ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আগামী বাজেট ঘোষণার পর কোন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না

প্রকাশিত: ০৫:২২, ২৬ মে ২০১৮

আগামী বাজেট ঘোষণার পর কোন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না

এম শাহজাহান ॥ সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনায় নিয়ে আসন্ন বাজেটে খাদ্যপণ্যের দাম কমানোর কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। বিশেষ করে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, চিনি এবং আটার মতো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের আমদানিতে সর্বোচ্চ রেয়াতি সুবিধা দেয়া হবে। চলতি বছর চালের দাম বাড়ায় মূল্যস্ফীতি নিয়ে চাপে রয়েছেন সাধারণ ভোক্তারা। তবে বোরো কাটা শুরু হওয়ায় ইতোমধ্যে মোটা চালের দাম কমেছে। স্থিতিশীল রয়েছে অন্যান্য পণ্যের দাম। এ কারণে বাজেট ঘোষণার পর এবার ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। এদিকে, গত ২০০৯ সালে দায়িত্ব নেয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার, সাধারণ মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে কমিয়ে আনার কৌশল নিয়েছিল। এরই ধারাবাহিকতায় মূল্যস্ফীতি এখন সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরা বিগত ৯ বছরে সরকারের অন্যতম অর্থনৈতিক সাফল্য বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে গত বছর অকাল বন্যায় হাওড়সহ দেশের বির্ভিন্ন স্থানে ফসল নষ্ট হওয়ায় চালের দাম বেড়ে যায়। এ কারণে বাড়ে মূল্যস্ফীতি। এ সব দিক বিবেচনায় নিয়ে আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৮ শতাংশ করা হতে পারে। জানা গেছে, গত ২০০৭-০৮ অর্থবছরে চালসহ সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যায়। ওই সময় ক্ষমতাসীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সঙ্গে সঙ্গে ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতির যাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষ হাঁসফাঁস করতে থাকে। পরবর্তীতে নির্বাচনের মাধ্যমে বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ধীরে ধীরে মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে আসতে শুরু করে। অর্থনৈতিক সূচকগুলোর অগ্রগতির ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে বর্তমান সরকার। এই সাফল্যের পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এগুলো হচ্ছে-আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়া এবং অন্যটি হচ্ছে অভ্যন্তরীণ বাজারে বোরো, আমন ধান ও সবজি উৎপাদনসহ সার্বিক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়া এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কতামূলক মুদ্রানীতির প্রভাব। এ ছাড়া ভারত ও চীনে মূল্যস্ফীতি কমার পাশাপাশি জিনিসপত্রের দাম কমে যাওয়ার সুফল পেয়েছে বাংলাদেশ। কারণ এই দেশ দুটি থেকে সিংহভাগ পণ্য আমদানি করা হয়ে থাকে। এ ছাড়া কৃষিসহ উৎপাদনশীল লক্ষ্যভিত্তিক ঋণ সরবরাহ, ক্রমহ্রাসম্যান সুদের হার, বাজার সংবেদনশীল মুদ্রা বিনিময় হার এবং সব মিলিয়ে প্রবৃদ্ধি সহায়ক মুদ্রানীতির ধারাবাহিকতা অর্থনৈতিক কর্মকা-ে অনুকূল পরিবেশ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি গত কয়েক বছর ধরেই নিম্নমুখী রয়েছে। আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার পর দাম আরও কমবে বলে মনে করা হচ্ছে। এবার রোজা শুরুর পর নতুন করে আর ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়েনি। বরং ছোলা, পেঁয়াজ, চিনি, ডাল এবং ভোজ্যতেলের মতো জিনিসের দাম একটু একটু করে কমে আসছে। কমে গেছে সব ধরনের সবজির দাম। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোঃ মুসলিম চৌধুরী জনকণ্ঠকে বলেন, জিনিসপত্রের দাম যাতে না বাড়ে সেদিকে সরকারের নজর রয়েছে। বাজেটে বিশেষ কোন পদক্ষেপ নেয়ার প্রয়োজন হলে সেটাও করার চিন্তাভাবনা চলছে। তিনি বলেন, ভোগ্যপণ্যের আমদানিতে সর্বোচ্চ রেয়াতি সুবিধা প্রদান করা হবে। এটা করা হয় সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে। তিনি বলেন, আগামী বাজেট ঘোষণার পর কোন ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়বে না। জানা গেছে, প্রতিবছর ৪০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যসামগ্রী আমদানি হয়ে থাকে ভারত ও চীন থেকে। দেশের আমদানিকৃত প্রায় সব পণ্যই আসে এ দুটি দেশ থেকে। গত কয়েক বছর ধরে ভারত ও চীনে পণ্যমূল্য অব্যাহতভাবে হ্রাস পাচ্ছে। কমেছে মূল্যস্ফীতিও। এ কারণে বাংলাদেশেও মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়লে বেশি দামে পণ্য আমদানি করতে হয় ফলে দেশে মূল্যস্ফীতি বাড়ে। এখন আন্তর্জাতিক বাজারে ভোগ্যপণ্যের দাম কমতির দিকে রয়েছে। জানা গেছে, সার্বিক মূল্যস্ফীতি হ্রাস বৃদ্ধি অনেকটাই নির্ভর করে খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতির ওপর। খাদ্য পণ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়লে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস ওঠে। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে সেক্ষেত্রে সফলতা অর্জিত হয়েছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের এই সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে সামষ্টিক অর্থনীতির প্রধান বিষয়গুলো যেমন মোট দেশজ আয়, কর্মসংস্থান, রেমিটেন্স বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি হ্রাস, সামাজিক খাতের দারিদ্র্য নিরসন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারী ও শিশু নিরাপত্তায় অগ্রগতি এবং খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। সেই ধারাবাহিকতায় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এবার ধানের বাম্পার ফলন হবে আশা করা হচ্ছে। জানা গেছে, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়ায় গত বাজেটে চাল আমদানির ওপর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ শুল্কারোপ করা হয়। চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ইতোমধ্যে খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আমদানিকৃত চালের ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন। চালের ওপর যেন আর কোন শুল্কারোপ না করা হয় সেজন্যও বাজেট প্রস্তাবনায়ও মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনুরোধ করা হয়েছে। এখন চাল আমদানিতে কোন শুল্ক নেই। একই সঙ্গে দেশীয় শিল্প রক্ষায় আমদানিকৃত চিনির ওপর ২০ শতাংশ সম্পূূরক শুল্ক আরোপ করা আছে। যদি কখনো চিনির দাম বাড়ে তাহলে আরোপিত এই শুল্কহার প্রত্যাহার করা হতে পারে। শুধু তাই নয়, চিনি শিল্প কর্পোরেশন ভর্তুকি দিয়ে বাজারে চিনি বিক্রি কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। এছাড়া ভোজ্যতেল, চিনি, ডাল, পেঁয়াজ এবং রসুনসহ অত্যাবশ্যকীয় পণ্যে বিদ্যমান শুল্ক অব্যাহতি বা রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়া হবে বাজেটে।
×