ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পারলেন না ইমরান খান

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ২৪ অক্টোবর ২০১৮

পারলেন না ইমরান খান

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান নির্বাচনী প্রচারের সময় নিজেকে এমন একজন হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন যিনি পাশ্চাত্যের মুষ্টিভিক্ষা তথা সাহায্যের প্রতি দেশটির আসক্তি ভাঙতে বদ্ধপরিকর। তিনি বলেছিলেন আগের সরকারগুলো অর্থের জন্য আইএমএফের দ্বারে ভিক্ষা করতে যেত। কিন্তু তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ তা করবে না। বরং বিদেশে করের আওতাভুক্তদের কাছ থেকে লুকিয়ে রাখা শত শত কোটি ডলার উদ্ধার করার ওপরই মূলত নজর দিবে। কিন্তু সেই ইমরান খান গত ৮ অক্টোবর তার এতদিনের বিঘোষিত পথ থেকে সরে এসেছেন। ঐদিন তার অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেন যে সরকার আইএমএফের কাছ থেকে বড় অঙ্কের ঋণ নেয়ার চেষ্টা করবে। অর্থনীতির যে সমস্যাবলীর জন্য পাকিস্তানকে এখন আইএমএফের ঋণের জন্য চেষ্টা করতে হচ্ছে তার জন্য অবশ্য ইমরান খান দায়ী নন। পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-নেওয়াজ) নেতৃত্বাধীন পূর্বেকার সরকার জিডিপির বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ১০ বছরের মধ্যে রেকর্ড উচ্চতায় অর্থাৎ ৫ শতাংশেরও বেশিতে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু তা করতে গিয়ে সেই সরকারকে ব্যয়বহুল জ্বালানি ও যন্ত্রপাতি আমদানি করতে হয়েছিল। পাকিস্তানী রূপীর মূল্যমান অক্ষুন্ন রাখার চেষ্টা করতে গিয়ে বস্ত্রশিল্প ও অন্যান্য শিল্পের রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত করতে হয়েছিল। এর পরিণতিতে ২০১৬ সালের গোড়ার দিক থেকে দেশটির চলতি হিসেবে ঘাটতির পরিমাণ নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়। বৈদেশিক মুদ্রার মওজুদও এর ফলে দ্রুত ও ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়ে বর্তমানে ৮শ’ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে যা দিয়ে চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত প্রত্যাশিত আমদানি ব্যয় মেটানো ও বৈদেশিক ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব নয়। অর্থনীতি সচল রাখতে হলে স্বল্পমেয়াদী হিসেবে পাকিস্তানকে প্রায় এক হাজার কোটি ডলার জোগাড় করতে হবে। আক্ষরিক অর্থে পাকিস্তানের অনেক বিদ্যুত কেন্দ্র আমদানি কয়লার ওপর নির্ভর করে দেশের শহর ও গ্রামে বিদ্যুত সরবরাহ করে থাকে। পাকিস্তানের যে এখন ঋণ প্রয়োজন সেটা ইমরান খান নিজেও দেখতে পাচ্ছেন। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে তিনি সঙ্কট থেকে উদ্ধার পেতে আইএমএফ ঋণের বিকল্পের সন্ধান পাওয়ার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছিলেন। এক টেলিভিশন ভাষণে তিনি বিদেশে বসবাসরত সকল পাকিস্তানীকে মাথাপিছু এক হাজার ডলার সরকারকে দান করার আহ্বান জানিয়েছিল। বাহ্যত এর উদ্দেশ্য ছিল একটি বড় আকারের বাঁধ নির্মাণে অর্থের সংস্থান করা। সরকারী অর্থের যে আর অপচয় করা হবে না তা দেখানোর জন্য তিনি প্রকাশ্যে ব্যয় সঙ্কোচের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সরকার ৬১টি বিলাসবহুল গাড়িসহ প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে দুধ যোগানোর জন্য রাখা ৮টি মহিষ নিলামে বেঁচে দিয়েছে। ৭ অক্টোবরেও ইমরান আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন যে বন্ধু দেশগুলো ঋণ দেবে। ফলে আইএমএফের কাছে হাত পাতার মতো বিব্রতকর অবস্থায় তাকে পড়তে হবে না। প্রথম সরকারী বিদেশ সফরে তিনি সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সৌদি সরকারের সঙ্গে দহরম মহরম করার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সৌদিরা সঙ্কট থেকে পরিত্রাণ পেতে পাকিস্তানের ঋণ দেয়ার প্রস্তাব করেনি। বরং প্রধানত চীনের অর্থায়নে ৬ হাজার কোটি ডলারের স্কিম চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোরে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে বিনিয়োগ করতে চেয়েছে। এতে পাকিস্তানের পুরনোতম মিত্র ও ভ্রাতৃপ্রতীম চীন বেশ নাখোশ হয় বলে সৌদি বিনিয়োগ প্রস্তাবটি শেষ পর্যন্ত বাদ দেয়া হয়। কিছু কিছু পর্যবেক্ষকের ধারণা সিপিইসির পিছনে চুক্তির বিস্তারিত বিষয় আইএমএফকে জানতে দেয়ার চাইতে চীন পাকিস্তানকে দেয় ঋণের পরিমাণ বাড়াতে পারে। সিপিইসি প্রকল্পটি কখনই জনসমক্ষে প্রকাম করা হয়নি এবং প্রকল্পটি পাকিস্তানের অনুকূলে নয় বলে মনে করা হয়। এদিকে ইমরান সাহায্যদাতার সন্ধান শুরু করায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক ভাব দেখা দেয়। ৮ অক্টোবর শেয়ারবাজারে এমন দরপতন হয় যে এক দশকের মধ্যে দিনে এত বড় দরপতন আর হয়নি। সন্দেহ নেই এমন পরিস্থিতিতে সরকার একই দিনে অনিচ্ছাসত্ত্বেও তার নীতি বদলাতে বাধ্য হয়। এদিকে ঋণ চাওয়ার ব্যাপারে যে বিলম্ব ঘটেছে তার কারণে যে কোন ঋণের শর্তাবলী নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনায় ইমরানের হাত দুর্বল হয়ে পড়েছে। আইএমএফের ঋণ পেলে পাকিস্তানী রুপীর দাম আরও পড়ে যাবে, কর আদায় বাড়বে এবং সুদের হারও চড়ে যাবে। এগুলোর কোনটাই ইমরানের ইসলামী কল্যাণমূলক রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বাস্তবতা হলো ইমরান দ্রুত সমস্যার সমাধান করার প্রতিশ্রুতি দিলেও সে প্রতিশ্রুতি তিনি কিছুতেই রক্ষা করতে পারছেন না। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×