ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টাঙ্গাইলে ডাক্তারের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৬:১৮, ২২ জুলাই ২০১৮

টাঙ্গাইলে ডাক্তারের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২১ জুলাই ॥ টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডাঃ মনিরা আফরোজের দায়িত্ব অবহেলার কারণে আমার বাবার মৃত্যু হয়েছে। মনিরা আফরোজ যদি আমার বাবাকে সাপে কাটার ভ্যাকসিন দিত তাহলে আমার বাবা প্রাণে বেঁচে যেত। আমরাও এতিম হতাম না। সাপে কাটার ভ্যাকসিনের লিফলেট আমরা স্বাস্থ্য সহকারীরা বিতরণ করে থাকি। তারপরও আমার বাবাকে সাপে কাটার ভ্যাকসিন ব্যবস্থা করে দিতে পারলাম না। হাসপাতালে ভ্যাকসিন থাকা সত্ত্বেও ডাক্তারের অবহেলায় আমার পিতার মৃত্যু হয়েছে। আমি ডাঃ মনিরা আফরোজের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। এ ঘটনায় আমি আইন আদালতের আশ্রয় নেব, যাতে করে দায়িত্ব অবহেলার কারণে আর কোন সন্তানকে এতিম না হতে হয়। এমন কথা বলেন, কালিহাতী উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার চরভাবলা গ্রামের মৃত আবু সাঈদের ছেলে শহিদুল ইসলাম শান্ত। তিনি শনিবার সকালে ডাঃ মনিরা আফরোজের দায়িত্ব অবহেলার কারণে তার বাবার মৃত্যু হয়েছে এমন অভিযোগ এনে টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন লিখিত অভিযোগ পাঠ করেন নিহতের ছেলে শহিদুল ইসলাম শান্ত। অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত দুপুর দেড়টায় নিজ বাড়ীর পাশে দোকানে অবস্থানরত অবস্থায় তার বাবা আবু সাঈদকে (৬০) বিষাক্ত সাপে কাটে। পরে দুপুর ২.২৫ মিনিটে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগে দায়িত্বরত ডাঃ মনিরা আফরোজের অধীনে ভর্তি করানো হয়। ভর্তির সময় আবু সাঈদের দুই পায়ের বাঁধন খুলে দেয় ও হাসপাতালে সাপে কাটার ভ্যাকসিন নেই বলে জানান ডাঃ মনিরা আফরোজ। সে সময় ডাক্তার মনিরা জানিয়েছিলেন, সাপে কাটার লক্ষণ হচ্ছে চোখে ঝাঁপসা দেখা, বমি হওয়া ও চোখের পাতা নেমে আসা। ভর্তি করানোর ১৫ মিনিট পরে সাপে কাটার লক্ষ্যণগুলো দেখা দেয় আবু সাঈদের দেহে। বিষয়টি ডাঃ মনিরা আফরোজকে অবগত করলে তখনও তিনি জানান, সাপে কাটার ভ্যাকসিন নেই। বিষয়টি টাঙ্গাইলের সিভিল সার্জন শরিফ হোসেন খানকে অবগত করলে তিনি সাপে কাটার ভ্যাকসিন ব্যবস্থা করে দেয়ার আশ্বাস দেয়। সিভিল সার্জন ডাঃ মনিরা আফরোজকে মোবাইল ফোনে বলেছিলেন শহিদুল ইসলাম তার স্টাফ উনার বাবাকে দ্রুত সাপে কাটার ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করে দেয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। রোগীর আত্মীয়কে রাগান্বিত হয়ে ডাঃ মনিরা আফরোজ ওই সময় বলেন, সিএস বললেই কি ভ্যাকসিন দিতে হবে। এরপর শহিদুল ইসলাম শান্তকে হাসপাতালের ম্যানেজম্যান্টের সঙ্গে কথা বলতে বলেন ডাঃ মনিরা আফরোজ। তারপর হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) সদর উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন শহিদুল ইসলাম শান্ত। সদর উদ্দিনের সঙ্কে হাসপাতালের আরএমও’র সঙ্গে কথা হয়েছে বলে জানায়। কিন্তু এ্যান্টি ¯েœক ভেনম ভ্যাকসিন দিতে পারবে না বলে জানান সদর উদ্দিন। বিকেল ৫টার দিকে আবু সাঈদকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে অথবা ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার জন্য বলেন সদর উদ্দিন। অবস্থার অবনতি হলে আবু সাঈদকে নিয়ে ময়মনসিংহ হাসপাতালে যায় শহিদুল ইসলাম শান্ত। ময়মনসিংহ হাসপাতালে রাত পৌনে ৮টায় ভর্তি করানো হয়। সোয়া আটটায় মৃত্যুবরণ করেন আবু সাঈদ। এ অভিযোগের ব্যাপারে ডাক্তার মনিরা আফরোজ বলেন, ভ্যাকসিন দিলেও রোগীর সমস্যা হতে পারে। সাপে কাটা রোগীকে ভ্যাকসিন দেয়ার মতো যে রকম সেটিং থাকা দরকার সে রকম সেটিং ছিল না। এজন্যই ভ্যাকসিন দেয়া হয়নি। রোগীর স্বজনরা সব কিছু জেনেও এমন অভিযোগ করছে। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন নিহত আবু সাঈদের বড় ছেলে শহিদুল ইসলাম শান্ত, ছোট ছেলে সোহেল রানা, মেয়ে শান্তা ইসলাম, টাঙ্গাইল স্বাস্থ্য সহকারী এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন, সদর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান।
×