ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পেরেক ঠোকার শব্দ, করাতের আওয়াজ সবই মধুর এখন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ২৫ জানুয়ারি ২০১৮

পেরেক ঠোকার শব্দ, করাতের আওয়াজ সবই মধুর এখন

মোরসালিন মিজান ॥ বইমেলার বিপুল-বিশাল আয়োজনটি শুরু হচ্ছে। হাতে আর মাত্র ক’টা দিন। এর পরই আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি। ভাষার মাসের প্রথম দিন উদ্বোধন করা হবে অমর একুশে গ্রন্থমেলার। মাসব্যাপী আয়োজন। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের অভূতপূর্ব মিলনমেলা। কাজও অনেক। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। বাঙালীর ভাষা আন্দোলনের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতি ধারণ করে আছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। মূলত এ কারণেই অন্য অনেক মেলা থেকে এটি আলাদা। স্বতন্ত্র আবেদন নিয়ে সামনে আসে। বিগত দিনের ধারাবাহিকতায় ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হচ্ছে এবারের মেলা। মূল মেলা অনুষ্ঠিত হবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। বিস্তৃত খোলা চত্বরে স্টল প্যাভিলিয়ন সাজাবেন প্রকাশকরা। নিজেদের প্রকাশিত বইয়ের নতুন- পুরনো সংস্করণ পাওয়া যাবে এখানে। একাডেমি অংশেও থাকবে গুরুত্বপূর্ণ নানা আয়োজন। বর্ধমান হাউসের পাশে স্থাপিত মঞ্চে মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইমঞ্চে দেশী- বিদেশী অতিথিরা উপস্থিত থাকবেন। পরবর্তী দিনগুলোতে এটি ব্যবহৃত হবে মেলামঞ্চ হিসেবে। প্রতিদিন এখানে আয়োজন করা হবে সেমিনার ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দুই অংশেই ভিড় জমবে। মুখরিত হয়ে উঠবে চারদিক। আয়োজন সফল করতে অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছিল প্রস্তুতি। কয়েকটি ধাপে এগিয়ে চলেছে কাজ। জানা যায়, এবারের মেলায় অংশ নিতে আবেদনপত্র জমা দেয় প্রায় ৬০০ প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান। মেলা পরিচালনা কমিটির যাচাই-বাছাই শেষে ৮ জানুয়ারি স্টল বরাদ্দের তালিকা প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, সব শর্ত পূরণ না করতে পারায় অনেক আবেদন বাদপড়েছে। এর পরও মেলায় অংশগ্রহণকারী প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা আগের তুলনায় বেড়েছে। একই কারণে বেড়েছে স্টল, ইউনিট ও প্যাভিলিয়নের সংখ্যা। পরিসর বাড়ানোর পাশাপাশি, এবারই প্রথমবারের মতো লেখক ও প্রকাশকদের মেলা প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য পৃথক গেটের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ক্রমে দৃশ্যমান হচ্ছে সুযোগ-সুবিধাও। বুধবার বাংলা একাডেমিতে গিয়ে দেখা যায়, স্টল ও প্যাভিলিয়নের মূল অবকাঠামো নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। খোলা চত্বরের পুরোটাজুড়েই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে নির্মাণ সামগ্রী। এখানে ওখানে লম্বা বাঁশ শুইয়ের রাখা হয়েছে। কাঠের টুকরো প্লাইউড ইত্যাদি পায়ে মাড়িয়ে এগিয়ে গেলে বর্ধমান হাউস। হাউসের পাশেই চলছে মঞ্চ নির্মাণের কাজ। বাঁশের অবকাঠামো নির্মাণ প্রায় শেষ। এখন এটিকে মজবুত করার কাজ হচ্ছে। অদূরে নজরুল মঞ্চ। সেখান থেকে পেরেকের ঠুকঠাক আর করাতের কর্কশ শব্দ কানে আসছিল। কথা বলা দায়। এর পরও বিরক্তি নেই কারও। মনে হচ্ছিল মধুর কোন সঙ্গীত! নজরুল মঞ্চের সামনে করাত চালাতে চালাতেই এক নির্মাণ শ্রমিক বললেন, ‘কত জাগাত কাজ করি। এইখানে ধরেন যে ভাললাগে। বড় বড় মানুষ আইতাছে। মিডিয়া আইতাসে। অফিসও (বাংলা একাডেমি) খোলা। কিন্তু আমাগো সাউন্ডে কেউর সমস্যা নাই।’ আরেক শ্রমিক জানান, বাইরের কাজ ফেলে এই কাজে এসেছেন তিনি। কয়েকদিন ধরে কাজ করছেন । তবে পুরো কাজ শেষ হতে আরও কয়েকদিন লাগবে বলে জানান তিনি। বড়সড় প্রস্তুতি চলছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেও। এখানে অনেক জায়গা। কোথাও উঁচু। কোথাও নিচু। গর্তও আছে। সব মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। বিছানো হচ্ছে ইট। একইসঙ্গে চলছে স্টল ও প্যাাভিলিয়ন নির্মাণের কাজ। এখানেও নির্মাণসামগ্রী ছড়ানো-ছিটানো। পেরেক ঠোকার শব্দ কানে আসছিল। সব দেখে মনে হয়, রাত পোহালেই মেলা! এখানে কাজ করছিলেন আমির নামের এক শ্রমিক। কথা প্রসঙ্গে তিনি বললেন, ‘প্রত্যেকদিনই লম্বা সময় ধইরা কাজ করতাছি। ফাঁকি দেয়ার সুযোগ নাই। সময়ের ভিতরে কাজ শেষ করতে হইবো। রেস্টও নিতে পারতেছি না।’ মেলা ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা কাজ করছে প্রকাশকদের মাঝেও। এ প্রসঙ্গে আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গনি বলেন, আমরা আমাদের নতুন বই পাঠকের হাতে তুলে দেয়ার জন্য প্রস্তুত। কিছু বই ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। মেলা চলাকালীন আসবে বাকি বই। নির্বাচিত নতুন বই যেমন মেলায় পাওয়া যাবে, থাকবে পুরনো অমূল্য বইও। মেলার আয়োজন নিয়ে তিনি বলেন, কতটা ভাল বা মন্দ এখনই বলা যাবে না। আমরা পর্যবেক্ষই করছি। মেলার সার্বিক প্রস্তুতি নিয়ে কথা হয় আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব ও বাংলা একাডেমির পরিচালক ড. জালাল আহমেদের সঙ্গে। জনকণ্ঠকে তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তুতি চলছে অনেক আগে থেকেই। আর এখন তো দিন-রাত একাডেমিতে পড়ে থাকতে হচ্ছে। আমরা বইয়ের উৎসব ও একুশের ভাবগাম্ভীর্য দুটোই ধরে রাখতে চাই। পাঠকের বই দেখার সুবিধা, ঘুরে বেড়ানো, বিশ্রাম ইত্যাদি দিক বিবেচনায় রাখা হচ্ছে। নিরাপত্তা প্রশ্নে তিনি বলেন, মেলা প্রাঙ্গণ থেকে টিএসসি ও শামসুন্নাহার হল হয়ে শাহবাগ মোড় এবং অন্যদিকে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার আওতায় থাকবে। বাংলা একাডেমির অভ্যন্তরে ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আটটি আর্চওয়ে বসানো হবে। এবারও মেলা চলবে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত।
×