ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ হাইকোর্টের

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২৭ জুন ২০১৮

পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ হাইকোর্টের

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সব ব্রান্ডের পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে আগামী এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে গঠিত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের কমিটির প্রতি এ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ সংক্রান্ত এক আবেদনের প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের হাইকোর্টে বেঞ্চ এ আদেশ দেন। গত ২১ মে বাজারের সকল ব্রান্ডের পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে এক মাসের সময় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। আদালতের এ নির্দেশের পর বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। দুধের মান পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ওই কমিটির পক্ষ থেকে মঙ্গলবার ছয় মাসের সময় চেয়ে আবেদন করেন। আদালত তখন তাদের এক মাসের সময় দেন। আদালতে শুনানি করেন রিটকারী আইনজীবী মোঃ তনভীর আহমেদ, সঙ্গে ছিলেন আব্দুল্লাহ আবু সাঈদ। অন্যদিকে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে কমিটি সংক্রান্ত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। পরে রিটকারী আইনজীবী তানভীর আহমেদ জানান, ‘এ সংক্রান্ত রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২১ মে আদালত নির্দেশ দিয়েছিল বাজারের পাস্তুরিত দুধ পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষকদের নিয়ে কমিটি গঠন করে একটি প্রতিবেদনটি দাখিলের জন্য। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত এক মাসে ১০ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে। সেটিই তারা আদালতকে অবহিত করে প্রতিবেদন তৈরির জন্য ছয় মাস সময় চায়। এ সময় আমাদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানালে আদালত মঙ্গলবার থেকে ৩০ দিন সময় দিয়েছেন। বাজারের সকল পাস্তুরিত দুধের মান পরীক্ষা করে এই সময়ের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘দুধ এমন একটি খাদ্য যেটি সব বয়সী মানুষের জন্যই আদর্শ খাদ্য; বিশেষ করে শিশুদের জন্য। এমন একটি খাদ্যে যদি ভেজাল থাকে বা মান সম্পন্ন না হয় তবে তা অনিবার্যভাবেই জনস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি। ফলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই খাদ্যটি নিরাপদ করা দরকার। ছয় মাস দীর্ঘ সময়। তাই আমরা আপত্তি জানিয়েছি।’ বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মঞ্জুর মোর্শেদ আহমেদকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যের কমিটিতে সদস্যরা করা হয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, ডেইরি মাইক্রোবায়োলজিস্ট, মাইক্রোবায়োলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের প্রতিনিধি, ফুড মাইক্রোবায়োলজি ল্যাবের সহযোগী গবেষক ও প্রধান ড. মোঃ আমিনুল ইসলাম, প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, বিএসটিআই’র বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি, ন্যাশনাল কনসালটেন্টের ডাঃ কুলসুম বেগম চৌধুরী, বিএসটিআই’র বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের উপসচিব আবু সহিদ ছালেহ মোঃ জুবেরী। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, এই কমিটি বাজারের সকল পাস্তুরিত দুধের অস্তিত্ব ও উৎস চিহ্নিতকরণ এবং এর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরুপণ, বাজারে পাস্তুরিত দুধ বাজারজাত করণের ক্ষেত্রে বিদ্যমান ব্যবস্থার ত্রুটি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় সুপারিশ করবে। এই কমিটিকে আনুসাঙ্গিক সহায়তা দিবে বাংলদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ। গত ১৭ মে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত ‘পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশই নিরাপদ নয়, আইসিডিডিআরবির প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এই রিট দায়ের করা হয়। সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ এ রিট দায়ের করেন। আদালতে তিনি নিজেই শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী আবদুল্লাহ আবু সাঈদ, মোঃ সেলিম আসিফ পারভেজ ও মোঃ হানিফ। পত্রিকায় প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাজারে পাওয়া যায় এমন পাস্তুরিত দুধের ৭৫ শতাংশ অনিরাপদ। বিজ্ঞানীরা বিভিন্ন কোম্পানির দুধের নমুনা পরীক্ষা করে তাতে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া পেয়েছেন। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, মানুষ যেন দুধ কেনার পর ফুটিয়ে পান করেন। জনস্বার্থে করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি মোঃ ইকবাল কবিরের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ২১ মে রুল জারি করে এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছিল আদালত।
×