ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সবজি-ফল চাষে বেকারত্ব জয়ের স্বপ্ন

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ২৩ জুন ২০১৮

সবজি-ফল চাষে বেকারত্ব জয়ের স্বপ্ন

সরকারী চাকরি জোগাড় করা যখন সোনার হরিণের মতো, ঠিক তখন ওই চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে বিকল্প পন্থায় বেকারত্ব ঘুচানোর স্বপ্ন দেখছেন শেরপুরের নকলার একঝাঁক শিক্ষিত বেকার যুবক। তারা নিরাপদ শাক-সবজি ও ফলের বাগান করে বেকারত্বকে জয়ের পন্থা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। এতে তারা স্বল্প সময়ে অল্প ব্যয়ে লাভবান হয়ে ওঠায় সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে আত্মস্বাবলম্বীতার। তারা হয়ে উঠেছেন আত্মপ্রত্যয়ী, তাদের পরিবারে এসেছে সচ্ছলতা, সমাজে বেড়েছে তাদের সম্মান। আর তাদের ওই বেকারত্ব জয়ের প্রয়াস দেখে এলাকার আরও অনেকেই এখন উৎসাহী হয়ে উঠছেন তাদের পথে। কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, চলতি বছর নকলা উপজেলায় প্রায় ২৫ একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে পেঁপে চাষ করা হয়েছে। তার মধ্যে শতাধিক বাগান রয়েছে। সব মিলিয়ে উপজেলায় ২৫ সহস্রাধিক পেঁপে গাছ রয়েছে। সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, কৃষি ও শস্যসমৃদ্ধ অঞ্চল নকলা উপজেলার শালখা, তারাকান্দা, বাছুরআলগা, কায়দা, ভূরদী মরাকান্দা, ভূরদী পূর্ব খন্দকারপাড়া, ভূরদী মালপাড়া ও নয়ানীপাড়াসহ প্রায় ১৫/১৬ গ্রামে শিক্ষিত বেকার যুবকরা গড়ে তুলেছেন পেঁপে বাগান। ওইসব বাগানে বাগানে গাছের ফাঁকে ফাঁকে দেশি সবরি কলা ও বিভিন্ন শাক সবজি লাগানো হয়েছে। এক সেবাতেই চলছে ২ চাষ। পেঁপে গাছ একবার লাগালে টানা দেড় বছর ফল দেয়। তার পরের ৬ মাস যেন জমিটুকু পতিত না থাকে, তা বিবেচনায় নিয়ে পেঁপে বাগানের ফাঁকে ফাঁকে করা হয়েছে বাড়তি চাষ। অনেকেই পরীক্ষামূলকভাবে বাড়ির আঙিনায় শাক-সবজি ও ফলের বাগান করে লাভবান হয়েছেন। তাদের দেখাদেখি অনেক বেকার যুবক-যুবতীরা চাকরির আশা ছেড়ে নিরাপদ শাক-সবজি ও ফলের বাগানের দিকে ঝুঁকছেন। তাদের অনেকেই সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন। ফলে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নেই এমন উদ্যমী বেকার যুবকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। সরেজমিনে উরফা ইউনিয়নের শালখা গ্রামে গেলে কথা হয় শিক্ষিত বেকার যুবক এইচএম শেখ ফরিদের সাথে। তিনি স্থানীয় আমিনুল ইসলামের ২ মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে সবার বড়। ১৯৯৮ সালে জন্মগ্রহণকারী শেখ ফরিদ বারমাইসা দাখিল মাদরাসা হতে জেডিসি ও ২০১৪ সালে দাখিল পাস করেন এবং হাজী জালমামুদ কলেজ থেকে ২০১৬ সালে বিজ্ঞান শাখা থেকে এইচএসসি পাসের পরে শেরপুর সরকারী কলেজে রসায়ন বিভাগে পড়ালেখা করছেন। তার মতে, বর্তমানে চাকরিতে শূন্য পদের চেয়ে যোগ্য প্রার্থীর সংখ্যা হাজার গুণ বেশি। হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক-যুবতী চাকরি না পেয়ে টাকার প্রয়োজনে হতাশ হয়ে বিপথগামী হচ্ছেন। তাই তিনি চাকরি ব্যতীত স্বাবলম্বী হওয়ার পরিকল্পনা করেন। ২০১৫ সালের প্রথম দিকে তিনি প্রথমত নিজের বাড়ির আঙিনায় ১০টি দেশীয় জাতের পেঁপে গাছ লাগান ও বিভিন্ন শাক সবজি থেকে ওই বছর প্রায় ২৩ হাজার টাকার মতো লাভও হয় তার। ওই লাভের টাকায় তার সারা বছরের লেখাপড়ার খরচ চলে যায়। বিলপাড়ে বাড়ি হওয়ায় পরিবারের অন্যান্য সদস্যের সহযোগিতায় পরে বেশ কিছু হাঁস পালন শুরু করেন তিনি। শাক সবজি, পেঁপে ও হাঁস পালনে লাভ দেখে শেখ ফরিদ সরকারী চাকরি করার চিন্তা ছেড়ে দেন। তার বাগান ও হাঁসের সেবায় তার বাবা-মা ও ছোট বোনরাও নিয়মিত সহযোগিতা করেন। তাছাড়া প্রয়োজনে এলাকার শ্রমিকদের দিয়ে নিড়ানি ও সেচ দেওয়া হয়। বর্তমানে তার নতুন ১০ শতাংশ পেঁপে বাগানে ফলন আসা শুরু হয়েছে। ওই বাগানে পারিবারিক শ্রম বাদে সব মিলিয়ে ১২ হাজার টাকা থেকে ১৫ হাজার টাকা ব্যয় হয়েছে। বিক্রি শুরু হওয়ার আগে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে ৬০ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকার পেঁপে বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন। ফরিদ আরও জানান, তার সফলতা দেখে এলাকার অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরা নিরাপদ শাক সবজি ও ফলের বাগানের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি ও গরু পালনে ঝুঁকছেন। উরফা ইউনিয়নের পিছলাকুড়ির মোশাররফ হোসেন (বিএসসি অনার্স-এমএসসি) জানান, নিরাপদ ফল ও শাক সবজির চাহিদা বেশি থাকায় দামটাও ভালো পাওয়া যায়। একইভাবে ভূরদী মরাকান্দার এসএম মনিরুজ্জামান, হেলাল মিয়া, ভূরদী পূর্ব খন্দকারপাড়ার মোখলেছুর রহমান, কায়দা গ্রামের আফরিন আন্না, বাছুরআলগার মোকছেদ আলী মাস্টার, ভূরদী মালপাড়ার সাদির মাহমুদ, নয়ানীপাড়ার ফটিক মিয়ার মতো অনেক শিক্ষিত বেকার যুবক আজ নিরাপদ শাক সবজি ও ফল বাগানের পাশাপাশি দেশীয় হাঁস-মুরগি ও গরু পালন করে বেকারত্ব জয়ের স্বপ্ন দেখছেন। -রফিকুল ইসলাম আধার শেরপুর থেকে
×