ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির নেতিবাচক কথাবার্তা জাতি মেনে নেবে না ॥ মোস্তাফা জব্বার

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট জাতীয় সম্পদ, রাষ্ট্রই মালিক

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ১৪ মে ২০১৮

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট জাতীয় সম্পদ, রাষ্ট্রই মালিক

ফিরোজ মান্না ॥ বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট জাতীয় সম্পদ। রাষ্ট্রের টাকায় স্যাটেলাইটটি নির্মিত হয়েছে। কোন ব্যক্তি বিশেষের টাকায় না। রাষ্ট্রই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মালিক। সরকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ব্যবস্থাপনার জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড’ (বিসিএসসিএল) নামে একটি কোম্পানি গঠন করেছে। এই প্রতিষ্ঠানে একজন অতিরিক্ত সচিব এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ স্যাটেলাইট নিয়ে নানা ধরনের নেতিবাচক কথা বলে যাচ্ছে বিএনপি। এত বড় অর্জনের স্বীকৃতি না দিয়ে প্রতিহিংসা দেখিয়ে চলেছে। এ ধরনের কথা জাতি মেনে নেবে না। ডাক ও টেলিযোগাযোগ এবং তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার রবিবার টেলিফোন সাক্ষাতকারে এ কথা বলেন। মন্ত্রী বলেন,বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ সফল উৎক্ষেপণে জাতি গর্বিত। বাঙালীর আত্মমর্যার আসন উন্নত বিশ্বের সারিতে। এটাকে ছোট করার চেষ্টা জাতি মেনে নেবে না। যে যাই বলুক জাতির জীবনে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের গুরুত্ব অপরিসীম। আজ যারা স্যাটেলাইট নিয়ে নানা উপহাসমূলক কথা বলছেন, তারাই একদিন এর সুফল ভোগ করবেন। বলার চেষ্টা হচ্ছে, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যক্তির বা গোষ্ঠী বিশেষের হাতে চলে যাবে। যারা এটা বলছেন তারা আসলে মূর্খের স্বর্গে বসবাস করছেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হয়েছে রাষ্ট্রের টাকায়। এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ। কোন ব্যক্তি বিশেষ এর মালিক হতে পারে না। গোটা জাতি স্যাটেলাইটের সুবিধা ভোগী হবেন। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট একটি কমিউনিকেশন ও ব্রডকাস্টিং স্যাটেলাইট। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ ‘ওয়েদার স্যাটেলাইট’ উৎক্ষেপণ করবে। আরও যে সব স্যাটেলাইট রয়েছে, তাও উৎক্ষেপণ করা হবে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, এত বিশাল টাকা ব্যয় করে স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করার কোন মানে হয় না। ১৫ বছরে এই টাকা উঠে আসবে না। রাষ্ট্রের এমন কিছু বিষয় থাকে যা দিয়ে লাভ ক্ষতির হিসাব হয় না-রাষ্ট্রের মান নির্ণয় হয়। অবশ্যই স্যাটেলাইটের লাভ ক্ষতির হিসাব করবো তবে টাকার অঙ্ক দিয়ে নয়। স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের পরে এই প্রথম মুখ খুললেন মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। তিনি বলেন, যারা বলছেন ১৫ বছরে বিনিয়োগকৃত টাকা উঠে আসবে কিনা সেই হিসাব করছেন তারা আসলে বাংলাদেশকে ভালবাসেন না। সাবমেরিন ক্যাবল কোনসোর্টিয়াম সিমি-ইউ-৪ ক্যাবল ফ্রি দিতে চেয়েছিল। কিন্তু নেয়নি। সেই ক্যাবলই পরে চার হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে আনতে হয়েছে। ওই সময় যদি ক্যাবল নেয়া হতো আজ দেশের চেহারা অন্য রকম থাকত। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে স্যাটেলাইটের মালিক দেশ হিসেবে বিশ্বের বুকে ৫৭তম দেশ। এই অর্জন কোনভাবেই ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। আমরা এখন স্যাটেলাইট মালিক দেশগুলোর সদস্য। আমাদের মাথাও আজ তাদের সারিতে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট টেলিযোগাযোগ সেক্টরকে উন্নত থেকে উন্নততর জায়গায় নিয়ে যাবে। দেশের ক্যাবল টিভিকে অন্য দেশের স্যাটেলাইটের ওপর নির্ভরশীল হতে হবে না। নিজের দেশের স্যাটেলাইট থেকেই ব্যান্ডউইথ পাওয়া যাবে। মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, জাতি হিসেবে আমরা খুব কৃপণ। দেশের এত বড় অর্জনকেও বিএনপি স্বীকার করে নিতে পারছে না। যদি পারত তাহলে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে উড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সরকারকে সাধুবাদ জানাত। তা না করে নানা নেতিবাচক সমালোচনায় মুখরিত হচ্ছে। এটা অন্য কোন দেশেই নেই। পাশের দেশ ভারত জাতীয় স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে সমর্থন জানান। অথচ দেশের জন্য এত বড় অর্জনকেও তারা মেনে নিতে পারছেন না। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ উপলক্ষে আমরা দেশব্যাপী উৎসব অনুষ্ঠানের আয়োজন করব। এই আয়োজনে দেশের সব মানুষকে সম্পৃক্ত করা হবে। আমরা স্যাটেলাইট সম্পর্কে মানুষকে জানাব। এখন মন্ত্রণালয় উৎসব অনুষ্ঠান নিয়ে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী যে দিন সময় দেবেন সেদিনই এই উৎসব অনুষ্ঠান হবে। রাতেই মহাকাশে যাচ্ছে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মুহূর্তটি বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ দেশের সব কটি বেসরকারী টেলিভিশন সরাসরী সম্প্রচার করবে। দুর্লভ এ মুহূর্ত সরাসরি প্রচারের ব্যবস্থা নিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ দেশের সব জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, স্যাটেলাইটটি ১৫ বছর মেয়াদে সম্প্রচার, টেলিযোগাযোগ ও ডেটা কমিউনিকেশনের কাজে ব্যবহার হবে। এ জন্য স্যাটেলাইটটিতে রয়েছে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইটের ব্যবস্থাপনার জন্য রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ‘বাংলাদেশ কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট কোম্পানি লিমিটেড’ (বিসিএসসিএল) নামে একটি কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানে একজন অতিরিক্ত সচিব এমডি হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। স্যাটেলাইটটির ৪০টি ট্রান্সপন্ডারের মধ্যে ১৪টি সি ব্যান্ড ও ২৬টি কেইউ ব্যান্ড। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর লাইফ ১৫ বছর। তবে ডিজাইন লাইফ টাইম ১৮ বছর। বাকি তিন বছর স্যাটেলাইটটি গ্রাউন্ড স্টেশনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে। স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) ডিশ সার্ভিস, ভিডিও সম্প্রচার করা যাবে। এ ছাড়া ভি-স্যাট নেটওয়ার্ক, ব্রডব্যান্ড, কমিউনিকেশন ট্র্যাংক সুবিধাও পাওয়া যাবে। ডিটিএইচ সেবা কেইউ ব্যান্ডের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। দেশের গ্রামাঞ্চলে ডিজিটাল টিভি ও রেডিও সম্প্রচার পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে। যোগাযোগের জন্য বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বড় ভূমিকা পালন করবে। মোস্তাফা জব্বার বলেন, যারা বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের ব্যয় নিয়ে কথা বলছেন-তারা কি জানেন এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের ২০ লাখ মার্কিন ডলার সাশ্রয় হবে। এখন ক্যাবল টিভিগুলো বিদেশী স্যাটেলাইটকে ভাড়া বাবদ এই টাকা দিচ্ছে। এর বাইরে আমরা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান, তাজিকিস্তান, কাজাকিস্তান এবং উজবেকিস্তানের অংশ বিশেষে সেবা দেয়া সম্ভব হবে। এসব দেশ থেকে বিরাট অংকের বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে।
×