ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ফিলিপিন্সে আইএস জঙ্গীরা পরাস্ত ॥ নগরী ধ্বংস

প্রকাশিত: ০৩:৪৪, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

ফিলিপিন্সে আইএস জঙ্গীরা পরাস্ত ॥ নগরী ধ্বংস

ফিলিপিন্সের মিন্দানাও দ্বীপের গোলযোগ উপদ্রুত মারাবিতে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) জঙ্গীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর লড়াই পাঁচ মাস ধরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞেরা পর গত অক্টোবরে শেষ হয়েছে। এ সময় ৮শ’রও বেশি জিহাদী ও ১৬৩ জন সৈন্যের পাশাপাশি কমপক্ষে ৪৭ জন সিভিলিয়ান প্রাণ হারায়। এখন সেখানে বিশেষ করে ব্যাপক ধ্বংসপ্রাপ্ত নগরীর পূর্বাঞ্চলে পুনর্গঠন কাজ শুরু হয়েছে। ফিলিপিন্সের ৬০ লাখের মতো মুসলমানের মধ্যে সিংহভাগের বাস মিন্দানাও দ্বীপে। দেশের ৯ কোটি ৭০ লাখ খ্রীস্টানের তরফ থেকে তারা নিজেদের বৈষম্যের শিকার বলে মনে করে। মিন্দানাওয়ের জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধর্মীয় জঙ্গী যেমন আছে, তেমনি আছে অশান্ত ক্লান, কমিউনিস্ট বিদ্রোহী, তস্কারের দল ও জলদস্যু। রাষ্ট্রের সঙ্গে এই জনগোষ্ঠীর অহিনকুল সম্পর্ক এবং এরা স্বায়ত্তশাসন চায়। মারাবি হচ্ছে মিন্দানাওয়ের সবচেয়ে গোলযোগপূর্ণ স্থান। ২০১৫ সালে মিন্দানাওয়ের মুসলিম বিদ্রোহীদের অন্যতম নেতা আবু সায়াফ আইএসের প্রতি আনুগত্য ঘোষণা করে। এ থেকে যে কত বড় বিপদের উৎপত্তি হবে কেউ তখন আঁচ করতে পারেনি। মে মাসে তার দলের এক নেতাকে আটক করা হলে মারাবিতে সহিংসতা শুরু হয়ে যায়। আরেক হিংসাশ্রয়ী সংগঠন মাউত গ্রুপ যা একদা স্রেফ স্থানীয় মাফিয়া চক্র হিসেবে গণ্য হতো তারাও আইএসের সঙ্গে জোট বার্মার পর এই সহিংসতায় অংশ নেয়। নগরী তাদের দখলে চলে যায়। সহকারী বাহিনীর এই নগরী পুনর্দখলের চেষ্টা বার বার বাধাগ্রস্ত হতে থাকে। শেষে তারা পশ্চাৎ দিক থেকে অগ্রসর হয়। কয়েক মাস ধরে লড়াইয়ের পর অবশেষে অক্টোবরে নগরী বিদ্রোহীদের দখলমুক্ত হয়। তার আগে জুলাই মাসে সেখানে জরুরী অবস্থা জারি করা হয়েছিল। নগরী থেকে কয়েক মাইল দূরে রাস্তার ধারে লাইন করে হলদে রঙের তাঁবুর ছোট ছোট গুচ্ছ চোখে পড়বে। লড়াইয়ে মারাবির প্রায় ২ লাখ লোক বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের প্রায় অর্ধেক নিজ নিজ ভিটেমাটিতে ফিরে গেলেও বাকিরা আশ্রয় নিয়েছে ওই তাঁবুর শিরিবে। সেখানে স্যানিটেশনের মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়ায় নবনির্মিত অস্থায়ী শেডের মতো আশ্রয় কেন্দ্রে তাদের স্থানান্তর করা হয়েছে। এখানকার লোকেরা মুষ্টিভিক্ষার ওপর নির্ভর করে আছে। জীবন তাদের দুর্বিষহ। আর্থিক ও আইনগত জটিলতার কারণে তাদের ঘরে ফেরা বিলম্বিত হচ্ছে। বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও অবকাঠামো পুনর্নির্মাণের জন্য প্রায় ৯৬ কোটি ডলার লাগবে বলে মেয়র মজিউল ইসলাম গানদামরা মনে করেন। নগরীর অনেক জায়গায় এখনও পানি নেই, বিদ্যুত নেই। মেয়র বিলাপ করে বলেন এই যুদ্ধে অর্থনীতির দারুণ ক্ষতি হয়ে গেছে। বলাবাহুল্য এলাকাটি আগে থেকেই অনুন্নত। দারিদ্র্যের কারণেই তরুণরা দলে দলে জিহাদী সংগঠনে যোগ দিয়েছিল। কোন কোন রিক্রুট যোগ দেয়ার জন্য ৩ লাখ পেসো এবং অনুরূপ পরিমাণ বেতন পেত। রাজনীতিকদের মধ্যে যারা বলেন যে বিধ্বস্ত এই নগরীকে আগের চেয়ে আরও ভালভাবে নির্মাণ করা সম্ভব তাদের এমন বক্তব্যে অনেকেই সন্দেহ পোষণ করেন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এমন নৈরাশ্যবাদ বোধগম্য। এক সেনা কর্মকর্তার ভাষায়, শুধু অবিস্ফোরিত বোমা ও লুকিয়ে রাখা অস্ত্রশস্ত্র অপসারণ করতে আগস্ট মাস পর্যন্ত সময় লেগে যাবে। এক বিশেষজ্ঞ মনে করেন নগরীর বিধ্বস্ত পূর্বাঞ্চলকে পুনর্গঠিত ও পুনর্নির্মিত করার চেষ্টা একেবারেই বাদ দিয়ে যদি তার বদলে অন্য কোথাও বাড়িঘর ও অবকাঠামো গড়ে তোলা হয় তাহলে খরচ কম পড়বে। কিন্তু দুতার্তে সরকার পূর্বাঞ্চলেই পুনর্নির্মাণ কাজ চালাতে বদ্ধপরিকর। বিধ্বস্ত টাউন হল আজ যেখানে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে সামরিক ছাউনি গড়ে তোলা হবে। দুতার্তে গত ৩০ জানুয়ারি নিজে এসে ছাউনির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে গেছেন। এদিকে মুসলমান নেতারা সন্ত্রাসবাদের বিস্তার নিরুৎসাহিত করার কৌশল উদ্ভাবনে সরকারের বিভিন্ন শাখার সঙ্গে কাজ করছেন। স্থানীয় মাদ্রাসাগুলোর পাঠ্যক্রম খতিয়ে দেখা হচ্ছে। প্রায় ৩ হাজার নিরাশ্রয় অধিবাসী সরকার পরিচালিত ট্রেনিং কর্মসূচীতে অংশ নিয়ে কেক বানাবো থেকে শুরু করে ওয়েল্ডিং পর্যন্ত অনেক কিছুই শিখছে যাতে করে তারা জীবন মানের উন্নতি ঘটাতে পারে এবং জিহাদীদের দেয়া টাকার লোভে প্রলুব্ধ না হয়। এদিকে প্রেসিডেন্ট দুতার্তে মরো ইসলামিক লিবারেশন ফ্রন্টের (এমআইএলএফ) সঙ্গে এর আগে সরকারের স্বাক্ষরিত চুক্তির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে মুসলিম এলাকায় অধিকতর স্বায়ত্তশাসন প্রদানের লক্ষ্যে সংবিধান সংশোধনীর উদ্যোগ নিয়েছেন। এই ফ্রন্ট ১৯৮০’র দশক থেকে মিন্দানাওয়ের স্বাধীনতার জন্য লড়াই চালিয়ে এসেছে। ফ্রন্টকে খুশি রাখাটা সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে এমআইএলএফের সঙ্গে নতুন করে আবার লড়াই শুরু হলে তা অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক হবে। বলাবাহুল্য ফ্রন্টের রয়েছে বেশ কয়েক হাজার যোদ্ধা। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×