ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৫ জুলাই ২০২৫, ৩০ আষাঢ় ১৪৩২

অভিবাসীদের বের করে দিতে ইতালি মরিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৭ জুন ২০১৮

অভিবাসীদের বের করে দিতে ইতালি মরিয়া

ইতালির নয়া সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই তার অগ্রাধিকার কি হবে তা পরিষ্কার জানিয়ে দিতে এতটুকু সময় নষ্ট করেনি। সেই অগ্রাধিকারগুলোর মধ্যে একটি হলো ইতালিতে বেআইনীভাবে বসবাসকারী ৫ লাখ থেকে ৬ লাখ অভিবাসীকে বিতাড়িত করা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তিও সালভিনি শপথ গ্রহণের পরপরই এদের বিতাড়িত করার আগ্রহ ব্যক্ত করে এসেছেন। তিনি ঘোষণা দিয়েছেন ‘বেআইনী অভিবাসীদের সুদিন ফুরিয়ে গেছে। এখন তল্পিতল্পা গুটিয়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।’ বিদেশী নাগরিকরা যারা দলে দলে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইতালিতে এসেছে তাদের মধ্যে অনেকে পথের মধ্যেই ভূমধ্যসাগরে সলিল সমাধি গ্রহণ করেছে। অনেক এনজিও এখন এই অভিবাসীদের সাগরে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচিয়ে ইতালির সৈকতে পৌঁছে দিয়েছিল। এ কাজটা যে তারা ইতালি কর্তৃপক্ষের পূর্ণ অনুমতি নিয়েই করেছিল সে ব্যাপারে এ পর্যন্ত কোন সন্দেহ নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সালভিনি সেই এনজিওগুলোকে বিকল্প ‘মানব পাচারকারী’ বলে চিহ্নিত করতে ছাড়েননি। তিনি ঘোষণা করেছেন অভিবাসীদের মধ্যে যাদেরকে মানবিক সুরক্ষা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এখন থেকে তাদেরকে রুদ্ধ শিবিরে আটকে রাখা হবে। এ জাতীয় কথাবার্তায় অবশ্য গত ৪ মার্চ অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে কোয়ালিশন সরকারের অন্যতম শরিক নর্দার্ন লীগের পোল রেটিং ১৮ শতাংশেরও কম থেকে বেড়ে ২৬ শতাংশে উঠেছিল। তবে এটা হিতে বিপরীতও হতে পারে। যে দিন কমপক্ষে ৬০ জন অভিবাসী যার বেশির ভাগই তিউনিসীয়-ইতালির ল্যাম্পডুসা দ্বীপে পৌঁছানোর চেষ্টা করতে গিয়ে সাগরে ডুবে মারা গিয়েছিল সেদিন সালভিনি বলেছিলেন তিউনিসিয়া প্রায়শই এবং ইচ্ছাকৃতভাবে কয়েদীদের রফতানি করে থাকে। তিউনিস সরকার তখন ইতালির রাষ্ট্রদূতকে তলব করে তাদের সুগভীর বিস্ময়ের কথা জানিয়ে দেয়। একথা সত্য যে ৬ জুন পর্যন্ত ইতালীতে যত অভিবাসীর আগমন ঘটেছে তার মধ্যে তিউনিসীয়রাই এককভাবে সবচেয়ে বেশিÑ মোট সংখ্যার ২১ শতাংশ। এর পিছনে অবশ্য দুটো কারণ আছে। একটি হচ্ছে আগের রোম সরকারের সঙ্গে জাতিসংঘের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত লিবীয় প্রশাসনের এবং সে দেশের কয়েকটি শক্তিশালী মিলিশিয়া গ্রুপের সম্পাদিত একটি বিতর্কিত চুক্তি। এই চুক্তির কারণে সিরিয়া হয়ে ইতালিতে অভিবাসীদের আগমন বহুলাংশে কমে আসে। গত বছর ইতালিতে অভিবাসী এসেছিল ৬১২০১। এ বছর একই সময় তা কমে ১৩৭৬৮টিতে নেমে এসেছে। এদিকে নিজেদের দেশের অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নিজের দেশ ছেড়ে বিদেশে কাজের সন্ধানে যাওয়া তিউনিসিয়ার সংখ্যা লক্ষণীয়ভাবে বেড়ে গেছে। কিন্তু সালভিনি মনে হয় এই গুজবটাই বিশ্বাস করেছেন যে কয়েদীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার কারণে তিউনিসীয় অভিবাসীর সংখ্যা বেড়ে গেছে। অথচ বাস্তব অবস্থা হলো প্রতিবছর তিউনিসিয়ায় বন্দীদের ক্ষমা করার একটা রেওয়াজ আছে সে কারণে এক বছরে প্রায় ৪শ’ বন্দী ক্ষমা পেয়েছে। তবে একটি কারণে ইতালি তার সকল বেআইনী অভিবাসীদের বহিষ্কার করতে পারছে না এই জন্য যে এরা যেসব দেশ থেকে এসেছে বেশির ভাগ দেশ তাদের গ্রহণ করতে রাজি নয়। অবশ্য তিউনিসিয়া এ পর্যন্ত তার ১২২৪ নাগরিককে স্বদেশে ফিরিয়ে নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী গিউসেফ কন্ট পার্লামেন্টে এক ভাষণে অভিবাসন প্রশ্নে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নতুন নিয়মবিধির জন্য লবি করার অঙ্গীকার করেছেন যার মধ্যে একটি হচ্ছে ইতালি থেকে অংশীদারী দেশগুলোতে অভিবাসীদের বাধ্যতামূলক বন্টন। সেটা কতদূর কার্যকর হবে সেটাই প্রশ্ন। এদিকে গত ২ জুনের একটি হত্যাকা- ইতালি সরকারকে একটু নাজুক অবস্থায় ফেলেছে। সরকার সমালোচিত হচ্ছে। এদিন মালির ট্রেড ইউনিয়ন কর্মী সৌমাইলা সাকোকে (২৯) গুলি করে হত্যা করা হয়। সাকো ইতালির বুড়ো আঙ্গুল বলে পরিচিত কারাবিয়ায় ফল ও শাকসবজি সংগ্রহে নিয়োজিত হাজার হাজার আফ্রিকান দিন মজুরদের দুর্দশাপূর্ণ অবস্থার উন্নয়নে প্রচারাভিযান চালাচ্ছিলেন। এই শ্রমিকদের কিছু অংশ সাকোর মতো বৈধ অভিবাসী। কিন্তু অন্যরা নয়। সাকো দু’জন অভিবাসীদের ঘর তৈরির কাজে সাহায্য করছিলেন এই অবস্থায় তাকে একটি গাড়ি থেকে গুলি ছুঁড়ে মারা হয়। ঘটনার তিন দিন পর প্রধানমন্ত্রী গিউসেপ কন্ট সিলেটে ভাষণ দেয়ার সময় এই ঘটনার জন্য শোক প্রকাশ করেন। চলমান ডেস্ক সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×