয় বটে; কিন্তু কে না জানে শিক্ষায় মানটাই আসল কথা। শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কোন ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে আমরা স্বস্তিবোধ করি। কারণ আজকের শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে দেশের হাল ধরবে। সেই ভবিষ্যত বিনির্মাণ গভীর সুবিবেচনাপ্রসূত হওয়াই কাক্সিক্ষত। শিক্ষণীয় বিষয় এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি দুটোই শিক্ষার্থীর জন্য কেমন হবে, কী হবে তার ওপরেই নির্ভর করে সত্যিকারের মানুষ হওয়ার বিষয়টি। শিক্ষার মান বাড়াতে বিগত বছরগুলোয় এ খাতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করেছে সরকার। এ লক্ষ্যে প্রণীত শিক্ষানীতিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষার ওপরও গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এছাড়া গণিত, ভাষা ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাও সংযুক্ত হয়েছে। ২০১০ থেকে ২০১৫ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত বিনামূল্যে ১৫৯ কোটি পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হয়েছে, যা সত্যিই বিস্ময় জাগানোর মতো। মানব তখনই মানবসম্পদ হয়ে ওঠে যখন সে দেশ ও সমাজের ইতিবাচক কাজে আত্মনিয়োগে যোগ্যতা এবং সামর্থ্য অর্জন করে। একই সঙ্গে এ কথাও সত্য যে, দক্ষ মানবসম্পদ ছাড়া কল-কারখানা কিংবা অর্থনীতির চাকা সচল রাখার যে কোন কর্মযজ্ঞ সক্রিয় ও সফল হতে পারে না। সে কারণেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির কথাটি গুরুত্বের সঙ্গে বারবার উচ্চারিত হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যানে বাংলাদেশের মানবসম্পদ উন্নয়নে ক্রমোন্নতির বিষয়টির স্বীকৃতি মিলেছে। মানবগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তোলার কাজটিতে গতিও এসেছে। সুদক্ষ মানবসম্পদ তৈরিতে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। দেশে পেশাভিত্তিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান তথা প্রকৌশল, কৃষি, চিকিৎসা, কারিগরি ইত্যাদি জনসংখ্যা অনুপাতে বেশ কম। ফলে বেকারত্বের হার কমানোর ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত সাফল্য আসেনি। স্মরণযোগ্য, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাপান তার কারিগরি জ্ঞান কাজে লাগিয়ে বিশ্ব অর্থনীতির সর্বোচ্চ স্থান দখল করে আছে। এখন চীন বিশ্বের শীর্ষ অর্থনৈতিক পরাশক্তি। তাদের এই অভূতপূর্ব সাফল্যের মূল কারণ হচ্ছে সময়োপযোগী প্রযুক্তিকে বাহন করে নিজেদের শ্রম ও মেধাকে কাজে লাগানো। জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করার ক্ষেত্রে সবার আগে কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাগ্রহণ যে জরুরী সে কথাও আমরা জোরেশোরে বলে আসছি। সে বিবেচনায় কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা হলো দক্ষ জনশক্তি তৈরির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাত। আমরা বরাবরই বলে আসছি শিশুদের সাক্ষর করানোই মূল লক্ষ্য নয়, বরং তাদের বাস্তবোচিত জ্ঞান বিতরণ এবং কর্মমুখী পাঠদানই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সে লক্ষ্যে যথাযথ কারিকুলাম বা পাঠ্যসূচী তৈরিই সবচেয়ে বড় বিবেচনার বিষয় অত্যন্ত। শিশুরা স্কুলে যাচ্ছে, সুর করে পড়া শিখছে- এটি সুন্দরতম দৃশ্য এতে কোন সংশয় নেই। যদিও এ দৃশ্য তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠবে তখনই যখন শিশুরা প্রয়োজনীয় ও উপযুক্ত শিক্ষা লাভ করবে। মানসম্মত যুগপোযোগী এবং কারিগরি শিক্ষা বিস্তারে সংশ্লিষ্ট সবাই আন্তরিকতা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করবেন-এটাই প্রত্যাশা।
×