ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মেঘবৃষ্টির আষাঢ়ে কাঠফাটা রোদ, ভ্যাপসা গরম ॥ লঘুচাপে অস্থির প্রকৃতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ৮ জুলাই ২০১৮

মেঘবৃষ্টির আষাঢ়ে কাঠফাটা রোদ, ভ্যাপসা গরম ॥ লঘুচাপে অস্থির প্রকৃতি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অস্বস্তিকর আবহওয়া বইছে প্রকৃতিতে। কখনও আষাঢ়ের মেঘ-অঝোর ধারায় বৃষ্টি। আবার কখনও কাঠ ফাটা রোদ আর প্রচ- গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। বৃষ্টির সময়ে যেমন পরিবেশে সৃষ্টি হচ্ছে ঠা-া আর শীতল আবহ, তেমনি ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তিকর এক পরিবেশ। প্রচ- রোদ আর গরমে বাইরে বের হওয়া কঠিন। আবহাওয়া অফিস বলছে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোসাগরে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দেশের ওপরে মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় এবং সাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। বাতাসে জলীয় কনার উপস্থিতি বেশি হওয়ায় এই ভ্যাপসা গরমের সৃষ্টি। তবে জুলাইয়ের দ্বিতীয়ার্ধ থেকে দেশের বৃষ্টিপাত বেড়ে যেতে পারে। এ দিকে প্রকৃতিতে যখন ভ্যাপসা গরম আর অস্বস্থিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে ঠিক তখনি আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরের সৃষ্টি হয়েছে একটি লঘুচাপের। আবহাওয়াবিদ ওমর ফারুখ জানান এটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালার সৃষ্টি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝড়োহাওয়া বয়ে যেতে পারে। ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি এসে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে উত্তর পশ্চিম বঙ্গোসাগরে লঘুচাপের কারণে মৌসুমি বায়ু আবার দুর্বল অবস্থায় চলে গেছে। ফলে এই কয়দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির প্রবণতা কমেছে। তবে লঘুচাপের প্রভাবে উপকূলীয় এলাকায় বৃষ্টিপাত বাড়তে পারে। শনিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়া ও বিজলিসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি বর্ষণ হতে পারে। এ ছাড়া সারাদেশে দিন-রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। পূর্বাভাসে আরও বলা হয়, মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় বিরাজ করছে। প্রকৃতিতে এখন ভরা বর্ষা। দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির কারণে ওই এলাকায় বর্তমানে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজ করছে। সুরমা কুশিয়ারার পানিও বইছে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে। উত্তরে প্রধান নদী যমুনায় পানি বাড়ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে এর ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকা স্বপ্ল মেয়াদী বন্যার কবলে পড়তে পারে। কয়েক শ’ গ্রাম ইতোমধ্যে পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার পানিতে আটকা পড়েছে উত্তরের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পর্যবেক্ষণ বলছে দেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া সুরমা কুশিয়ারার পানি সাতটি পয়েন্টে বিপদ সীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। উত্তরে প্রধান নদ ব্রহ্মপুত্র যমুনা, গঙ্গ পদ্মার পানিও সমতলে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এই এলাকার নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকতে পারে। এমন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা বগুড়া, জামালপুর সিরাজগঞ্জের নি¤œ এলাকা প্লাবিত হতে পারে। তবে এই বন্যাকে তারা স্বাভাবিক বন্যা হিসেবেই দেখছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভুঁইয়া বলেন, উত্তরের নদীগুলোর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলেও বন্যা স্বল্প মেয়াদী হতে পারে। আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে দেশের উজানে ভারি বৃষ্টির কারণে চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। এ দিকে বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সব ধরনের ছুটি স্থগিত করা হয়েছে। পাউবোর সচিব আব্দুল খালেক স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত অফিস আদেশ জারি করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। চিঠিতে বলা হয়, বন্যাজনিত সম্ভাব্য দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে ৪ জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনুকূলে সব প্রকার ছুটি মঞ্জুর স্থগিত রাখাসহ তাদের সদরদফতর ত্যাগ না করার নির্দেশ প্রদান করা হলো। পাউবো বলছে, বর্তমানে দেশে বন্যা পরিস্থিতি বিরাজমান থাকায় পাউবোর বাঁধ ভেঙ্গে জানমাল, ফসল, সেচ, খালের ডাইক ও অন্যান্য অবকাঠামোসহ জনগুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা রয়েছে। এ ছাড়া বন্যা পরবর্তীতে জরুরী সেবারও দরকার হতে পারে। এ ছাড়াও বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রতিষ্ঠানের সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে স্থানীয় দফতর প্রধান, জেলা প্রশাসক ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষারও নির্দেশ দিয়েছেন পাউবো সচিব।
×