ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংস্কৃতি সংবাদ

সৈয়দ হকের উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৭ এপ্রিল ২০১৮

সৈয়দ হকের উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কর্কট ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েও থেমে থাকেননি সৈয়দ শামসুল হকের কলম। অপ্রতিরোধ্য ক্যান্সারকে পাশ কাটিয়ে সৃজনশীলতায় নিমগ্ন থেকেছেন এই সব্যসাচী লেখক। হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও অবিরাম লিখেছেন কবিতার পক্তিমালা। মৃত্যুব্যাধিকে উপেক্ষা করে সৃষ্টির বিভোরতায় রচনায় করেছেন দেশভাগের বিয়োগান্তক ঘটনানির্ভর উপন্যাস। সেই সুবাদে সর্বশেষ লেখা তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘উৎকট তন্দ্রার নিচে’। সুস্থতায় অবস্থায় শুরু করা ‘নদী কারো নয়’ নামের উপন্যাসটিরও সমাপ্তি টেনেছেন রোগশয্যায়। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় উপন্যাস ও কাব্যগ্রন্থটি প্রকাশ করে অন্যপ্রকাশ। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত হলো বই দু’টির আনুষ্ঠানিক প্রকাশনা উৎসব। বিকেলে জাতীয় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনালয়ে এ মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সদ্য প্রয়াত কবি বেলাল চৌধুরীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিটের নীরবতা পালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর ছিল বই নিয়ে আলোচনা এবং লেখকের রচনার অংশবিশেষ পাঠ। প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। গ্রন্থ দু’টি নিয়ে আলোচনা করেন প্রাবন্ধিক ও গবেষক মফিদুল হক, কথাসাহিত্যিক আনোয়ারা সৈয়দ হক, কবি সাজ্জাদ চৌধুরী এবং জাতীয় জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী। অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন ইমেরিটাস অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম। কবিকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন ক্যামেরার কবিখ্যাত আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন। সৈয়দ হকের কাব্যগ্রন্থ থেকে অংশবিশেষ পাঠ করেন কবি তারিক সুজাত। উপন্যাস থেকে অংশবিশেষ পাঠ করেন কবি পিয়াস মজিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন কথাসাহিত্যিক হাসনাত আবদুল হাই। আসাদুজ্জামান নূর বলেন, বোহেমিয়ান স্বভাবের হলেও জীবনযাপনে খুবই সুশৃঙ্খল ছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। ছিল প্রবল মানসিক শক্তি। অসুস্থ অবস্থায়ও তাঁর মধ্যে মৃত্যুভয় দেখিনি। বহুমুখী প্রতিভায় উজ্জ্বল এই মানুষটি গান, কবিতা, গল্প-উপন্যাসসহ শিল্প-সাহিত্যের নানা শাখায় পদচারণার পাশাপাশি সাংবাদিকতা করেছেন। চলচ্চিত্রবিষয়ক পত্রিকায় কাজ করেছেন; এমনকি চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্যও লিখেছেন। আধুনিকতার দিক দিয়ে তিনি ছিলেন অন্য সবার চেয়ে এগিয়ে। একজন অভিনয় শিল্পী হিসেবে হক ভাইকে আমি প্রবলভাবে অনুভব করি। বিশেষ করে মঞ্চ অভিনেতা হিসেবে। আমি তাঁর রচিত নুরলদীনের সারাজীবন, ঠাট্টা তামাশা ও মুখোশ নাটকে অভিনয় করেছিলাম। মন্ত্রী জানান, সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষ সৈয়দ শামসুল হকের জন্মস্থান কুড়িগ্রামের জলেশ্বরীতে তাঁর নামে একটি স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্মৃতিকেন্দ্রটির নক্সা নক্সার কাজ সম্পাদন করেছেন রবিউল হোসেন। শীঘ্রই এই স্মৃতিকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হবে। রফিকুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের নিজস্ব সাহিত্যের যাত্রাকালের অন্যতম পথিক সৈয়দ শামসুল হক। দারুণ রসিক এই লেখক শিল্প-সাহিত্যের ভুবনে ক্রমাগত নিজেকে উন্নীত করেছেন। দেশবিভাগের মতো মর্মস্পর্শী নিয়ে এদেশের লেখকদের খুব বেশি লেখা নেই। সেই দিক থেকে সৈয়দ হকের নদী কারো নয় বইটি একটি অনন্য সৃষ্টি। আর দেশ বিভাগের সঙ্গে সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের সম্পৃক্ততা রয়েছে। তাই এই উপন্যাসটির মাধ্যমে লেখকের ইতিহাস চেতনার পরিচয় পাওয়া যায়। অন্যদিকে সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা সব সময়ই আধুনিক ও বৈশ্বিক। এক অর্থে কবিতাই ছিল তাঁর জীবন-মরণের সঙ্গী। মফিদুল হক বলেন, ব্রিটিশ উপনিবেশকালীন ২০০ বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে আসা স্বাধীনতার সূত্র ধরেই ঘটেছিল দেশ বিভাগ। সাহিত্যে সেই সময়ের ছবি আঁকা খুবই দুরূহ কাজ। সেই কাজটিই করেছেন সৈয়দ শামসুল হক। দেশ বিভাগকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া জীবনের অভিঘাতকে মেলে ধরেছেন নদী কারো নয় নামের উপন্যাসে। যে কোন পাঠকের জন্য এই বই পাঠ হবে এক স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। সব্যসাচীর সহধর্মিণী আনোয়ারা সৈয়দ হক বলেন, তাঁর রচনার ভাষা একদিকে যেমন দারুণ সমৃদ্ধ, অন্যদিকে গভীর চিন্তাযুক্ত। নদী কারও নয় বইটি যেন একটি জটিল ঘূর্ণাবর্ত। দেশ বিভাগের কারণে দুই বন্ধুকে হারিয়েছিলেন সৈয়দ শামসুল হক। সেই বিচ্ছেদের তাড়নাই হয়তো তাঁকে উদ্বুদ্ধ করেছে এমন বই লিখতে। তিনি আরও বলেন, আমার আজ একটু লজ্জাই লাগছে। সৈয়দ হক বেঁচে থাকতে কখনওই বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেননি। এটা করার কথা শুনলেও তিনি রেগে যেতেন। কিন্তু তারপরেও প্রথমবারের মত বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করতে আমি রাজি হই। সত্যি কথা বলতে এ দিনটির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। কারণ এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে সৈয়দ হককে আবার অনুভব করতে পারব, যারা তাঁর সম্পর্কে বলবেন সেসব কথার মধ্য দিয়ে উপলব্ধি করব। সাজ্জাদ শরীফ বলেন, সাহিতচর্চায় কোনও ছকের মধ্যে নিজেকে আটকে রাখেননি সৈয়দ শামসুল হক। সৃষ্টি করেছেন নিজস্ব ধারা। তাই তার প্রতিটি গ্রন্থই পাঠককে দেয় ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতা। হাসনাত আবদুল হাই বলেন, মৃত্যুশয্যায় বসে সৈয়দ শামসুল হকের লেখালেখি চালিয়ে যাওয়া একটি বিরল ঘটনা। ‘নদী কারও নয়’ উপন্যাসটি মনে আমার মনে হয়েছে, এটি সমাপ্ত হয়নি। এই অসম্পূর্ণতাই ওই উপন্যাসটির প্রকৃত সার্থকতা। কারণ, উপন্যাস কখনও জীবনের দর্পণ হতে পারে না। আর উপন্যাসটির আরেকটি বড় বিষয় হচ্ছে, এখানে শুধু অতীত নয়, ভবিষ্যতের কথাও বলা হয়েছে। ‘তাহারা অবশেষে সুখে-শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল’ উপন্যাসের এমন তথাকথিত ফর্ম কখনোই উপযুক্ত নয়। ‘উৎকট তন্দ্রার নিচে’ সৈয়দ হকের ৫০তম কাব্যগ্রন্থ। এখানে ঠাঁই পেয়েছে ৪২টি কবিতা। কর্কট ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার পর লন্ডন ও ঢাকায় তাঁর রোগশয্যায় কবি রচনা করেছেন এই গ্রন্থের অধিকাংশ কবিতা। এইসব কবিতায় জন্মভূমি বাংলাদেশ, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, কর্কট রোগে আক্রান্ত উৎকট সময়ে চেতনায় খেলা করা নানা অনুভূতি, মৃত্যুবোধ ইত্যাদি মূর্ত হয়ে উঠেছে। রয়েছে বিভিন্ন উপলক্ষে লেখা পঙ্ক্তিমালা, বন্ধু, সন্তান, অগ্রজ এবং স্নেহভাজনদের নিয়ে লেখা কবিতা। অন্যদিকে তাঁর ‘নদী কারো নয়’ উপন্যাসটি দেশভাগ নিয়ে রচিত। বৃহৎ পরিসরে লেখা এ উপন্যাসে ওঠে এসেছে দেশভাগের ইতিহাস, উন্মুল মানুষের যন্ত্রণাসহ এক মানবিক আখ্যান। রবিবার চারুকলায় দিনব্যাপীরুদ্রমেলা ॥ দ্রোহের কবি রুদ্র মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ স্মরণে ২৯ এপ্রিল রবিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় অনুষ্ঠিত হবে দিনব্যাপী রুদ্রমেলা। রুদ্র সংসদের আয়োজনে ঐদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ‘ভাষার কসম খেয়ে আমরা দাঁড়াব ঘিরে আমাদের মাতৃভূমি, জল, অরণ্য জমিন’ শ্লোগানে মেলার উদ্বোধন করবেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম। চারুকলার বকুলতলায় দিনব্যাপী এই মেলায় থাকছে একক ও দলীয় আবৃত্তি, নৃত্য ও সংগীত। এবারের রুদ্রমেলা আয়োজনের লক্ষ্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছকে আহ্বায়ক ও রুদ্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক কামাল পাশা চৌধুরীকে সদস্য সচিব করে ১০১ সদস্য বিশিষ্ট একটি মেলা উদ্যাপন কমিটিও গঠন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে টিএসসিতে রুদ্র সংসদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মেলা কমিটির আহ্বায়ক গোলাম কুদ্দুছ ও সদস্য সচিব কামাল পাশা চৌধুরী। রবীন্দ্র-নজরুল কবিতাসন্ধ্যা ‘একই বৃন্তে’ ॥ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের কবিতায় সজ্জিত আবৃত্তিসন্ধ্যায়। ড. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী ও ফখরুল ইসলাম তারা পরিবেশিত এই আবৃত্তিসন্ধ্যার শিরোনাম ছিল ‘একই বৃন্তে’।
×