স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ যখন স্পেনে ছিলেন, অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে পেপ গার্ডিওলা ছিলেন। বার্সিলোনার দাপটে জোশে মরিনহোর রিয়াল মাদ্রিদ সহজে কোনকিছু জয় করতে পারেননি। এরপর ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে চেলসিতে ফিরে এসে বেশ চমক দেখিয়েছিলেন শুরুতে। তারপর বেশ উত্থান-পতন কাটিয়ে আবার ইংল্যান্ডে ফিরেছেন ঐতিহ্যবাহী ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। কিন্তু আবার সেই গার্ডিওলা দাপটে নাভিশ্বাস উঠেছে মরিনহোর। ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে সুবিধা করতে পারছেন না। সেটার প্রমাণ আরেকবার পাওয়া গেল উলভসের সঙ্গে শনিবার রাতে ১-১ গোলের ড্রয়ে। এরপর পর্তুগীজ এ কোচ অভিযোগ করেছেন ম্যাচের এ দলটি তার পছন্দের ছিল না। তিনি খেলোয়াড়দের কঠোর তিরস্কারও করেছেন। এরচেয়ে ঘরের মাটিতে টটেনহ্যাম হটস্পারের বিপক্ষে খেলা দলটিই অনেক বেশি ভাল ছিল বলে দাবি করেছেন তিনি। যদিও সেই ম্যাচে ৩-০ গোলের লজ্জাজনক পরাজয় দেখেছিল ম্যানইউ।
পর্তুগীজ ক্লাব এফসি পোর্তো থেকে মরিনহোর উত্থান। দলটির চেহারাই পাল্টে দিয়েছিলেন তিনি। তাদের ২০০৩-০৪ মৌসুমে উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ শিরোপা জিতিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি। তার আগের বছর উয়েফা কাপও জেতান। এরপর তাকে প্রিমিয়ার লীগের দল চেলসি টেনে নেয়। মরিনহো স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে টানা দুটি লীগ শিরোপা এবং একটি এফএ কাপ এনে দেন। এরপর ইতালিয়ান ক্লাব ইন্টার মিলান তাকে টেনে নেয়। তাদেরও দাপুটে দলে পরিণত করেন মরিনহো, পরপর দুই মৌসুমে ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়ন করানোর পর ২০০৯-১০ মৌসুমের চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জেতান। ৪৫ বছরের মধ্যে এটিই ছিল ইন্টারের প্রথম ইউরোপ সেরা হওয়া। তবু দুরন্ত বার্সিলোনার বিপক্ষে ফাইনালে জিতেছিল ক্লাবটি। এরপর মরিনহোর সাফল্য বলতে দ্বিতীয় দফায় চেলসিতে ফিরে আরেকবার লীগ শিরোপা, রিয়ালকে লা লিগা, কোপা ডেল’রে ও সুপারকোপা জিতিয়ে হ্যাটট্রিক করা। কিন্তু ম্যান ইউতে যোগ দেয়ার পর থেকেই একেবারে মিইয়ে গেছেন মরিনহো। কোনভাবেই ওল্ডট্র্যাফোর্ডের আবহাওয়ায় নিজেকে খাপ খাওয়াতে পারছেন না। ইতোমধ্যে কোচ হিসেবে তারচেয়েও বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তায় অনেক অনেক উঁচুতে চলে গেছেন লিভারপুলের জারগেন ক্লপ, এ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের ডিয়েগো সিমিওনে এবং রিয়ালের জিনেদিন জিদান ও গার্ডিওলা। অথচ একটা সময় পুরো ফুটবল পৃথিবী তার পায়ের কাছে নত ছিল।
গত মৌসুমে ম্যানইউ রানার্সআপ হয়েছিল প্রিমিয়ার লীগে। তবু গার্ডিওলার ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে ছিল বিস্তর ফারাক। এরপরও সমালোচনা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন মরিনহো পয়েন্ট টেবিলে দ্বিতীয় অবস্থান দখলের কারণে। কিন্তু এবার শুরু থেকেই প্রিমিয়ার লীগে বাজে অবস্থা ৬ ম্যাচে মাত্র তিনটি জয় এসেছে, ২টি পরাজয় এবং সর্বশেষ শনিবার রাতে উলভসের সঙ্গে ১-১ গোলের ড্র। ১০ পয়েন্ট নিয়ে এখন ম্যানইউ ৬ নম্বরে। হতাশার আরেকটি রাত শেষে মরিনহো আক্ষেপ নিয়ে বলেন, ‘ভাল পারফর্মেন্স নয়, ভাল ফলাফল নয়। কিন্তু স্বাভাবিক এটা। উলভস যেভাবে এ ম্যাচে মোকাবেলায় নেমেছিল এটা তাদের প্রাপ্য। আমি যেভাবে খেলতে পছন্দ করি তারা সেভাবেই খেলেছে।’ চলতি মৌসুমেই টানা তিন ম্যাচ প্রতিপক্ষের মাটিতে জিতেছিল ম্যানইউ। এরপর বাকি ৩ ম্যাচে ২ হার এবং ১ ড্র। এ বিষয়ে মরিনহো বলেন, ‘এই মনোভাবটাই আমি পছন্দ করি যেটা উলভসের মধ্যে দেখতে পেয়েছি। প্রতিটি ম্যাচে আমার দল থেকে এমন মনোভাব দেখতে চাই। কিন্তু আমাদের সেটা এখন নেই। মনোভাবটাই পার্থক্য গড়ে দেয়।’ শুরুটা যেভাবে হয়েছিল তেমনটা আর থাকেনি পরের দিকে। এর কারণ মানসিক। মরিনহো বলেন, ‘দল যেমনটা করছে আমি তারচেয়ে বেশি প্রত্যাশা করি। আমরা টটেনহ্যামের বিপক্ষে যেমন খেলেছিলাম তেমনটাই যদি উলভসের বিপক্ষে খেলতাম তাহলে অবশ্যই জিততাম। এটা কিছুটা সাংঘর্ষিক কথা, কিন্তু টটেনহ্যামের ম্যাচটির চেয়েও আমি এই ম্যাচে বেশি হতাশ। সেই ম্যাচে হারলেও আমার দলের পারফর্মেন্সে খুশি ছিলাম। অবশ্যই শূন্যের চেয়ে এক পয়েন্ট ভাল। কিন্তু আমি এই দলকে পছন্দ করতে পারিনি।’
শীর্ষ সংবাদ: