ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৈশাখেই আষাঢ়ের বৃষ্টি পথঘাট জলমগ্ন স্থবির জীবনযাত্রা

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৩০ এপ্রিল ২০১৮

বৈশাখেই আষাঢ়ের বৃষ্টি পথঘাট জলমগ্ন স্থবির জীবনযাত্রা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকার আকাশে সৃষ্ট বজ্রমেঘ ঢালছে বৃষ্টি। বৈশাখেই আষাঢ়ের বর্ষণ। দিনভর কালবৈশাখীর বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় রবিবার চরম দুর্ভোগে পড়ে রাজধানীবাসী। বিশেষ করে ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টিতে নগরবাসীর সকালের জীবন হয়ে পড়ে স্থবির। বৃষ্টিতে নগরীর রাস্তাঘাট ও গলিপথ হয়ে ওঠে কর্দমাক্ত ও অস্বাস্থ্যকর। জলাবদ্ধতার পাশাপাশি রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির কাজও রাজধানীবাসীর জীবনকে বিষিয়ে তোলে। নগরীর অনেক রাস্তা ও অলিগলি বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে অসংখ্য খানাখন্দ। এসব জায়গায় পা রাখতে গিয়ে অনেক পথচারীই দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। অনেক এলাকার ড্রেনেজ ব্যবস্থা অকার্যকর হয়ে পড়ে। হাঁটুপানিতে ব্যাহত হয় যান চলাচল । ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টির সঙ্গে ঘন ঘন বিদ্যুত চমকানিতে নগরবাসীর মনে আতঙ্ক জন্ম দেয়। আবহাওয়ার এমন অবস্থা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। আর মে মাসেও সৃষ্টি হতে পারে নিম্নচাপ ও ঘূর্ণিঝড়। রবিবার রাজধানীবাসীর সকাল শুরু হয় বৃষ্টির মধ্য দিয়ে। মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত চলতে থাকে টানা দু’ঘণ্টা। তারপর থেমে থেমে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে রাত পর্যন্ত। সরকারী ছুটি থাকলেও ঝিরঝিরে বৃষ্টি, আবার কখনও মুষলধারের বৃষ্টিতে কাকভেজা হয়ে নিজ নিজ গন্তব্যে ছুটেছেন অনেক বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মজীবী মানুষ। নিকটস্থ দোকান ও রেস্টুরেন্টগুলোর সামনে দাঁড়িয়ে যাত্রীবাহী বাহনের অপেক্ষায় রয়েছেন তারা। তাদের অনেকের হাতে ছাতা নেই। সামনে পেয়েও বৃষ্টির কারণে তাদের কেউ কেউ বাসে উঠতে পারেননি। এভাবে রবিবারের বৃষ্টিতে হাজারীবাগের নিম্নাঞ্চল, রাজধানী সুপার মার্কেট, নিউ মার্কেট, ধানম-ির অনেকস্থানেই চরম দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষজন। পুরান ঢাকা, পীরেরবাগ, সেনপাড়া পর্বতা, শেওড়াপাড়া, আদাবর, মোহাম্মদপুর, নাখালপাড়া, মিরপুর, টিকাটুলি, বাসাবো, মুগদা, শ্যামলী, রামপুরা, রাজারবাগ, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, মৌচাক, মালিবাগ, মতিঝিলসহ আশপাশের এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার অজুহাত দেখিয়ে চালকরা অস্বাভাবিক হারে বাড়িয়ে দেন রিক্সা, অটোসিএনজি ও ট্যাক্সিক্যাবের ভাড়া। সকাল আটটার দিকে আকাশ আঁধার করে রাজধানীতে ধেয়ে আসে ঝড়োহাওয়াসহ বৃষ্টি। আবহাওয়া অফিস বলছে, ঝড়ের সময় বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৭৩ কিলোমিটার। ঝড়-বৃষ্টির এই প্রবণতা আরও কয়েক দিন চলবে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। সকালের বৃষ্টির পর ঢাকা ওয়াসা ভবনের পাশে পুরো কাওরানবাজার এলাকায় জমে ওঠে হাঁটুপানি। মার্কেটটির বেশ কয়েকটি ভবনের নিচতলায় প্রবেশ করে নোংরা পানি। মিরপুর ১০ নম্বর থেকে ১৩ নম্বর পর্যন্ত সড়কের দু’পাশে, ১৪ নম্বর সেকশন, শেওড়াপাড়া, ইব্রাহিমপুর, কচুক্ষেত এলাকার বিভিন্ন সড়কে পানি জমে যায়। মিরপুরে মেট্রোরেলের কাজ চলছে বলে সড়কে গাড়ি চলার জায়গা এমনিতেই কমে গেছে। তার মধ্যে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় ১০ নম্বর থেকে ফার্মগেটমুখী সড়কে দেখা যায় ব্যাপক যানজট। অনেক গাড়িকে মিরপুর ১ নম্বর ঘুরে ফার্মগেটের দিকে যেতে দেখা যায়। পশ্চিম রাজাবাজার, ইন্দিরা রোডের বিভিন্ন সড়কে দেখা যায় নিষ্কাশন নালা থেকে উপচে ময়লা পানিতে রাস্তা সয়লাব হয়ে আছে। জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার পূর্বপাশের রাস্তা, চন্দ্রিমা উদ্যানের মুখে এবং জাহাঙ্গীর গেট এলাকার সড়কের এক প্রান্তেও জলাবদ্ধতা দেখা যায়। দুপুরের দিকে ফার্মগেট থেকে কাওরান বাজারে যাওয়ার সড়কেও বিভিন্ন অংশে পানি জমে থাকতে দেখা যায়। আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে পলাশীমুখী সড়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিমনেসিয়ামের সামনের সড়ক, তেজগাঁও সাতরাস্তা থেকে মহাখালীগামী সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পানি জমেছিল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত। নাবিস্কো এলাকায় পানির কারণে যান চলাচলের জায়গা কমে আসায় সৃষ্টি হয় যানজট। আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, মে মাসে দেশে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। ওই মাসে বঙ্গোপসাগরে ১-২টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এর মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।ওই মাসে দেশের উত্তর, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ২-৩ দিন বজ্রসহ মাঝারি/ তীব্র কালবৈশাখী/বজ্র-ঝড় ও দেশের অন্যত্র ৩-৪ দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী/বজ্রঝড় হতে পারে। আর দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে ২-৩ টি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং অন্যত্র ২-৩টি মৃদু/মাঝারি তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
×