ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ১৫ জুন ২০১৮

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

ঈদ শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়ে গেছে বলা যায়। শহর ঢাকার সর্বত্রই এখন উৎসবের আমেজ। মানুষের মনে যে আনন্দ, বাইরে থেকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। এমনিতে কান্নার শেষ নেই। বুকে কত যে ব্যথা! কিন্তু ঈদ আসতেই হাসিমুখ। ক্ষণিকের জন্য হলেও, আনন্দে কাটাতে চান সবাই। চেষ্টাটি এবারও অব্যাহত আছে। আর তাই কেনাকাটা শেষ হতে চায় না। বিপণিবিতানে ভিড়। নতুন জামা কাপড়ের খোঁজ চলছে এখনও। গত বৃহস্পতিবার তো অনেক মার্কেট শপিংমল সেহরি পর্যন্ত খোলা ছিল। সারাদিনের মতো সারারাত বেচাকেনা হয়েছে। আজ চাঁদ রাতেও বহু দোকানপাট খোলা থাকবে। অবশ্য শহরের বেশিরভাগ মানুষের মূল কেনাকাটা আরও আগেই শেষ হয়েছে। নতুন জামা কেনার পর অনেকে জুতা কেনায় ব্যস্ত। টুপি আতর জায়নামাজও কেনা হচ্ছে। ঢাকার বিভিন্ন প্রান্তে ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে ঈদগাহ। এবার রাজধানীতে ঈদ-উল-ফিতরের প্রায় ৫০০টি জামাত অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে। তবে প্রধান জামাতটি নিয়েই বেশি আলোচনা। জাতীয় ঈদগাহে সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত হবে ঈদের প্রধান জামাত। এখানে সাধারণ মুসল্লিদের পাশাপাশি নামাজে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও মন্ত্রিপরিষদের সদস্যরা। বিপুল সমাগমের কথা মাথায় রেখে নেয়া হয়েছে বিপুল প্রস্তুতি। সবুজ খোলা চত্বরটিতে বিশাল প্যান্ডেল তৈরি করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। নিচু জায়গা, ছোটখাটো গর্ত বালু ও মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। মাথার উপরে ঝুলানো হয়েছে প্রায় ৭০০ সিলিং ফ্যান। বৃষ্টির আশঙ্কায় শামিয়ানার উপরে জুড়ে দেয়া হয়েছে পানিরোধক ত্রিপল। এখন বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনাও বাড়ছে। তবে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। ঈদগাহে বসানো হচ্ছে বজ্র প্রতিরোধকও। আলাদা করে ভাবতে হয় নিরাপত্তার কথাটিও। এবার থাকবে তিনস্তর নিরাপত্তা। ইতোমধ্যে পুরো মাঠ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। ঈদের জামাতে মুসল্লিরা জায়নামাজ ও ছাতা ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে আনতে পারবেন না বলেও জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। সব মিলিয়ে নির্বিঘœ হবে ঈদ জামাত এমনটি আশা করা যায়। ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের সংখ্যাও অনেক। ইতোমধ্যে বহু মানুষ রাজধানী শহর ছেড়ে গেছেন। বাস ট্রেন লঞ্চ উড়োজাহাজ কোথাও তিল ধারনের ঠাঁই নেই। নির্ধারিত আসনের চেয়ে কয়েকগুণ বেশি যাত্রী বহন করছে বিভিন্ন রুটের বাস। ট্রেনের চিত্রটা তো আরও বেশি দেখার মতো। কিছুক্ষণ পরপরই কমলাপুর থেকে ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন। টিকেট তো সোনার হরিণ। যারা সংগ্রহ করতে পেরেছেন তারা সৌভাগ্যবান। কিন্তু যারা টিকেট পাননি তারা কি বাড়ি ফিরবে না? ফিরতে তো হবেই। আর তাই অতিরিক্ত যাত্রী হয়ে ট্রেনে উঠছেন তারা। উঠার কায়দাটাও অদ্ভুত। নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা মুশকিল। বহু মানুষ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের উপর দিয়ে যাওয়া ফুটওভার ব্রিজে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেন। ট্রেন আসলে দেখলেই কাছাকাছি দূরত্বে নেমে আসেন। তার পর ঝাঁপ দিয়ে ট্রেনের ছাদে! এভাবে ছাদের পুরোটাজুড়ে যাত্রী। আর ভেতরে আসনের বিপরীতে দ্বিগুন যাত্রী দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। বাসের ছাদেও যাত্রী। নদীপথেও হাজার হাজার যাত্রী। লঞ্চের ছাদ ভর্তি মানুষ। সবাই ছুটছে। এই বাড়ি ফেরা এই ঈদের আনন্দ সবার হোক। ঈদ মোবারক।
×