ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় বক্তব্য

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৬ অক্টোবর ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় বক্তব্য

বুধবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এমন কিছু বক্তব্য দিয়েছেন যা দেশবাসীকে আশ্বস্ত করবে। আসন্ন নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে বলে দেশবাসীকেই যে তিনি আশ্বস্ত করলেন তাই নয়, নির্বাচন নিয়ে কুয়াশা সৃষ্টিকারী গণতন্ত্রবিরোধী অপশক্তিকেও তিনি সাবধানী বার্তা দিলেন। তিনি খোলাখুলি বলে দিয়েছেন যে, অসংখ্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে কোন দল যদি নির্বাচনে না আসে, সেটি তাদের দলীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপার। এক্ষেত্রে তার সরকারের কিছু করণীয় নেই। একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন বিষয়ে বহির্বিশ্বের নেতাদের মনোভাবের দিকটিও জনসাধারণকে অবহিত করেছেন। বলেছেন, আগামী নির্বাচন নিয়ে বিশ্ব নেতাদের কোন পরামর্শ বা আন্তর্জাতিক চাপ নেই। তবে এ কথার পাশাপাশি তিনি স্পষ্ট করেছেন যে, কে সমর্থন করল কী করল না কিংবা বাইরের দিকে মুখাপেক্ষী হয়ে তিনি রাজনীতি করেন না। তার রাজনীতি দেশের জন্য, জনগণের জন্য। দেশের জনগণের ভোটের শক্তির ওপর তার বিশ্বাস আছে। তাই তার জোর হচ্ছে, দেশের জনগণ। এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, একজন প্রকৃত জননেত্রীর বক্তব্য এমনই স্ফটিকস্বচ্ছই হবে। দেশের কোন বিশেষ শক্তি বা দেশের বাইরের কোন ক্ষমতাধর রাষ্ট্র বঙ্গবন্ধুকন্যার ভরসার জায়গা হতেই পাওে না। যিনি দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন, তার আসল শক্তি তো জনগণই হবেন। দেশের মানুষের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ নেত্রীর নীতি ও আদর্শ নিয়ে তাই কোনরকম সংশয়ের কোন অবকাশ নেই। একথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, গণতন্ত্র ও উন্নয়ন একে অপরের সঙ্গে যুক্ত। গণতন্ত্র বহাল থাকলে উন্নয়ন হয় দেশের, পক্ষান্তরে গণতন্ত্রবিরোধীরা ব্যাহত করে উন্নয়ন। তবে গণতন্ত্রকে আহত করে গণতন্ত্রবিরোধীরা নিজেদের আখের গোছানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়। যদিও তাাতে শেষ রক্ষা হয় না, তারা নিক্ষিপ্ত হয় ইতিহাসের আস্তাকুড়ে। এই গণতন্ত্রবিরোধীরা হতে পারে সামরিক স্বৈরশাসক, কিংবা ছদ্মবেশী গণতন্ত্রী। বাংলাদেশ তাদের প্রথম প্রত্যক্ষ করে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নৃশংসভাবে সপরিবারে হত্যাকা-ের পর। এখনও সেই অপশক্তি সক্রিয় বলেই গণতন্ত্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়, উন্নয়নে সাময়িক স্থবিরতা নেমে আসে, বাইরের অপবাদ জোটে। কিছুকাল আগে জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমালোচকদের উদ্দেশ করে বলেছেন, গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের এত উন্নয়ন হচ্ছে। এ বক্তব্যে কোন যুক্তিশীল মানুষ দ্বিমত করবেন না। একইসঙ্গে এ সত্যও উচ্চারণ করতে হবে গণতন্ত্রের সুরক্ষা এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য দেশপ্রেমিক দায়িত্বশীল সরকারেরও ধারাবাহিকতা বাঞ্ছনীয়। বহুল আলোচিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সন্দেহ-অবিশ্বাস যাতে না থাকে সেজন্যে প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিও ওপর যথাযথ আলোকপাত করেছেন। তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে গণমাধ্যমও আশ্বস্ত হওয়ার মতো বার্তা পেল। তিনি বলেছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। এই আইন নিয়ে ভয় তাদেরই আছে যাদের অপরাধী মন। কারও যদি অপরাধী মন না থাকে বা ভবিষ্যতে কিছু অপরাধ করবে এরকম পরিকল্পনা না থাকে; তার উদ্বেগ হওয়ার কোন কারণ নেই। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে বর্তমান সরকার এবং দলের নেতা-মন্ত্রীদের নামে মিথ্যা সংবাদের ফাইল প্রস্তুত করে রেখেছে, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরই সরকারকে হেয় করার চেষ্টা করবেন- তারাই এই আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন। প্রধানমন্ত্রী প্রদত্ত বক্তব্য থেকে একজন রাষ্ট্রনেতার পরিকল্পনার দৃঢ়তা, নিজের প্রতি আস্থা এবং সামগ্রিক বিচারে দেশবাসীর জন্য দায়িত্ব ও কর্তব্যবোধ বিষয়ে তাঁর মনোভাবের পরিচয় মেলে। জনতার শক্তির প্রতি আস্থাশীল বক্তব্যের জন্যে প্রধানমন্ত্রীকে আমরা ধন্যবাদ জানাই।
×