ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ইসরাইল এখন এক জাতিবিদ্বেষী রাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২৯ আগস্ট ২০১৮

ইসরাইল এখন এক জাতিবিদ্বেষী রাষ্ট্র

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু গত ১৯ জুলাই নেসেট বা পার্লামেন্টে ভাষণ দিতে গিয়ে বর্ণবাদ বা জাতিবিদ্বেষের চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করেছেন। আর তা করতে গিয়ে তিনি সেটাকে জায়নবাদ ও ইসরাইলের রাষ্ট্রের ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত বলে উল্লেখ করেন। এর ঠিক আগে পার্লামেন্টে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারকে একান্তভাবেই ইহুদী জনগণের অধিকার বলে উল্লেখ করে একটি আইন পাস করে। এই আইন পাসের মধ্য দিয়ে ইসরাইলের অ-ইহুদী জনগণকে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকারের বাইরে রাখা হলো। এতে করে ইসরাইলীদের বর্ণবাদ ও জাতিবিদ্বেষবাদকে আনুষ্ঠানিক রূপ দেয়া হলো। ইসরাইল এখন হলো এক বর্ণবাদী জাতি-রাষ্ট্র। আর এই আইনটি হলো ইহুদী আধিপত্যের আইন। আইনটির নাম জাতিরাষ্ট্র আইন। এর লক্ষ্য ইসরাইলের সংখ্যালঘুদের স্বার্থের ওপর আঘাত হানা। এতে অন্যান্য আইনের সমস্ত বিধিবিধান অন্তভর্ুৃক্ত থাকলেও স্বাধীনতা ঘোষণার একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুচ্ছেদ বাদ দেয়া হয়েছে। সেই অনুচ্ছেদটিতে বলা ছিল যে ইসরাইল রাষ্ট্র জাতি, ধর্ম, লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল অধিবাসীর সমান রাজনৈতিক ও সামাজিক অধিকারের প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে। ইহুদী রাষ্ট্র হিসেবে নিজের মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে ইসরাইলকে সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদটিকে একটি ভারসাম্যের মধ্যে রাখার জন্য যথেষ্ট বেগ পেতে হয়েছে। বহু দশক ধরেই দেশটিতে ইহুদী ও অইহুদীদের মধ্যে একটা অঘোষিত, অলিখিত বৈষম্য চলে এসেছে। আরবরা বরাবরই ইহুদীদের তুলনায় রাষ্ট্রীয় সম্পদ কম পেয়েছে। নতুন যে ব্যাপারটা হলো তা হচ্ছে নেতানিয়াহুর কোয়ালিশন সরকারের আইন প্রণেতারা এখন সেই অসাম্য ও বৈষম্যকে একটা আইনে বিধিবদ্ধ করতে চাইছে এবং ইসরাইলকে ইহুদী রাষ্ট্র ঘোষণা সেই পথে এক বিরাট পদক্ষেপ। এদিকে ইসরাইলের ফিলিস্তিনী আরব নাগরিকরা এই বিতর্কিত জাতিরাষ্ট্র আইন বাতিলের চেষ্টায় আন্তর্জাতিক প্রচারাভিযান ছাড়াও বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করছে। উল্লেখ্য, ইসরাইলের ইহুদীরা প্রায় ৭৫ শতাংশ হলেও আরবরাও জনগোষ্ঠীর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ। তারা প্রায় ২১ শতাংশ। বাকিরা ৪ শতাংশের মতো। দেশের সরকারী ভাষা শুধু হিব্রুই রাখা হয়েছে। সরকারী ভাষা হিসেবে আরবীর আগের মর্যাদা কেড়ে নিয়ে একে বিশেষ মর্যাদার ভাষায় নামিয়ে আনা হয়েছে যা শুধু ইসরাইলী প্রতিষ্ঠানগুলোতেই ব্যবহার করা যাবে। এই আইন বলে ইসরাইল সরকার এখন অধিকৃত পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেমে ফিলিস্তিনী ভূখ- গ্রাসের বিস্তার ঘটাতে পারবে। এই আইনে শুধুমাত্র ইহুদী বসতিগুলো সম্প্রসারণ জাতীয় গুরুত্ব বলে বিবেচিত হবে এবং সেগুলোকে উৎসাহিত করা হবে। আইনটি ৬২-৫৫ ভোটে গৃহীত হয়। এটি ব্যাপকভাবে নিন্দিত হয়েছে। সমালোচকরা একে বর্ণবাদের সঙ্গে তুলনা করে বলেছেন যে এর দ্বারা ইহুদীদের জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে এবং ইসরাইলী নাগরিকত্বের অধিকারী প্রায় ১৮ লাখ ফিলিস্তিনী ও অন্যান্য সম্প্রদায়কে প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দেয়া হয়েছে। ইসরাইলী লেবার পার্টির এমপি জুহেইর বাহলুল এই আইনের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন। তিনি একজন ফিলিস্তিনী। তবে তার দল জানুনিস্ট ইউনিয়ন জোটের অংশ লেবার পার্টি আইনটির পক্ষে ভোট দিয়েছে। জুহেইর বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই ফিলিস্তিনী নাগরিকরা ইহুদীদের তুলনায় অধম বলে বিবেচিত হয়ে আসছিল। এখন নতুন আইনে তা আরও বেশি মাত্রায় ও আইনসম্মতভাবে তাদের সেভাবে গণ্য করা হবে। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×