ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

তালপাতার চিত্রপটে বিকারগ্রস্ত সময়ের রৈখিক বয়ান

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১ জুলাই ২০১৮

তালপাতার চিত্রপটে বিকারগ্রস্ত সময়ের রৈখিক বয়ান

মনোয়ার হোসেন ॥ ফালি ফালি করে কাটা তালপাতা জোড়া দিয়ে তৈরি করা হয়েছে চিত্রপট। পাতার সেই ক্যানভাসে ফোটানো হয়েছে সুইয়ের সূক্ষ্ম আঁচড়। পাতার ভেতর সৃষ্টি হওয়া বিন্দুকে ভেদ করেছে কালো কালি। এরপর রেখায় উদ্ভাসিত হয়েছে বিষয়। রেখানির্ভর সেসব ছবিতে উদ্ভাসিত হয়েছে মানবিকতার অবক্ষয়। মূলবোধের ক্ষয়িষ্ণুতায় সেথায় গ্রাস করেছে হিংস্রতার থাবা। উঠে এসেছে সমাজ ও রাষ্ট্রের পারিপার্শ্বিক অস্থিরতা। বিশ্বজুড়ে চলমান মানবিক বৈকল্যকে উপজীব্য করে ছবিগুলো এঁকেছেন শিল্পী নিসার হোসেন। সেসব চিত্রকর্ম নিয়ে মোহাম্মদপুরের ইকবাল রোডের কলাকেন্দ্র গ্যালারিতে শুরু হলো প্রদর্শনী। শিরোনাম ‘বিকারগ্রস্ত সময়ের রৈখিক বয়ান’। শনিবার সন্ধ্যায় অতিথি হিসেবে এ প্রদর্শনীর উদ্বোধনী করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী। শিল্পরসিকে সরগরম উদ্বোধনী আনুষ্ঠানিকতায় উপস্থিত ছিলেন চিত্রকর আবুল বারক্্ আলভী, রোকেয়া সুলতানা ও প্রদর্শনীর কিউরেটর ওয়াকিলুর রহমান। অনুভূতি প্রকাশ করেন নিসার হোসেন। নিসার হোসেনের চিত্রকর্মের মূল্যায়ন করে রফিকুন নবী জনকণ্ঠকে বলেন, এই দেশের আধুনিক চিন্তার শিল্পীদের মধ্যে তিনি অন্যতম। সব সময়ই নিরীক্ষাধর্মী কাজের প্রতি বিশেষ আগ্রহী নিসার হোসেন। সেই সুবাদে এবার তিনি অতি প্রাচীন মাধ্যম তালপাতায় ছবি একেছেন। এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার সঙ্গে রয়েছে তাঁর নিজস্ব একটি অঙ্কনরীতি। সেখানে ড্রইংটাই হয়ে ওঠে প্রধান। তাঁর চিত্রকর্মের ধরনটা এমন যে, দেখার চেয়ে বিষয়কে পড়া বা উপলব্ধি করাটাই বেশি গুরুত্ববহ। এবারের প্রদর্শনীতে রেখায় রেখায় মেলে ধরেছেন মানসিক অস্থিরতাকে। প্রদর্শনী প্রসঙ্গে নিজের ভাবনাটি উঠে আসে নিসার হোসেনের কথা। বলেন, অন্ধকার একটা সময়ের ভেতর দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। চারপাশে চোখে পড়ছে মানুষে মানুষে বিরোধ। তুচ্ছ কারণে একে অপরকে আঘাত করছে। অথচ কোন কিছুই যেন কাউকে স্পর্শ করছে না। বেদনাহত হওয়ার পরিবর্তে সবাই যেন সবকিছু উপভোগ করছে। একইভাবেই পরিণামের কথা চিন্তা না করে প্রকৃতির ওপর হামলে পড়ছে মানুষ। মনে হচ্ছে, আমি নিজেও যেন সেই মনোবিকারে আক্রান্ত। মনের অবচেতনে ঘুরপাক খাওয়া সেই বিষয়গুলোকেই মেলে ধরেছি রেখাচিত্রের আশ্রয়ে। তালপত্র চিত্ররীতি প্রসঙ্গে বলেন, এটি আমাদের খুবই প্রাচীন একটি চিত্রকলা মাধ্যম। পাল যুগে পুঁথি রচনার চিত্রকর্ম আঁকা হতো তালপাতায়। আর এই মাধ্যমে আমার শুরুটা ২০১৬। একটি আর্ট ক্যাম্পে অংশ নিতে গিয়েছিলাম ভারত উড়িষ্যা রাজ্যে। এখনও তালপাতায় লেখা ও আঁকার চর্চা প্রচলিত রয়েছে ওই অঞ্চলে। উড়িষ্যার রঘুরাজপুরের লোকশিল্পীদের কাছ থেকে শিখে নিলাম তালপত্রে ছবি আঁকা। অতি চমৎকার এবং দীর্ঘস্থায়ী এই মাধ্যমটির উপকরণ আর কৌশলগুলো হাতে-কলমে শিখে নেয়ার পাশাপাশি কিছু পত্রফলকও সংগ্রহ করে নিয়ে এলাম। দাফতারিক কাজের ফাঁকে ফাঁকে লোহার-কাঁটা দিয়ে দিয়ে পত্রফলকগুলোতে আঁচড় কাটার সময় স্বতঃস্ফূর্তভাবেই চারপাশের দেখা উদ্ভট, বিকট, বর্বর, হিং¯্র, জঘন্য, নোংরা সব চেহারা আর অঙ্গভঙ্গিগুলো রূপ পেতে থাকে, যার সুস্পষ্ট কোন ব্যাখ্যা আমারও জানা নেই। তালপাতায় আঁকা রেখাচিত্রের সঙ্গে এচিং ও রিলিফ প্রসেসের রেখাধর্মী ছাপাই ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে প্রদর্শনী। শিল্পীদের দ্বারা পরিচালিত প্রতিষ্ঠান কলাকেন্দ্রের ‘ড্রইং এ্যান্ড থিংকিং-থ্রি’ সিরিজের অংশ হিসেবে প্রদর্শনীটির আয়োজন করা হয়েছে। ২৫ জুলাই পর্যন্ত চলবে শিল্পায়োজন। প্রতিদিন বিকেল পাঁচটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ছায়ানটের নজরুল উৎসবের সমাপ্তি ॥ শুক্রবার থেকে দুই দিনের নজরুল উৎসবের আয়োজন ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ছায়ানট। জাতীয় কবি কাজী নজরুলম ইসলামের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদিত এ উৎসবের শেষ দিন ছিল শনিবার। নজরুলের সৃষ্টিসম্ভারের আলোয় নৃত্য-গীত, আবৃত্তি ও পাঠের আশ্রয়ে সাজানো ছিল এদিনের অনুষ্ঠান। নজরুল পরিষদ পদক পেলেন শাহীন সামাদ ও সুমন চৌধুরী ॥ জাতীয় কবিকে কাজীয় নজরুল ইসলাম স্মরণে শনিবার থেকে শুরু হলো ‘নজরুল জন্মোৎসব’।। নজরুল সঙ্গীত শিল্পী পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী দিনে নজরুল পরিষদ পদক প্রদান করা হয় শিল্পী শাহীন সামাদ ও সুমন চৌধুরীকে। শনিবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত, নৃত্য ও আবৃত্তি মিলনায়তনে ‘সত্যের জয় হোক সাম্যের জয় হোক’ প্রতিপাদ্যে এই আয়োজনের উদ্বোধন করেন সঙ্গীতজ্ঞ মোস্তফা জামান আব্বাসী। জাতীয় কবির ১১৯তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে পরিষদের বিভিন্ন জেলা পর্যায়ের শিল্পীদের পাশাপাশি একক সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী পর্বের শেষেই ছিল পুরস্কার প্রদান আয়োজন। পুরস্কারপ্রাপ্ত শিল্পীদ্বয়ের প্রত্যেকের হাতে ৫০ হাজার টাকা, একটি ক্রেস্ট ও উপহার তুলে দেন মোস্তফা জামান আব্বসী। সঙ্গীতজ্ঞ করুণাময় গোস্বামীকে স্মরণ ॥ প্রথম প্রয়াণবার্ষিকীতে সঙ্গীতজ্ঞ শিক্ষাবিদ করুণাময় গোস্বামীকে স্মরণ করে বিশিষ্টজনরা বলেছেন, তিনি বহু গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তার সৃষ্টিশীল কর্ম দিয়ে তিনি এ দেশের সংস্কৃতি অঙ্গনে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। শনিবার বিকেলে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে এ স্মরণসভার আয়োজন করে বিএসবি-ক্যামব্রিয়ান এডুকেশন গ্রুপ।
×