ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ধরপাকড়ে অনেকেই দিশেহারা ॥ সমস্যা সমাধানে শীঘ্রই প্রতিনিধি দল যাচ্ছে

এবার লেবাননে ‘ইকামা’ জটিলতায় লক্ষাধিক বাংলাদেশী কর্মী

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৪ জুলাই ২০১৮

 এবার লেবাননে ‘ইকামা’ জটিলতায় লক্ষাধিক বাংলাদেশী কর্মী

ফিরোজ মান্না ॥ এবার লেবাননে ‘ইকামা’ জটিলতায় পড়েছেন এক লাখের বেশি বাংলাদেশী কর্মী। দেশটিতে অবৈধ কর্মীর কারণে বৈধ কর্মীরাও ইকামা নবায়ন করতে পারছেন না। ইকামা নবায়ন করতে গিয়ে মাসের পর মাস অপেক্ষা করতে হচ্ছে। কেউ কেউ ইকামা পেলেও-তাদের বড় অংকের টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় দূতাবাসের মাধ্যমে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদলও অচিরেই লেবানন গিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবে বলে জানা গেছে। লেবাননে বাংলাদেশের দূতাবাস সূত্র জানায়, দেশটিতে বহু কর্মী অবৈধ হয়ে পড়েছেন। তারা যথাসময়ে ইকামা বা চাকরির অনুমতিপত্র করেনি। ফলে যারা বৈধ কর্মী তারা ইকামা নবায়ন করতে পারছে না। কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে অবৈধ কর্মীদের বৈধ হওয়ার কোন সুযোগ দেয়া হবে না। তারা যদি বৈধ হতে না পারে তাহলে বৈধ কর্মীদের সমস্যা আরও জটিল হতে পারে। তবে দূতাবাসের পক্ষ থেকে সর্বক্ষণিক কর্তৃপক্ষের যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে। যাতে বৈধ কর্মীরা ইকামা নবায়ন করতে পারেন। মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, দেশটিতে বর্তমানে বাংলাদেশের নারী-পুরুষ মিলে দেড় লাখ কর্মী কাজ করছেন। লেবাননে বাংলাদেশী কর্মীরা বৈধ কাগজপত্র নিয়ে যান। কিন্তু তারা তিন বছর মেয়াদে গিয়ে ৭/৮ বছর থাকছে। এতে বহু কর্মী এমনিতেই অবৈধ হয়ে পড়েন। অবৈধ এসব কর্মী লুকিয়ে নানাভাবে কাজ করেন। মালিকরা এসব কর্মীকে কম মজুরি দিয়ে কাজ করান। আবার অনেকে নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। লেবাননে বর্তমানে যারা অবৈধ হয়ে পড়েছেন, তারা আগে বৈধভাবে কাজ করতে পেরেছেন। বর্তমানে ইকামা নবায়ন করতে না পেরে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। অবৈধ হয়ে পড়া কর্মীর সংখ্যা ৩০ হাজারের ওপরে। সম্প্রতি লেবানন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোন অবৈধ কর্মীকে দেশে রাখবে না। এই সিদ্ধান্তের পর পুলিশ গত কয়েক মাসে বেশ কয়েক দফা অভিযান চালিয়েছে। আটক হয়েছেন অনেক বাংলাদেশী কর্মী। তাদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশটিতে শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মীরা কাজ করছিলেন। কিন্তু কিছু কর্মীর কারণে বাজারটি ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে সমস্যা সমাধানের। অল্পদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল দেশটি সফর করবে। তারা লেবানন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করবেন। এদিকে, লেবাননে অবৈধভাবে কাজ করতে গিয়ে ইমিগ্রেশন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে বহু বাংলাদেশী কর্মী এখন জেলে রয়েছে। অবৈধ কর্মীদের আটক করতে প্রায়ই অভিযান চালানো হচ্ছে। লেবানন কর্তৃপক্ষ প্রবাসী কর্মীদের বেলায় এর আগে ইতিবাচক মনোভাব দেখালেও, বর্তমানে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। অবৈধদের কারণে যারা লেবাননে বৈধভাবে বসবাস করছেন, তারাও ইকামা নবায়নে হিমশিম খাচ্ছেন। ইকামা নবায়নে এর আগে ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগত। এখন মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও ইকামা নবায়ন করতে পারছেন। নতুন ইকামা বা ইকামা নবায়ন করতে গিয়ে কর্মীদের বড় অংকের টাকা জরিমানা দিতে হচ্ছে। গত এক বছরে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মী ইকামা নবায়ন না করতে পেরে দেশে ফিরে এসেছে। লেবানন সরকার কয়েক দফা অবৈধ কর্মীদের সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা করেছে। সাধারণ ক্ষমার আওতায় দেশটি থেকে বহু অবৈধ কর্মী দেশে ফেরার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু যারা এই ক্ষমার সুযোগ নেননি তাদের অনেককে এখন জেল খাটতে হচ্ছে। দূতাবাস চেষ্টা করে যাচ্ছে যারা আটক রয়েছে তাদের দেশে ফেরানোর। কিন্তু নানা আইনী জটিলতায় জেল খানায় থাকা কর্মীদের মুক্ত করে দেশে পাঠানো যাচ্ছে না। এখন যেসব অবৈধ কর্মী দেশে ফিরতে চান তাদের বৈরুত দূতাবাসের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করে দেশে ফিরে আসতে হবে। লেবানন থেকে কয়েক কর্মী জানিয়েছেন, ২০১৩ সালে লেবাননে বাংলাদেশ দূতাবাস প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন থেকেই দূতাবাসের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা কখনও কোন কর্মীদের হয়ে কাজ করেনি। অবৈধ হয়ে পড়া কোন কর্মীকেই তারা বৈধ করার বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি। এ কারণে দেশটিতে অবৈধ কর্মীর সংখ্যা তুলনা মূলক বেশি। দূতাবাস যদি লেবানন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগা রক্ষা করত তাহলে অবৈধ কর্মীর সংখ্যা কমে যেত। তাছাড়া কোন সমস্যা নিয়ে দূতাবাসে গেলে তারা কর্মীদের প্রতি খারাপ ব্যবহার করেন।
×