ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আকাশপথে দেশ বিদেশে ভ্রমণের লোভনীয় অফার

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২৪ মার্চ ২০১৮

আকাশপথে দেশ বিদেশে ভ্রমণের লোভনীয় অফার

আজাদ সুলায়মান ॥ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে পৌঁছার অন্যতম সূচক হতে পারে পর্যটন খাত। ক্রয়ক্ষমতা বাড়লে মানুষের সচ্ছলতা বাড়ে। রুচিরও পরিবর্তন ঘটে। তখণই মানুষ হয়ে ওঠে ভ্রমণপিপাসু। শুক্রবার এভাবেই আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলার সফলতা সম্পর্কে ব্যাখ্যা দিচ্ছিলেন এভিয়েশন ও পর্যটন বিশেষজ্ঞ কাজী ওয়াহিদুল আলম। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে তিনদিনব্যাপী আন্তর্জাতিক পর্যটন মেলায় গিয়ে দেখা যায় ব্যাপক ভিড়। লোকজনে ঠাসা। সবারই জানতে চাওয়া- কোথায় কমদামে মিলছে টিকেট ও থাকা-খাওয়া। একই প্রশ্নের জবাব দিতে দিতে হয়রান হয়ে গেছেন বিমানের এক কর্মচারী। তবুও তিনি খুশি বিমানের প্রতি মানুষের আগ্রহ দেখে। আজ শনিবার মেলার শেষদিনে এই ভিড় আরও বাড়বে বলেই জানিয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে গত দুদিনেই বিক্রি হয়েছে প্রত্যাশিত অনেক প্যাকেজ। দেশে-বিদেশে দু’ধরনেরই প্যাকেজ বিক্রি হচ্ছে দেদার। আয়োজক সংস্থা মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, দিন দিন বাড়ছে মেলার কদর। আগে বছরে এক-দুটা হতো, এখন অনেক হচ্ছে; তবুও প্যাকেজ বেচায় কোন কমতি নেই। তিনি জানান, পর্যটন শিল্পের প্রসারে ভ্রমণবিষয়ক পাক্ষিক দি বাংলাদেশ মনিটর ১৫তম বারের মতো এই মেলার আয়োজন করেছে। এতে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের ৪৮ প্রতিষ্ঠান পাঁচটি প্যাভিলিয়ন ও ৬০টি স্টলে তাদের পণ্য ও সেবা প্রদর্শন করছে। মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাতীয় আন্তর্জাতিক পর্যটন সংস্থা, বিমান সংস্থা, ট্রাভেল ও ট্যুর অপারেটর, হোটেল ও রিসোর্ট, পর্যটন স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান ও অনলাইন বুকিং পোর্টাল। খুলনা থেকে আসা নিহারিকা জানান, তার পরিকল্পনা ছিল বাংলা নববর্ষে পরিবার নিয়ে নেপাল ভ্রমণের। কিন্তুু এখন সেটা বাদ দিয়ে ভারত যাবার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সেই প্যাকেজের খোঁজেই মেলায় আসা। মেলায় ঢুকতেই তার সামনে হাত বাড়িয়ে দেয়া হয় একটি ট্যুর অপারেটরের প্যাকেজ। তিনি দেখতে পান এয়ার টিকেটে চলছে কমিশনের ছড়াছড়ি। এবারের মেলায় বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ড, বাংলাদেশ পর্যটন সংস্থা, নেপাল ট্যুরিজম বোর্ড, ট্যুরিজম অথরিটি অব থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ট্যুরিজম প্রমোশন ব্যুরোর মতো পাঁচটি জাতীয় পর্যটন সংস্থা অংশ নিয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশের চারটি এয়ারলাইন্স এবারের মেলায় অংশ নিয়েছে। মেলা আজ শেষ হচ্ছে। এ উপলক্ষে আজ সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় র‌্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হবে। র‌্যাফেল ড্র বিজয়ীদের জন্য রয়েছে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গন্তব্যের এয়ার টিকেট, ট্যুর প্যাকেজ, তারকা হোটেলে রাত্রিযাপন, লাঞ্চ ও ডিনার কুপন। কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, পর্যটন খাত বিকশিত হবার অন্যতম কারণ হচ্ছে এখন দেশে কর্পোরেট কালচার বাড়ছে। মানুষ মিডল ক্লাস থেকে আপার ক্লাসে জাম্প করছে। স্বভাবতই আহার আর নিদ্রার পর মানুষ ভ্রমণ করতে চায়। এ সুযোগটাই লুফে নিচ্ছে ট্যুর অপারেটররা। শুক্রবার মেলার দ্বিতীয় দিনেও অনেক ভিড় ছিল। তিনি জানান, এবার মেলায় দেশ বা দেশের বাইরে ভ্রমণের লোভনীয় অফার দিচ্ছে দেশের বিভিন্ন এয়ারলাইন্স। ইউএস-বাংলা, নভোএয়ার, রিজেন্ট এয়ারওয়েজ; প্রত্যেকের টিকেটেই রয়েছে বিশেষ ছাড়। কেউ আবার দিচ্ছে কিস্তিতে ভ্রমণের সুযোগ। এদিকে মেলার কয়েকটি স্টল ঘুরে দেখা যায়, সবচেয়ে আকর্ষণীয় প্যাকেজ দিচ্ছে নভোএয়ার। প্রতিষ্ঠানটির জনসংযোগ কর্মকর্তা নীলাদ্রি মহারতœ জানান, ৬ কিস্তিতে ঢাকা থেকে কক্সবাজারে আসা-যাওয়া ও হোটেলে থাকা বাবদ ১৭৭৬ টাকার প্যাকেজ বিক্রি হচ্ছে বেশ ভাল। একইভাবে ঢাকা থেকে কলকাতা আসা -যাওয়া ও থাকা-খাওয়া বাবদ প্রতিমাসে ২৮৮৮ টাকা হারে ৬ মাসের কিস্তিতে প্যাকেজ বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, পর্যটন মেলা উপলক্ষে এ অফার। দু’দিনে দর্শনার্থীর ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। তাছাড়া নির্দিষ্ট ১০টি ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে এই প্যাকেজ অফার গ্রহণ করার সুযোগ পাচ্ছেন ভ্রমণকারীরা। রিজেন্টের এক কর্মকতা জানান, এক্সাইটিং হলিডে প্যাকেজ নামে কয়েকটি আকর্ষণীয় অফার রয়েছে রিজেন্টে। এরমধ্যে ৫ দিন ৪ রাত ব্যাংকক-ফুকেটে হোটেলসহ এয়ার টিকেট মাত্র ৪১ হাজার ৫শ’ টাকা, আর ব্যাংকক-পাতায় একই অফার মিলবে ২৭ হাজার ৯শ’ টাকায়। তবে কমপক্ষে দু’জন হতে হবে। আর কুয়ালালামপুরে দুই রাত থাকা ও আসা-যাওয়ার এয়ার টিকেট মিলছে মাত্র ২৫ হাজার ৬শ’ টাকায়। কুয়ালালামপুর-সিঙ্গাপুর ৫ দিন ৪ রাত। এবারের মেলায় সুবিধা করতে পারছে না ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স। নেপাল ট্র্যাজেডির পর ভ্রমণপিপাসুরা এখন এই এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজে ওঠার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছেন। ভয়ে অনেকে এই স্টলের প্যাকেজ থেকে দূরে থাকছেন। যদিও অভ্যন্তরীণ ও বিদেশ ভ্রমণে এয়ার টিকেটে দিচ্ছে ১০ থেকে ২৫ শতাংশ ছাড়। ঢাকা-সিঙ্গাপুর-ঢাকা এয়ার টিকেটে ২৫ শতাংশ, কুয়ালালামপুরে ২০ শতাংশ, কলকাতায় ১০ শতাংশ, চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় গেলে ২০ শতাংশ এবং অভ্যন্তরীণ সব রুটের এয়ার টিকেটে ১০ শতাংশ ছাড়। মেলার সফলতা সম্পর্কে জানতে মনিটর সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম বলেন, আই এম মোর দ্যান হ্যাপি। এতটা আশা করিনি। এখন দেশে চলছে স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল হওয়ার আনন্দ উৎসব। এরই মাঝে মানুষ যেন এ মেলায় এসে সেটা আরও ভালভাবে সেলিব্রেট করতে চাইছেন ভ্রমণের মাধ্যমে।
×