ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কলাপাড়ায় বাঁধ দিয়ে খাল দখল ॥ নষ্ট হচ্ছে রবিশস্য

প্রকাশিত: ০৬:৪৮, ২১ এপ্রিল ২০১৮

 কলাপাড়ায় বাঁধ দিয়ে  খাল  দখল ॥ নষ্ট  হচ্ছে রবিশস্য

নিজস্ব সংবাদদাতা, কলাপাড়া, ২০ এপ্রিল ॥ বালিয়াতলী ইউনিয়নের সেখাউ খালের দুই পাড়ের শত শত কৃষক পরিবার শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রায় ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন প্রতিবাদ করেছে। খালটি দখল করে একের পর এক বাঁধ দিয়ে দখলের প্রতিবাদে কৃষকরা এই প্রতিবাদ কর্মসূচী করেছে। দুই পাড়ের কৃষক পরিবারের অভিযোগ প্রায় চার কিলোমিটার দীর্ঘ খালটিতে অন্তত পাঁচটি বাঁধ দেয়া হয়েছে। ফলে দুই পাড়ের কৃষকের বোরো ক্ষেতে সেচ দিতে পারেনি। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ফসলসহ রবিশস্য। খালের পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কোন গরিব মানুষ পর্যন্ত খালে ঝাকি জাল দিয়েও মাছ ধরতে পারছে না। স্থানীয় সরকারী কর্মচারী ইউসুফ আলী ও স্থানীয় আলতাফ হোসেন সরকারী এই খালে একাধিক বাঁধ দিয়ে দখল করে রেখেছে। এমনকি ওই বাঁধ কেটে দেয়ার জন্য চাপ দিলে খালকে নিজেদের মাছের ঘের দেখিয়ে মাছ চুরির মিথ্যা মামলা পর্যন্ত করা হয়েছে। এসব নিয়ে এখন সোনাপাড়া, পক্ষিয়াপাড়া, নলবুনিয়া, তুলাতলী, পুর্ব সোনাপাড়ার মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, খালটির দুই পাড়ে হাজারো কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের বসবাস। খালটির পানির ওপর নির্ভর করে অন্তত অর্ধশত চাষী বোরোর আবাদ করেছেন। করেছেন বহুজনে শত শত একর জমিতে রবিশস্যের আবাদ। খালটিতে সরকারীভাবে অর্ধকোটি টাকার বেশি ব্যয় করে দুটি ব্রিজ ও দুটি কালভার্ট করা হয়েছে। ইউপি মেম্বার বাদল চাকলাদার জানান, খালটিতে ইউসুফসহ কয়েকজনে অন্তত পাঁচটি বাঁধ দিয়ে জবরদখল করে রেখেছে। কৃষক সালাম হাওলাদারের দাবি খালের পানি কাউকে ওই প্রভাবশালী মহল ব্যবহার করতে দেয় না। সকল কৃষক জানান, এই খালটি দুই বছর আগে সরকারীভাবে পুনঃখনন করার পর ১২ মাস মিঠাপানি থাকছে। আমতলীর বড় খালের সঙ্গে সংযোগ রয়েছে। কিন্তু বাঁধ দেয়ার কারণে পানি প্রবেশ করানো যায় না। ফলে এ বছর বোরোর আবাদ করলেও কৃষক রাখাইন অংশে মাদবর, সফেজ সিকদার, বামোসে মং, শামসুল হক, বাবুল হাওলাদার, সুন্দর আলী, জাকির হোসেন, হাতেম আলী হাওলাদার, রাজ্জেক তালুকদার, নিজাম তালুকদার, জলিল হাওলাদার, সত্তার হাওলাদারসহ অনেকের ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এসব কৃষক এখন প্রচ- ক্ষিপ্ত হয়ে আছেন। তাদের দাবি খালটি দখলমুক্ত করে দেয়া হোক। দরিদ্র চল্লিশোর্ধ গৃহবধূ শামসুন্নাহার জানান, এই খালটিতে ঝাকি জাল দিয়ে মাছ ধরে সাতজনের সংসারের যোগান দিচ্ছিলেন তার স্বামী। এখন পারেন না। দখলদাররা মাছ ধরতে দেয় না। তার ভাষায়, ‘আমরা নাইতে পর্যন্ত পারি না। খালে কাডা দিয়া রাখছে।’ এসব মানুষ এখন চরম সঙ্কটে পড়েছেন। ব্যবহারের পানিও মিলছে না। মানুষ এসব দখলদারদের কবল থেকে মুক্তি চেয়েছেন। এছাড়া এই খাল দখলে বাধা দেয়া এবং প্রতিবাদ করায় দায়েরকৃত মামলাও প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। ইউপি চেয়ারম্যান এবিএম হুমায়ুন কবির জানান, সরকারী খাল দখলমুক্ত করতে তিনিও উপজেলা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সহকারী কমিশনার (ভূমি) খন্দকার রবিউল ইসলাম জানান, খাল দখলদার যেই হোক তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×