কবির ভাষায়-
‘শত যোজনের কত মরুভূমি পারায়ে গো
কত বালুচরে কত আঁখিধারা ঝরায়ে গো
বরষের পরে আনিলে ঈদ।’
সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল ইসলামের বহুল আলোচিত ‘ঈদ মোবারক’ কবিতায় কবি বোঝাতে চেয়েছেন, চারদিকেই মরুভূমি কোথাও নেই এক ফোঁটা জল, কেবলই যেন বেদনার বালুচর। এবেলায় এতটুকু আঁখি জলেও পিপাসা মিটবে না। তার পরেও এসেছে ঈদ। কবি এখানে বালুচর বলতে বুঝিয়েছেন, কোথাও সাম্যতার দেখা পাচ্ছে না। ঈদ এর প্রকৃত অর্থ যদি খুশিই হয় তাহলে মানুষে মানুষে ভেদাভেদ ভুলে, সুখ-দুঃখের সমভাগী হয়ে অধিকার ভোগ আর দায়িত্ব পালনের মাঝে যে আনন্দ; সে শিক্ষাই যেন রয়েছে ঈদের মাহাত্ম্যে। এ ছাড়াও দুখু মিয়া তার ‘কৃষকের ঈদ’ কবিতায় লিখেছেন,
‘জীবনে যাদের হররোজ রোজা
ক্ষুধায় আসে না নিদ
মুমূর্ষু সেই কৃষকের ঘরে
এসেছে কি আজ ঈদ?
একটি বিন্দু দুধ নাহি পেয়ে যে
খোকা মরিল তার
উঠেছে ঈদের চঁাঁদ হয়ে কি সে
শিশু পুঁজরের হাড়?’
এই সমাজে এমন কিছু মানুষ আছেন যাদের ঘামে বড়লোকের শরীর রসালো হয়। এঁদের রাতজাগা শ্রমে ধনীর ব্যাংকের হিসেব জমে। এত কষ্ট করেও এ মানুষগুলো এক ফোঁটা শান্তির খেঁাঁজে আজও কেন দিশেহারা? ঈদের মহান শিক্ষাই হচ্ছে সব ভেদাভেদ হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে এক আল্লাহর বান্দা হিসেবে ঈদের জামাতে দাঁড়িয়ে ভ্রাতৃত্বে ও সহমর্মিতার বাস্তব দৃষ্টান্ত স্থাপন করা। কিন্তু ধর্মীয় অনুশাসন না মানার কারণে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ঈদ সচরাচর দেখা যায় না। এ জন্য আমাদের উচিত হবে ঠিকমতো দান, ফিতরা ও যাকাত দিয়ে অসহায় দরিদ্রের পাশে দাঁড়ানো। তাহলে ওরা কিছুটা হলেও ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারবে। সমাজে নেমে আসবে শান্তি সুখের এক ঝঁাঁক সাদা পায়রা।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া থেকে