ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কিউবার নতুন নেতা মিগুয়েল দিয়াস কানেল

ক্যাস্ট্রো যুগের অবসান

প্রকাশিত: ০৪:২০, ২০ এপ্রিল ২০১৮

ক্যাস্ট্রো যুগের অবসান

কিউবায় ক্যাস্ট্রো পরিবারের ছয় দশকের শাসনের অবসান ঘটেছে। রাউল কাস্ট্রো বৃহস্পতিবার তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী মিগুয়েল দিয়াস-কানেলের কাছে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। বুধবার দেশটির ন্যাশনাল এ্যাসেম্বলির সদস্যরা ৫৭ বছর বয়সী কানেলকে রাউলের উত্তর উত্তরসূরি নির্বাচন করে। কানেল পেশায় একজন প্রকৌশলী। ১৯৫৯ সালের বিপ্লবের পর থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ফিদেল ক্যাস্ট্রো দেশটিতে শাসন করেন।- বিবিসি ১২ বছর দায়িত্ব পালন শেষে এ দিনই মিগুয়েলের কাছে নেতৃত্ব হস্তান্তর করেন ৮৬ বছর বয়সী রাউল। এর মধ্য দিয়ে প্রায় ৬ দশক পর কিউবার প্রেসিডেন্ট হলেন এমন এক ব্যক্তি যার নামের শেষে ক্যাস্ট্রো নেই। প্রেসিডেন্ট পদ থেকে সরে গেলেও ২০২১ সালের পরবর্তী কংগ্রেস পর্যন্ত কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির ফার্স্ট সেক্রেটারি থাকছেন রাউল। ফলে সরকার পরিচালনার ক্ষেত্রেও তার গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব থাকবে বলে ধারণা পর্যবেক্ষকদের। শারীরিক অসুস্থতার জন্য ২০০৬ সালে ভাই ফিদেল দায়িত্ব ছেড়ে দিলে কিউবার প্রেসিডেন্ট হন রাউল। ১৯৫৯ সালের বিপ্লবে মার্কিন মদদপুষ্ট একনায়ক বাতিস্তাকে উৎখাতের পর পাঁচ দশক কিউবা ছিল ফিদেলের নেতৃত্বে। তিনি ১৯৭৬ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সংবিধানে প্রেসিডেন্টের হাতে একচ্ছত্র ক্ষমতা দেয়ায় ওই বছরই পদ বদলে বসেন রাষ্ট্রের শীর্ষপদে। ক্যাস্ট্রো ভ্রাতৃদ্বয়ের পর মিগুয়েলই হলেন একদলীয় সোশ্যালিস্ট রাষ্ট্র কিউবার নতুন প্রেসিডেন্ট, যার হাতে ক্ষমতা সঁপে দিয়ে নিশ্চিন্ত হতে চাইছেন বিপ্লবের সম্মুখ সারির নেতৃত্ব। তুলনামূলক তরুণ এ নেতাকে রাউলের শুরু করা অর্থনৈতিক সংস্কার কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়াসহ প্রবৃদ্ধি বাড়ান এবং ট্রা¤প প্রশাসনের নানামুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে বলে ধারণা করছেন পর্যবেক্ষকরা। রাউল ক্যাস্ট্রোর বড় ভাই ফিদেল ক্যাস্ট্রো ১৯৫৯ সালে যখন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত স্বৈরশাসক ফালজেনসিও বাতিস্তাকে অপসারণ করেন, তখন দিয়াস-কানেলের জন্মই হয়নি। ১৯৬০ সালে জন্ম নেয়া মিগুয়েল তরুণ বয়সেই যোগ দেন সান্তা ক্লারার ইয়ং কমিউনিস্ট লীগে। স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ত্বরিৎ প্রকৌশল পড়ানোর সময় থেকে তার বিকাশ দৃশ্যমান হতে থাকে। ৩৩ বছর বয়সে তিনি ইয়ং কমিউনিস্ট লীগের দ্বিতীয় স¤পাদক নির্বাচিত হন। গত তিন দশক ধরে সরকার ও কমিউনিস্ট পার্টিতে থাকা অবস্থায় সততার জন্য তিনি সুনাম কুড়ান। নিজ এলাকা কিউবার কেন্দ্রীয় প্রদেশ ভিলান্তা ক্লারায় তিনি অফিসের গাড়ির পরিবর্তে বাইসাইকেলে চলাচল করতেন। গত পার্লামেন্ট নির্বাচনে তিনি অন্য ভোটারের সঙ্গে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছিলেন। চিন্তাভাবনায় তিনি অন্যদের তুলনায় উদার। ২০১৩ সালে কিছু শিক্ষার্থী সরকারের সমালোচনা করার পরিপ্রেক্ষিতে ইন্টারনেটের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়। ওই সময় ওই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দেখা করেন দিয়াস-কানেল। পরে তিনি শিক্ষার্থীদের নিয়ে গণমাধ্যমের সামনে আসেন এবং বলেন, ইন্টারনেটের এই যুগে কোন কিছু নিষিদ্ধ করা মতিভ্রম ছাড়া কিছু নয়। বিশ্লেষকদের মতে, দিয়াস-কানেল কিছু ক্ষেত্রে সংস্কার না এনে পারবেন না। দেশটির অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভাল নয়। ২০১২ সালে যেখানে রফতানি আয় ছিল সাড়ে আট বিলিয়ন ডলার ২০১৬ সালে তা নেমে দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক দুই বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ খাদ্যসামগ্রী বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয়। কিউবার দুই-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষের মাসিক গড় আয় মাত্র ৩০ ডলার। তবে মাথাপিছু আয় কম হলেও শিক্ষা, চিকিৎসা সেখানে বিনামূল্যে মেলে। খাদ্য ও আবাসন খাতেও রয়েছে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকি। রাউল ক্যাস্ট্রোর এক দশকের শাসনামলে ভঙ্গুর অর্থনীতিকে গতিশীল করতে এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বেসরকারী খাতে অংশগ্রহণ বাড়াতে নানা সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়। তবে সেসব বাস্তবায়নে সরকারের কার্যকর ভূমিকা না থাকায় তা প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তবে ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক উইলিয়াম লিওগ্রান্দের মতে, সংস্কারের মধ্য দিয়ে কিউবা দীর্ঘ মেয়াদে সুফল পাবে। রাউলের উত্তরসূরিরা তাঁর সংস্কারের পথে হাঁটলে তিনি কিউবার দেং জিয়াও পিং হয়ে থাকবেন।
×