ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে সিরিজ শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৩১ জানুয়ারি ২০১৮

চট্টগ্রাম টেস্ট দিয়ে সিরিজ শুরু আজ

মিথুন আশরাফ ॥ এবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে নামার পালা বাংলাদেশের। আজই চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম টেস্ট দিয়ে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ শুরু হবে। সকাল সাড়ে নয়টায় শুরু হবে টেস্ট। এ পর্যন্ত দুই দলের মধ্যকার ১৮টি টেস্ট অনুষ্ঠিত হয়। একটি টেস্টে জিতে বাংলাদেশ। দুটি টেস্টে ড্র করে। ১৫ টেস্টেই হারে। ২০০৯ সাল পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টে নাকানিচুবানি খায় বাংলাদেশ। ২০০১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত টানা ১২ টেস্টে হারে। প্রতিবারই বড় ব্যবধানে হার হয় বাংলাদেশের। ৭টি টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হারে। এরপর ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট খেলা থেকেই বদলে যায় দৃশ্যপট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্টেও দাপট দেখানো শুরু করে বাংলাদেশ। ২০০৯ সালের পর ৬ টেস্ট খেলে তিনটিতে হারে। একটিতে জিতে। দুটি টেস্টে ড্র করে। সর্বশেষ গত বছর শ্রীলঙ্কার মাটিতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে আবার ড্র’ও করে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো কোন টেস্ট সিরিজে ড্র করে বাংলাদেশ। দুই দলের মধ্যকার সর্বশেষ টেস্টে আবার জিতে বাংলাদেশ। সেটি বাংলাদেশের টেস্ট ইতিহাসের শততম টেস্ট ম্যাচ ছিল। সেই ম্যাচটিতে জিতে শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর ক্ষমতাও দেখায় বাংলাদেশ। এই একটি ম্যাচেই শ্রীলঙ্কাকে হারানোর যোগ্যতা দেখায় বাংলাদেশ। আজ যে টেস্টটি শুরু হবে সেটি দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত হবে। স্বাভাবিকভাবেই দেশের মাটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলা যে কোন দলের জন্যই এখন কঠিন। কারণ দেশের মাটিতে বাংলাদেশ অনেক শক্তিশালী দল। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী দলকে টেস্টে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এবার শ্রীলঙ্কাকেও হারানোর পালা। কিন্তু এমন ম্যাচে আবার দুর্বল হয়েই নামছে বাংলাদেশ। দলে যে নেই বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচে ফিল্ডিং করতে গিয়ে আঙ্গুলে আঘাত পেয়ে মাঠ ছাড়েন। এরপর প্রথম টেস্টের দল থেকে সাকিবকে সরিয়ে নেয়া হয়। তিনিই টেস্টের নতুন অধিনায়ক ছিলেন। কিন্তু নেতৃত্ব আর দিতে পারলেন না। সাকিব দলের সেরা অলরাউন্ডার। যে টেস্টগুলোতে বাংলাদেশ জিতেছে তাতে সাকিবের অবদান ছিল অসাধারণ। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে সর্বশেষ দেশের মাটিতে টেস্ট জিতেছে বাংলাদেশ, সেই টেস্টে তো সাকিব ব্যাট-বল হাতে অসাধারণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। বাংলাদেশকে জিতিয়েছেন। কিন্তু এবার সাকিবকে ছাড়াই দেশের মাটিতে টেস্ট খেলতে হবে বাংলাদেশকে। এমন এক দলের বিপক্ষে টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ যে দলের কোচ আবার বাংলাদেশের সাবেক কোচ চন্দিকা হাতুরাসিংহে। হাতুরাসিংহে বাংলাদেশের স্টেডিয়ামগুলোর উইকেট, ক্রিকেটারদের শক্তি-দুর্বলতা ভাল করেই জানেন। তা তো প্রমাণও করেছেন। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালসহ টানা দুই ম্যাচে বাংলাদেশকে হারিয়েছে তার দল শ্রীলঙ্কা। হাতুরাসিংহের যে গেম প্ল্যান ছিল তা পুরোপুরি কাজে লেগেছে। যেমন মাদুশঙ্কাকে প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতে খেলান। মাদুশঙ্কা হ্যাটট্রিক করে দেখান। হাতুরাসিংহে নিশ্চয়ই এবারও বিশেষ পরিকল্পনা করবেন। সাকিব না থাকাতে শ্রীলঙ্কা এমনিতেই এগিয়ে থাকছে। ওয়ানডেতে যেমনই হোক টেস্টে শ্রীলঙ্কা অনেক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ। সেটি বাংলাদেশ এর আগেও বুঝেছে। আর সাকিব না থাকা মানে তো বাংলাদেশ দল আগেই পিছিয়ে পড়ছে। তবে বাংলাদেশ দলে চমক রয়েছে। নাঈম হাসান রয়েছেন। সঙ্গে অভিজ্ঞ আব্দুর রাজ্জাকও আছেন। নাঈম হাসানকে নিয়ে বিশেষ গবেষণা করার সুযোগ পাবেন না শ্রীলঙ্কানরা। তবে হাতুরাসিংহে এর আগেও নাঈমকে দেখেছেন। গত বছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্টের আগে প্রস্তুতি ম্যাচে নাইম খেলেন। হাতুরাসিংহে তাকে দেখে আরও নিজেকে প্রস্তুত করার কথা বলেন। সেই নাঈমই এবার হাতুরাসিংহের দলের বিপক্ষে খেলার জন্য প্রস্তুত। সেই সঙ্গে রাজ্জাক যদি অভিজ্ঞতার মূল্য দেখিয়ে দিতে পারেন তাহলে বাংলাদেশের টেস্টে ভাল করার সম্ভাবনা অনেক বেশি। টেস্টে ব্যাটিংটার সঙ্গে যে স্পিনারদের দাপট থাকবে তাতো বোঝাই যায়। বাংলাদেশ দল স্পিনে শক্তিশালী। সেই স্পিন যদি কাজে লাগে তাহলে বিপদে পড়বে শ্রীলঙ্কা। এখন শ্রীলঙ্কাকে বিপদে ফেলা গেলেই হলো। অবশ্য বাংলাদেশকেও অনেক সাবধান হয়ে খেলতে হবে। বিশেষ করে ব্যাটসম্যানদের সতর্ক থাকতে হবে। কারণ শ্রীলঙ্কা দলেও আছেন রঙ্গনা হেরাথের মতো অভিজ্ঞ স্পিনার। স্পিনার লাকসান সান্দাকান ও ধনঞ্জয়াও রয়েছেন। এ স্পিনারদের দিয়ে নিশ্চয়ই শ্রীলঙ্কাও চাইবে ভাল কিছু করে দেখাতে। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের খুবই সতর্ক থাকতে হবে। যদি ব্যাটসম্যানরা ত্রিদেশীয় সিরিজের শেষ দুই ওয়ানডের মতো খেলেন, তাহলে হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হবে। যদি তামিম, ইমরুল, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহরা শুরুতেই হাল ধরতে না পারেন তাহলে বিপদ ঘনিয়ে আসতে পারে টেস্টেও। ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনালে হেরে এমনিতেই ক্রিকেটারদের মানসিকতায় আঘাত এসেছে। আত্মবিশ্বাসেও ঘাটতি দেখা দিতে পারে। আবার নেই সাকিব। তাতে দলের অবস্থা এমনিতেই বেহাল। এখন এই বেহাল দশা বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা কাটিয়ে উঠতে পারলেই হয়। ৮ ফেব্রুয়ারি মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় টেস্ট শুরুর আগে আজ দুই দলের মধ্যকার চট্টগ্রামে প্রথম টেস্ট দিয়ে সিরিজ শুরু হচ্ছে। এই ম্যাচেই সেই অবস্থা কাটিয়ে ওঠার প্রমাণ দেয়ার সময় এসে পড়েছে।
×