ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে কাদের

তোমরাই আমাদের ভবিষ্যত, তোমরা শান্ত হও

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৪ আগস্ট ২০১৮

  তোমরাই আমাদের ভবিষ্যত, তোমরা শান্ত হও

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে বিএনপি ও তার সাম্প্রদায়িক দোসররা সরকার হঠানোর নিরাপদ সড়ক খুঁজছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, তারা (বিএনপি-জামায়াত) ৯ বছরে ৯ মিনিটও রাস্তায় আন্দোলন করতে পারেনি। সেই দগদগে ব্যর্থতার পর এখন সওয়ার হয়েছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়কের যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনের ওপর তারা এখন ভর করেছে। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চলমান অচলাবস্থা অবসানের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্লিজ, তোমরা শান্ত হও। আমরা তোমাদের প্রতিবাদী কণ্ঠকে সম্মান করি। তোমরা দেশ ও জনগণের স্বার্থে, শিক্ষার পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে কোন অপশক্তির উস্কানির মুখে বিভ্রান্ত হবে না। তোমরাই দেশের আগামী দিনের নাগরিক। তোমরাই আমাদের ভবিষ্যত। তোমরাই আমাদের ভবিষ্যত নাগরিক ও নেতা। তাই তোমাদের কাছে অনুরোধ করতে চাই তোমরা শান্ত হও।’ শুক্রবার বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের সম্পাদকম-লীর সঙ্গে এক যৌথসভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ আহ্বান জানান। ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, মহানগরের অন্তর্গত দলীয় সংসদ সদস্য, থানার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, দলীয় কাউন্সিলর এবং সহযোগী সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে এ যৌথসভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, বৈঠকে দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থায় থেকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন মনিটরিং করার নির্দেশনা দেয়া হয়। গত পাঁচ দিনের আন্দোলন পর্র্যবেক্ষণ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের যৌক্তিকতা সরকার স্বীকার করে নিয়েছে। কিন্তু এই যৌক্তিক আন্দোলনকে অযৌক্তিক পথে নিয়ে যাওয়ার জন্য, এ আন্দোলনকে প্রভোকেশন (উস্কানি) দিয়ে ভিন্ন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার অশুভ চক্রান্ত লক্ষ্য করছি। আমরা লক্ষ্য করছি, শিক্ষার্থীদের মিছিলে প্রবেশ করে কিভাবে অশ্লিল-বিশ্রী ও অশালীন স্লোগানের উস্কানি দিচ্ছে একটি রাজনৈতিক মতলবি মহল। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, কারা খাবার পানি সরবরাহ করছেন এবং শিশুদের উস্কানি দিচ্ছেন উত্তেজিত হওয়ার জন্য? আরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্ররোচিত করছেন সে দিকেও আমরা লক্ষ্য রাখছি। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, আমরা এটাও দেখেছি, অনেক জায়গায় শিক্ষার্থীরা তাদের মিছিল থেকে কিছু কিছু লোককে বের করে দিয়েছে। যখন তারা বুঝতে পেরেছে এরা রাজনৈতিক কুচক্রী। এই মহলটি সন্ধ্যার পর বেশি তৎপর থাকে। সন্ধ্যার পর অনেক ঘটনা ঘটেছে। এমপি, মন্ত্রী, পুলিশ অফিসার, বিজিবি অফিসার এবং অনেক ভদ্রলোককে অপমান অপদস্ত করা হয়েছে, অনেককেই নাজেহাল হয়েছেন। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীরা এদের নাজেহাল করেনি। এদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে ওই মতলবি মহলটি করেছে। এই মতলবি উস্কানির মহলটি সন্ধ্যার পর রাতের অন্ধকারে তাদের অন্ধকারের কার্যকলাপ শুরু করেছে। এটা লক্ষ্য করে আমরা উদ্বিগ্ন। নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমাদের নেত্রীর নির্দেশে আমাদের নেতাকর্মীদের ধৈর্য্য ও সহিঞ্চুতার পরাকাষ্ঠা প্রদর্শনের জন্য অনুরোধ করেছি। কোন প্রকার প্রভোকেশনে কেউ যেন ফাঁদে না পড়ে সে বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছি। শুধু তারা লক্ষ্য রাখবে, কারা কারা এই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে অনুপ্রবেশ করছে এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চক্রান্ত করছে। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনকে জনগণের কাছে বিভ্রান্ত সৃষ্টির জন্য কারা নেমে পড়েছে। সে বিষয়ে আমাদের নেতাকর্মীকে লক্ষ্য ও সতর্ক থাকতে বলেছি। শিক্ষার্থীদের অভিভাবক, স্কুল-কলেজের শিক্ষক ও গবর্নিং বডির প্রতি আন্তরিক আহ্বান জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে শিক্ষার্থীদের ন্যায্য যৌক্তিক দাবি শান্তিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের বিষয়ে আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। আমি আশা করি, আমরা সকলের সহযোগিতা পাব। এখানে যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা প্রবেশ করতে না পারে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আজকে দেখুন গাড়ি বন্ধ, মানুষ কষ্ট পাচ্ছে। অগ্নিসংযোগ ও ভাংচুরের ভয়ে অনেক গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছে না। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বিআরটিসির গাড়ি চালিয়েছিলাম। কিন্তু চালকরা এখন তাদের জীবনের আশঙ্কায়, তাদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তা করে রাস্তায় গাড়ি চালাতে রাজি নয়। আজকে সারাদেশে এই যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর একটা কালো ছায়া নেমে এসেছে। একটা বিপর্যকর পরিস্থিতি নেমে এসেছে। যান চলাচল বন্ধের কারণে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে। মানুষ এখান থেকে ওখানে যেতে পারছে না। দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। এই অচলাবস্থার অবসানের জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। সেতুমন্ত্রী আরও বলেন, এখন পর্যন্ত পাঁচদিন অতিক্রান্ত হয়েছে। শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সরকার কিন্তু নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেনি। আমরা প্রথম থেকেই এই পরিস্থিতিতে প্রো-এ্যাকটিভ ছিলাম। এখনও আমরা প্রো-এ্যাকটিভ আছি। শিক্ষার্থীদের যে নয় দফার দাবি এটা পাবলিক স্টেটমেন্ট করে আমরা মেনে নিয়েছি। একটি দাবিও নেই যেটা আমরা মানতে অপারগতা প্রকাশ করেছি। প্রধানমন্ত্রী গত রাতে (বৃহস্পতিবার) আমাকে বলেছেন, রমিজ উদ্দিন স্কুল এ্যান্ড কলেজের পাশে আন্ডারপাসটি নির্মাণের যে দাবি, এই দাবিটি পূরণে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে। আমরা ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরকে এ বিষয়ে দায়িত্ব দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে সেনাবাহিনী এই আন্ডারপাসটির নির্মাণ কাজ অচিরেই শুরু করতে যাচ্ছে। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে মাহবুব উল আলম হানিফ, ডাঃ দীপু মনি, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল, সুজিত রায় নন্দী, ডাঃ রোকেয়া সুলতানা, ফরিদুর নাহার লাইলী, আমিনুল ইসলাম আমীন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ, যুব মহিলালীগের সভাপতি নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোঃ আবু কাওছার, ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসাইন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে আগামী ১৫ আগস্টের জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে কেউ যাতে চাঁদাবাজি করতে না পারে সেজন্য সকল নেতাকর্মীদের সজাগ ও সতর্ক থাকার অনুরোধ জানান তিনি।
×