ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন হারাতে পারে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮

আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে নিবন্ধন হারাতে পারে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পরপর দুবার নিবন্ধিত কোন রাজনৈতিক দল জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিলে সেই দলের নিবন্ধন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব হেলালুদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, যেসব দল গত নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি, পরে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনেও অংশ নেয়নি তারা যদি আগামী নির্বাচন এবং নির্বাচন পরবর্তী উপ-নির্বাচনে অংশ না নেয় তাহলে তারা নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। ইসি সচিবের এই বক্তব্য অনুযায়ী আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি নিবন্ধন ঝুঁকিতে পড়ে যাবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিবন্ধন রক্ষা করতে হলে বিএনপিকে নির্বাচনে আসতেই হবে। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিএনপি বর্জন করার কারণে এই ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঝুঁকি এড়াতে বিএনপিকে এবারের নির্বাচনে যেতেই হবে। নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মকা-ে দলটিকে তৎপর দেখা গেলেও আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুস্পষ্ট ঘোষণা এখনও দলের পক্ষ থেকে দেয়া হয়নি। নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের দাবির পাশাপাশি তাদের নতুন দাবি যোগ হয়েছে খালেদাকে ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে যাবে না। দুর্নীতি মামলায় অভিযুক্ত হয়ে বর্তমানে খালেদা জিয়া কারাগারের বন্দী রয়েছেন। ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ঐক্য প্রক্রিয়ায় যুক্ত হলেও সেটি কোন নির্বাচন কেন্দ্রিক নয় বলে উল্লেখ করেছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। এই প্রক্রিয়া থেকে নির্বাচনের আগে ৫ দফা দাবি আদায়ের কর্মসূচী দেয়া হয়েছে ইতোমধ্যে। নির্বাচনের বিষয়ে ঐক্য প্রক্রিয়া এখনও কোন সিদ্ধান্তে আসেনি। আরপিও বা গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী পরপর দুবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে সেসব দলের নিবন্ধন বাতিলের কথা বলা হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনে স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়টি বিবেচনার মধ্যে আসবে না। বিগত নির্বাচনে অংশ না নিলেও এরপর অনুষ্ঠিত সব স্থানীয় নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিয়েছে। তবে নিবন্ধন রক্ষা করতে হলে আগামী নির্বাচনে তাদের অংশ নিতে হবে। তবে আগামী নির্বাচনে অংশ না নিয়ে পরবর্তী কোন উপ-নির্বাচনে অংশ নিলেও নিবন্ধন ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে। শুধু বিএনপি নয়। আগামী নির্বাচনে অংশ না নিলে ইসির নিবন্ধনকৃত ২ ডজনের বেশি রাজনৈতিক দল নিবন্ধন হারানোর ঝুঁকিতে পড়তে পারে। ইসিতে ৪০ রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন রয়েছে। এর মধ্যে গত দশম সংসদ নির্বাচনে মাত্র ১২টি রজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করে। বাকি ২৮টি রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করে। ২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের সময় গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) নিবন্ধন প্রথা চালুর পাশাপাশি কিছু শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থ হলে নিবন্ধন বাতিলের সুযোগও রাখা হয়। পরে ২০০৯ সালে তা সংসদে আইনী সংশোধন আনা হয়। ২০০৮ সালে দলীয় গঠনতন্ত্র সংশোধনের জন্য ছয় মাসের শর্তসাপেক্ষে (২০০৯ সালের জুলাই) ৩৯ রাজনৈতিক দলকে নিবন্ধন দেয় নির্বাচন কমিশন। এরমধ্যে ৩৮ দল ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নবম সংসদের ভোটে অংশ নিয়েছিল। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটে অংশ নেয় ১২ রাজনৈতিক দল। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (৯০ এইচ) (১) দফায় রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাতিলের এ নির্দেশনা রয়েছে। ওই দফার (ই) উপ-দফায় বলা হয়েছে, নিবন্ধিত কোন রাজনৈতিক দল পরপর দুবার জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে নিবন্ধন বাতিল হবে। তবে (৯০ এইচ) (২) দফায় বলা হয়েছে, শর্ত থাকে যে, দফা (১)-এর (সি), (ডি) ও (ই)-এর অধীন নিবন্ধন বাতিলের পূর্বে নির্বাচন কমিশন নির্ধারিত পদ্ধতিতে সংশ্লিষ্ট রাজনৈতিক দলকে শুনানির সুযোগ প্রদান করবে। মঙ্গলবার আগারগাঁও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আরপিও সংশোধনের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, কমিশন থেকে সংশোধনীর প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। তারা বিষয়টি পর্যালোচনা করে মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করবেন। মন্ত্রিসভায় এটি অনুমোদন হলে সংসদে যাবে। তবে এখন পর্যন্ত এটি কোন্ পর্যায়ে আছে তার তথ্য জানাতে পারেননি। বলেন, যদি এটি সংশোধন হয়, তাহলে ভাল। না হলেও তার প্রস্তুতি আছে। আগের আরপিও দিয়েও নির্বাচনের সকল কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব। ফলে বিদ্যমান আরপিও দিয়ে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনের সময় প্রশাসনে প্রত্যাহারের পাশাপাশি বদলির বিষয়টি আরপিওতে যুক্ত করা হয়েছে বলেও জানান। আগামী নির্বাচনের বিষয়ে ইসি সচিব বলেন, ৩০ অক্টোবরের পর যে কোন দিন তফসিল ঘোষণা করা হতে পারে। বিষয়টি সামনে রেখেই ইসি সচিবালয় বিভিন্ন প্রস্তুতি এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সারা দেশের ৪০ হাজার ১৯৯টি কেন্দ্রের তথ্য পেয়েছি। সেগুলো প্রায় চূড়ান্ত। যখন তফসিল ঘোষণা করা হবে, তখন রিটার্নিং কর্মকর্তারা কেন্দ্রগুলোর তালিকা আমাদের কাছে পাঠাবেন। এরপর সেগুলো গেজেট আকারে প্রকাশ করা হবে। সচিব বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা, জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যারা কাজ করবেন তাদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষণের প্রস্তুতিও চলছে। তফসিল ঘোষণার পরই এটি শুরু হবে। ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ অঞ্চলভিত্তিক হবে। যারা তাদের প্রশিক্ষণ দেবেন তাদের প্রশিক্ষণও ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে সেটা ধরেই প্রস্তুতি এগিয়ে নেয়া হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে ১০ আঞ্চলিক অফিসে ভোটার তালিকার সিডি পাঠানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। প্রথমে সিলেট ও খুলনা অঞ্চলে পাঠানো হচ্ছে। বাকিগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে পাঠানো হবে। নিয়মিত কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসে নির্বাচনের বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। ইভিএম বিষয় বলেন, নির্বাচন কমিশন ইভিএম ব্যবহার করবে কি করবে না, সে বিষয়ে এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয় হয়নি। আরপিও সংশোধন হলে এ বিষয় কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। যদি এই সংসদে এটি নাও হয়, আমাদের অনেক স্থানীয় নির্বাচন আছে। সেখানে আমরা এগুলো ব্যবহার করতে পারব।
×