ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

টেকনাফে মুক্তিযোদ্ধা সুলতান গুরুতর অসুস্থ

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৪ এপ্রিল ২০১৮

টেকনাফে মুক্তিযোদ্ধা সুলতান গুরুতর অসুস্থ

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ টেকনাফে সোলতান আহমদ নামে এক মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর অসুস্থ হয়ে বাড়িতে শয্যাশায়ী। দেশ-মাতৃকার যুদ্ধে বিজয়ী এই বীরসন্তান জীবন সায়াহ্নে এসে শুভাকাক্সক্ষীসহ সকলের কাছে দোয়া কামনা করেছেন। সোলতান আহমদ (বীর মুক্তিযোদ্ধা) তথা মুজিব বাহিনী, (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সনদ নং-৯৩৮৮)। তার সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে আসে পাক হানাদারদের সঙ্গে সম্মুখ সমরে অংশ নেয়ার কাহিনী। স্মৃতিচারণকালে তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মুজিবীয় আদর্শের লড়াকু সৈনিক। বিভিন্ন সময় স্বাধীনতাবিরোধী শক্তির নির্যাতনের শিকার হয়েছি। ১৯৬৬ সাল থেকে আমি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টেকনাফ থানা শাখা তথা টেকনাফ উপজেলা শাখার বিভিন্ন পদে দীর্ঘ ৫২বছর আওয়ামী রাজনীতিতে সম্পৃক্ত। বর্তমানে আমি হ্নীলা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহ্বানে আমি মহান স্বাধীনতাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম। ১৯৭১ সালে ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণের পর তৎকালীন টেকনাফ থানাধীন হ্নীলা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে শহীদ হাবিলদার এজাহার মিয়ার নেতৃত্বে অন্য সহযোগীসহ প্রশিক্ষণ শুরু করি। ইতোমধ্যে কক্সবাজারের বিভিন্ন জায়গায় প্রশিক্ষণ শুরু হয়। হ্নীলা তথা টেকনাফ থানার সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তখন আমাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ১৯৭১ সালে ৫ মে পাক হানাদার বাহিনী বিশাল বহর নিয়ে প্রবেশ করে নারকীয় নির্যাতন করলে প্রশিক্ষণরতমুক্তিযোদ্ধাগণ আত্মগোপনে চলে যায়। আমিও তাদের মতো পার্শ^বর্তী এলাকা চকরিয়া কাকারা মানিকপুর গ্রামে আত্মগোপনে যাই। সেখানে কয়েক দিন আত্মগোপনে থাকার পর আমি পুনঃপ্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে ১নং সেক্টর চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি পাহাড়ে চলে যাই। গ্রুপ কমান্ডার মোহাম্মদ হাশেমের নেতৃত্বে ২১ দিন প্রশিক্ষণের পর তার সঙ্গে ফটিকছড়ি, রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, গহিরা, পাহাড়তলী, হাটহাজারীতে অপারেশন করি। এরপর আরও উচ্চতর সামরিক প্রশিক্ষণের জন্য ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে সাবরুম থানার একটি আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যাই। সেখানে দেখা হয় ফিরোজ আহমদ ও তৎকালীন তুখোড় ছাত্রনেতা কবি ও সাংবাদিক শওকত হাফিজ খান রুশিরœ। তার নেতৃত্বে ১২জনের একদল মুক্তিযোদ্ধার সঙ্গে আমি চলে আসি মীরসরাই এলাকায়। ’৭১ সালের আগস্ট মাসে মীরসরাইতে প্রথম বারের মতো পাক বাহিনীর সঙ্গে ৩ঘণ্টার এক সম্মুখযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে লড়াই করেছি। পরে ফটিকছড়ি-রাঙ্গুনিয়াতে আরও ২বার পাক বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। এসব এলাকায় রাজাকার-আল বদর ও শান্তিবাহিনী সদস্যদের বিরুদ্ধে একাধিকবার উল্লেখযোগ্য অপারেশনে অংশ নেই। ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জিত হলে আমিও অন্যদের মতো জীবন ধারণে আত্মনিয়োগ করি। এরপর হার্ট ডিজিজ, ফিস্টুলা ও কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণে বাড়িতে অবস্থান। সে সময় হতে এখনও বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছি।
×